Advertisment

কামিন্স নামতেই গোল খেল মোহনবাগান! নন্দকুমারের স্বপ্নের গোলে ৪ বছর পর ডার্বি ইস্টবেঙ্গলের

Kolkata Derby match report East Bengal vs Mohun Bagan: অভিষেকেই ডার্বি হারের সাক্ষী থাকলেন জেসন কামিন্স

author-image
Subhasish Hazra
New Update
NULL

ইস্টবেঙ্গল: ১ (নন্দকুমার)
মোহনবাগান: ০

Advertisment

East Bengal vs Mohun Bagan match report: ৫৭ মিনিট এবং ৬০ মিনিট। পরস্পরস্পর্ধী এরকম মুহূর্ত ভারতীয় ফুটবলে কম-ই এসেছে। যা দেখল শনিবাসরীয় যুবভারতীর ডার্বি। ৫৭ মিনিটে নামলেন সেই জেসন কামিন্স। যাঁর ট্রান্সফার বিশ্বমঞ্চের লাইমলাইটে এনে দিয়েছিল ভারতীয় ফুটবলে। বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্কটিশ-অজি বিশ্বকাপারের পা পড়ল। তাও ডার্বির মেগা মঞ্চে। জ্বলে উঠল গ্যালারি। মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট ঝলসে দিল নক্ষত্রখচিত স্টেডিয়ামের পোডিয়াম।

তবে সেই ফ্ল্যাশলাইটের ঝলক মুছে যাওয়ার আগেই বাগান সমর্থকরা মুখ ঢাকলেন। কামিন্স নামার ঠিক ৩ মিনিট পরেই বাগান গ্যালারিতে শ্মশানের নিস্তব্ধতা এনে হাজির করলেন নন্দকুমার।

ভারতীয় ফুটবলে উইঙ্গার অধ্যুষিত জমানায় নন্দকুমার অনেকটাই কম আলোচিত। আশিক কুরুনিয়ান, লিস্টন কোলাসো, বিপিন সিং, নাওরেম মহেশ, বিকাশ নার্জারিদের নিয়ে যে পরিমাণ আলোচনা হয়, তা ছিঁটে ফোঁটাও হয়না নন্দকুমার জমানায়। বরাবর ব্রাত্য থাকার সেই ট্র্যাডিশনে হয়ত ফুলস্টপ পড়ে গেল শনিবাসরীয় যুগান্তকারী ডার্বিতে। বোরহার থেকে বল রিসিভ করে যেভাবে নন্দকুমার চলতি ডুরান্ডের অন্যতম দর্শনীয় গোল করে গেলেন। তাও আবার ট্রান্সফার মার্কেটে ঝড় তোলা অনিরুদ্ধ থাপাকে মাটি ধরিয়ে, তাতে সেই আলোচনা এবার নন্দকুমারের প্রাপ্য।

টানা চার বছর। লাল-হলুদের বুভুক্ষু জনতা ডার্বি জয়ের স্বাদ পায়নি। কোলাদো, জবি জাস্টিনের গোলে শেষবার যুব ভারতী লাল-হলুদ আবির ভেসেছিল। আইলিগে। আইএসএল জমানায় এবারই প্ৰথম।

ম্যাচের আগেই লাল হলুদ বস কার্লেস কুয়াদ্রাত স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ডার্বি জিততেই মাঠে নামবে ইস্টবেঙ্গল। সে যে কেবল কথার কথা ছিল না। স্প্যানিয়ার্ড বুঝিয়ে দিলেন। এবার আইএসএল-এ খাতায় কলমে সর্বশ্রেষ্ঠ স্কোয়াড গড়েছে মোহনবাগান। জয়ী স্কোয়াডকে কার্যত দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে ফেলেছেন হুয়ান ফেরান্দো। প্রীতম কোটাল, পুইতিয়া তো বটেই কার্ল ম্যাকহিউ, ফ্রেডরিকো গ্যালাগো, তিরি, স্লাভকোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আব্দুল সামাদ, আনোয়ার আলিদের মত জাতীয় দলের স্কোয়াডই তুলে আনা হয়েছে সবুজ মেরুন শিবিরে। অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গলও যথেষ্ট শক্তিশালী দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। নন্দকুমার, ভান্সপাল, খাবরা, মন্দার রাও দেশাই, মহেশদের নিয়ে গড়া দলও হেভিওয়েট যেকোনও দলের পাঙ্গা নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

ঘটনা হল, এত শক্তিশালী স্কোয়াডের মালিক হয়েও ফার্নান্দোর ফ্লুইড পাসিং ফুটবল বন্ধ করে দিলেন কুয়াদ্রাত। স্রেফ দুটো প্ল্যানিংয়ে। লিস্টন কোলাসোকে সেভাবে নড়তে পারলেন না মাঝমাঠ থেকে সেভাবে বলের সাপ্লাই না পেয়ে। কোলাসোকে বোতলবন্দি করলেন খাবরা। জেভিয়ের সিভেরিও, নন্দকুমার, মহেশরা টানা মোহনবাগান রক্ষণের উপর চাপ বাড়িয়ে গেলেন। শুভাশিস, হ্যামিল, আনোয়াররা টানা সেই চাপ ধরে রাখতে পারলেন না।

সৌভিক চক্রবর্তীকে ধংসাত্মক ভূমিকায় ব্যবহার করেছিলেন। সেই ভূমিকায় বঙ্গসন্তান দারুণভাগে সফল।

কামিন্সকে বাইরে রেখে আর্মান্দো সাদিকু, মনবীর এবং লিস্টনকে আক্রমণে রেখে দল সাজিয়েছিলেন বাগান কোচ। মাঝমাঠে ক্রিয়েটিভ ভূমিকায় যথারীতি রেখেছিলেন বুমোসকে। আর গ্লেন মার্টিন্সকে পিভট হিসাবে রেখে অনিরুদ্ধর ওপর দায়িত্ব ছিল বল ডিস্ট্রিবিউশন এবং ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ ঘেঁটে দেওয়ার।

ম্যাচের শুরুতে অবশ্য সাদিকু বেশ চনমনে ফুটবল উপহার দিচ্ছিলেন। ভয় ধরাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। তবে হেরেরা, ক্রেসপোরা ইস্টবেঙ্গলকে ম্যাচে ফেরায় মাঝমাঠের দখল নিয়ে।

ম্যাচের প্ৰথম পর্ব বাদ দিলে ডার্বি বেশিক্ষণ ধরেই ঘুম পাড়িয়ে দিল। কুশলী কুয়াদ্রাত ম্যাচ বেঁধে রাখতে চেয়েছিলেন মিডফিল্ডেই। জানতেন, লিস্টন, মনবীরদের কাছে বলের সাপ্লাই কমে গেলেই ভুলের বহর বাড়বে বাগানে। ঠিক সেটাই হল।

৫৭ মিনিটে সাদিকু, বুমোসকে তুলে একসঙ্গে নামিয়ে দিয়েছিলেন দিমি পেত্রাতোস এবং কামিন্সকে। তারপরেই কাউন্টার এটাকে অনিরুদ্ধ থাপাকে মাটি ধরিয়ে গোল নন্দকুমারের।

এই গোল করার পরেই নিজেদের অর্ধে লোক বাড়িয়ে শাট ডাউন করে দিলেন কুয়াদ্রাত। মরিয়া হয়ে শেষ লগ্নে আশিক কুরুনিয়ান, সাহালদের নামালেও শেষরক্ষা হয়নি বাগানের। ম্যাচের শেষ দশ মিনিট যুবভারতী দেখল মুষলধারে বৃষ্টি। চার বছরের লাল-হলুদ যন্ত্রণা যেন মুছে দিল শনিবাসরীয় ডার্বি। বৃষ্টি যেন সেটাই বুঝিয়ে দিল।

ইস্টবেঙ্গল প্ৰথম একাদশ:
প্রভসুখন গিল, নুঙ্গা, খাবরা, নন্দকুমার, মন্দার রাও দেশাই, সাউল ক্রেসপো, বোরহা হেরেরা, সৌভিক চক্রবর্তী, নাওরেম মহেশ, জর্ডন এলসে, জেভিয়ের সিভেরিও

মোহনবাগান প্রথম একাদশ:
বিশাল কাইথ, ব্রেন্ডন হ্যামিল, আনোয়ার আলি, শুভাশিস বোস, আশিস রাই, গ্লেন মার্টিন্স, হুগো বুমোস, অনিরুদ্ধ থাপা, আর্মান্দো সাদিকু, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো

Eastbengal Mohunbagan East Bengal Kolkata Football Indian Football Mohun Bagan East Bangal atk-mohun-bagan East Bengal Club Mohun Bagan Super Giants
Advertisment