অগাস্টের ১৬ তারিখে, বুধবার এএফসি কাপে মাছিন্দ্রা এফসির বিরুদ্ধে নামছে মোহনবাগান। সেই ম্যাচের প্রস্তুতি ম্যাচ হিসাবেই ডার্বিকে দেখছেন কোচ হুয়ান ফেরান্দো। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে মোহনবাগান কার্যত নিজেদের খোলনলচে বদলে ফেলেছে। কোটি কোটি টাকা ট্রান্সফার সিজনে ব্যয় করেছে সবুজ মেরুন শিবির।
লক্ষ্য প্ৰথম থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রথমত, আইএসএল খেতাব ধরে রাখা। দ্বিতীয়ত, এএফসি কাপে সেরা পারফরম্যান্স করা। সেই কারণেই তিরি, স্লাভকো দামজানোভিচ, কার্ল ম্যাকহিউ, ফ্রেডরিকো গ্যালেগো, পুইতিয়া, প্রীতম কোটালদের মত হেভিওয়েট তারকাদের ছেড়ে দিয়েছে বাগান। কোচ ফেরান্দো বিদেশি কোটায় হেক্টর ইউৎসে, আর্মান্দো সাদিকু, জেসন কামিন্সদের মত বিদেশি নক্ষত্রদের যেমন সই করিয়েছেন, তেমন দেশীয় স্তরে আনোয়ার আলি, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আব্দুল সাহালদের নিয়ে টুর্নামেন্টের অতিহাসে সেরা দল গড়েছেন। টানা ফুটবল মরশুমে যাতে চোট আঘাত কোচের প্ল্যানিংয়ে বাধা না হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেই জন্যই স্কোয়াডের গভীরতা এবার বাকি দলগুলোর কাছে ঈর্ষার বিষয়।
ডুরান্ড তাই স্কোয়াডের ফুটবলারদের ম্যাচ ফিটনেস দেখে নেওয়ার মঞ্চ। সেই সঙ্গে তরুণদের প্রমাণের মঞ্চও বটে। প্ৰথমে ঠিক ছিল বাস্তব রায়কে কোচের ডাগ আউটে রেখেই ডুরান্ড অভিযানে নামবে বাগান। তবে প্ৰথম ম্যাচের পরেই মোহনবাগানের কোচের সিটে পদার্পন ঘটেছে হুয়ান ফেরান্দোর।
টুর্নামেন্টের প্ৰথম ম্যাচে বাংলাদেশ আর্মিকে তরুণ স্কোয়াড নামিয়েও পাঁচ গোলের মালা পরিয়েছিল বাগান। লিস্টন, মনবীর বাদে দল সাজানো হয়েছিল একদম রাজ বাসফোরে, সুমিত রাঠি, আমান, তাইসন, অভিষেক, হামতে, সুহেলদের মত তরুণদের নিয়ে। কলকাতা লিগে খেলা বিদেশি বিহীন তরুণ সেই ব্রিগেডই বাংলাদেশের দলকে নিয়ে ছেলেখেলা করেছিল।
দ্বিতীয় ম্যাচে পাঞ্জাবের বিপক্ষে অবশ্য অনেকটাই শক্তিশালী দল নামিয়েছিলেন কোচ ফেরান্দো। মনবীর, লিস্টন, অভিষেককারী আনোয়ার আলি, শুভাশিস বোসদের মত তারকাদের সঙ্গেই স্প্যানিশ কোচ বিদেশির কোটায় নামিয়ে দিয়েছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস, ব্রেন্ডন হ্যামিল, হুগো বুমোসদের। শক্তিশালী স্কোয়াড পাঞ্জাবকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দেয়।
পাঞ্জাব ম্যাচের একাদশ থেকেই স্পষ্ট ডুরান্ড ডার্বিকে এএফসি কাপে নামার প্রস্তুতি ম্যাচ হিসাবেই ভাবছেন স্প্যানিশ কোচ। নিজেদের সেরা একাদশ খেলানোর পথে হাঁটছেন বাগানের স্প্যানিশ কোচ। পাঞ্জাব এফসির বিপক্ষে অভিষেকেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন আনোয়ার আলি। বল ডিস্ট্রিবিউশন থেকে নিখুঁত রক্ষণ- ঠান্ডা মাথার আনোয়ার ব্রেন্ডন হ্যামিলের সঙ্গে ডার্বিতেও জুটি বাঁধছেন ডিপ ডিফেন্সে। আর পাঞ্জাব ম্যাচে মাঝমাঠে ফুল ফোটানো হুগো বুমোসকে ডার্বিতেও ভাবছেন কোচ ফেরান্দো। দুরন্ত গোল-ও করেছিলেন ফেঞ্চ মরোক্কান তারকা।
আপফ্রন্টে সেরা চমক খতিয়ে শনিবাসরীয় ডার্বিতে ভরা স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপে খেলে আসা জেসন কামিন্সের অভিষেক ঘটিয়ে দিতে পারেন মেরিনার্স বস। কামিন্স বেশ কয়েক সপ্তাহ কলকাতায় এসে অনুশীলন শুরু করেছেন। তবে মাঠে তাঁকে এখনও দেখা যায়নি। দিমি পেত্রাতোসের সঙ্গে জুটি বেঁধে কামিন্স স্বপ্নের অভিষেক ঘটাতে পারেন ডার্বিতে। ডুরান্ডের প্রাথমিক স্কোয়াডে অজি বিশ্বকাপার ছিলেন না। তবে ম্যাচের ৪৮ ঘন্টা আগে কামিন্সের সঙ্গেই আশিক কুরুনিয়ান, সাদিকু, সাহাল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপাদের একসঙ্গে স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্ত করার পথে হেঁটেছিল বাগান।
দুই উইং ব্যাক হিসাবে যথারীতি ডার্বিতে দেখা যাবে আশিস রাই এবং শুভাশিস বোসকে। ডিফেন্সিভ মিডিও হিসাবে আগের ম্যাচের মতই গ্লেন মার্টিন্সকে নামাবেন কোচ।
সবমিলিয়ে ডার্বিতে কোচ ফেরান্দোর লক্ষ্য দুটো। গত চার বছরের ডার্বি জয়ের ক্লিনশিট বজায় রাখা। দ্বিতীয়ত, নেপালের মাছিন্দ্রা এফসির বিপক্ষে নামার আগে দলের তারকা ফুটবলারদের ম্যাচ ফিটনেস পরখ করে নেওয়া।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট সম্ভাব্য প্রথম একাদশ:
বিশাল কাইথ, ব্রেন্ডন হ্যামিল, আনোয়ার আলি, আশিস রাই, শুভাশিস বোস (ক্যাপ্টেন), গ্লেন মার্টিন্স, লিস্টন কোলাসো, হুগো বুমোস, সাহাল আব্দুল সামাদ, দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিং/জেসন কামিন্স