রোদ-মেঘের লুকোচুরি, ওয়ার্ম-আপ, আর হালকা প্র্যাকটিস। শনিবার সকালে মোহনবাগান তাঁবুর চেহারাটা এমনই ছিল। এদিন ডিকা-হেনরিদের সমর্থনে হাতে গোনা কয়েকজন সমর্থকেরই দেখা মিলল বাগান তাঁবুতে। ডার্বির শেষ প্র্যাকটিসের আবহাওয়ার সঙ্গে ফাঁকা গ্যালারির ছবিটা একেবারেই বেমানান। এদিন সমর্থকরা শুধুমাত্র ক্লাবকে ভালবেসেই এসেছেন এ কথা বললে কোথাও ছবিটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তাঁদের মিলিত আওয়াজের সারমর্ম ছিল একটাই, "টিকিট চাই, টিকিট দেওয়া হোক"। কেউ বললেন, "পুজোর কেনাকাটা চুলোয় যাক, ডার্বির টিকিট কিনতেই হবে।" কেউ জানালেন, "কখনও এরকম হয়নি যে ডার্বির টিকিট পাইনি।" কারোর ক্ষোভ আবার সরাসরি আইএফএ-র ওপরেই।
এদিন বর্তমান ও প্রাক্তন কর্তাদের দেখা মিলল ক্লাবে। ছিলেন বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র, ফুটবল সচিব স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবল কমিটির সদস্য শিশির ঘোষ। দেবাশিস দত্ত ও সৃঞ্জয় বসুরাও এসেছিলেন। কথা বলে গেলেন কোচ-ফুটবলারদের সঙ্গে। প্র্যাকটিসের পর শিলটন-মেহতাবদের রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী দেখাল। ড্রেসিংরুম থেকে ভেসে আসছিল মিউজিকও। বোঝা যাচ্ছিল, ডার্বির চাপ নেই তাঁদের। ফুরফুরে মেজাজ।
কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে আগামিকাল বাগান যুবভারতীতে নামবে সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। শেষ ছ’টা ডার্বি ইস্টবেঙ্গলকে জিততে দেয়নি মোহনবাগান। কিন্তু এই পরিসংখ্যান কোনওভাবেই আত্মপ্রসাদের কারণ নয় বলে জানালেন শঙ্করলাল। বললেন, "ডার্বি ম্যাচ মানেই নতুন কিছু করে দেখানো। তাগিদটা কোচ থেকে ফুটবলার, সবারই থাকে।" শঙ্করলাল রীতিমতো সমীহ করছেন ইস্টবেঙ্গলকে। বিপক্ষের খেলা এত ভালভাবে লক্ষ্য করেছেন, যে গড়গড় করে বলে দিতে পারছেন লাল-হলুদের কোন ফুটবলার কখন কোথায় কিভাবে ওঠানামা করেছে। সবটা মুখস্থ শঙ্করলালের।
আরও পড়ুন: টিকিট তো আর আমি ছাপাই না: আইএফএ সচিব
ডার্বিতে শঙ্করলাল তাঁর প্রাক্তন কোচ সুভাষের সঙ্গে লড়াইয়ে। তাঁর মতে, লড়াইটা ব্যক্তিবিশেষের নয়। দুই দলের। সুভাষ ভৌমিকের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল শঙ্করলাল। বললেন, "ভারতের অন্যতম সেরা কোচ সুভাষদা। উনি যতগুলো ডার্বিতে কোচিং করিয়েছেন তত আমার বয়স নয়।" ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা ডার্বিতে একেবারে অন্যরকম খেলাটাই উপহার দেবেন বলেও মত শঙ্করলালের। তিনি বলছেন, খেলোয়াড়রা নিজেদের আত্মসম্মান এবং ক্লাবের কথা ভেবেই ডার্বিতে ১০০ শতাংশের বেশি উজাড় করে দেয়।
বিপক্ষের আল আমনা নয়, জনি অ্যাকোস্টার নামটাই বারবার উঠে আসছে। চলতি বিশ্বকাপারের উপস্থিতিতেই ইস্টবেঙ্গল অনেকটা এগিয়ে। এমনটাই মত শঙ্করলালের। বললেন. "ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায় খেলে এসেছে অ্যাকোস্টা। এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ও বড় ফুটবলার। বিশ্বকাপ খেলা সবার স্বপ্ন থাকে। ও সেটা করে এসেছে।" অ্য়াকোস্টা ডার্বির আগে কোনও ম্যাচ খেলেননি। ফলে ডার্বিতে তাঁর মানিয়ে নেওয়াটা সমস্যার হতে পারে কি? এই তত্ত্ব একেবারে খারিজ করে দিলেন শঙ্করলাল। উদাহরণ দিলেন প্রাক্তন মোহনবাগানের লেবানিজ তারকা আক্রম মোঘরাবির। বলছেন, “আক্রম তো তিনদিনের মাথায় ডার্বি খেলেছিল। সেখানে অ্যাকোস্টা এক মাস প্র্যাকটিস করেছে।" শঙ্করলাল হেনরি-ডিকাকে একটা কথাই কথা বলেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, অ্যাকোস্টা নেইমারকে আটকে এসেছে। সুতরাং তাঁকে টপকাতে হবে।
আরও পড়ুন: কলকাতা ঘোরেননি, মুখে তোলেননি ইলিশ, অ্যাকোস্টা চাখতে চান ডার্বির স্বাদ
শঙ্করলাল জানেন, ডার্বি যে দল জিতবে, সেই খেতাবের কাছাকাছি চলে আসবে। গতবার শিলিগুড়িতে ডার্বি ড্র করে কলকাতা লিগ হাতছাড়া হয়েছিল বাগানের। সেই যন্ত্রণা ভোলেননি শঙ্করলাল। তাঁর খেলোয়াড়রাও ভোলেননি হারের আঘাত। আর বড় ম্যাচে এটাই হতে চলেছে তাঁদের চালিকাশক্তি। এদিন বাগান তাঁবুতেই ক্লাবের প্রাক্তন কিংবদন্তি ফুটবলার শৈলেন মান্নার জন্মদিনে তাঁর ছবিতে মাল্যদান করা হল। শ্রদ্ধা জানালেন শঙ্করলাল-শিলটনরা। বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বড় ম্যাচের আগে ফুটবলারদের হাতে গুনে কয়েকটা টিপস দিয়েছেন। তিনি বললেন, বরাবরই ফুটবলারদের এটাই বলে আসেন ডার্বির আগে। শরীর ফিট রাখা, রাতে তাড়াতাড়ি শোওয়া, সহজপাচ্য খাওয়া। এটা করতে পারলেই ডার্বিতে ফুটবলাররা ৫০ শতাংশ এগিয়ে থাকবে। এমনটাই মত বাগানের বটবৃক্ষের।