বিতর্ক। বিক্ষোভ। বিশৃঙ্খলা। গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে। বিনিয়োগকারী শ্রী সিমেন্ট এবং ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের নজিরবিহীন টানাপোড়েন ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছেছে বুধবারের শয়ে শয়ে সমর্থকদের বিক্ষোভে। দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মারামারিতে যা কদর্য রূপ নিয়েছে।
তবে ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের বক্তব্য বেশ পরিষ্কার। তাঁরা বলছেন, "দ্রুত মাঠে দল নামাতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে স্পোর্টিং রাইটস তো আমাদের কাছে নেই। সমর্থকদের এটা বোঝা উচিত।"
আরো পড়ুন: শ্রী সিমেন্টের কাটমানির খেলা চলছে! ইস্টবেঙ্গল কাণ্ডে দিলীপের তীব্র তোপে মুখ্যমন্ত্রী, দেখুন ভিডিও
মূল চুক্তিপত্রে কোনোভাবেই সই করা হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতির সদস্যরা। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কার্যকরী কমিটির এক কর্তা জানিয়ে দিলেন, দুটো পয়েন্টে নমনীয় হলেই ক্লাব সই করতে উদ্যোগী হবে। প্ৰথম, সমর্থকদের রাইটস- ক্লাব সদস্যদের মান্যতা দিয়ে চুক্তিপত্রে নমনীয় হোক ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট। দুই, এক্সিট ক্লজ- শূন্য ব্যালেন্সে স্পোর্টিং রাইটস নেওয়ার পর ফিরিয়ে দেওয়ার সময় বিনামূল্যেই তা ফেরাতে হবে লগ্নিকারী সংস্থাকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সেই ক্লাব কর্তা বলছিলেন, "ক্লাবে দুটো দল মারপিট করছে এটা মোটেই স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা নয়। মেসি-রোনাল্ডোকে ক্লাবে নিয়ে আসা নিয়ে আলোচনা হোক, তা ক্লাবের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। আমরা বারবারই বলছি মেম্বার্স রাইটস এবং একজিট ক্লজ নিয়ে যে পয়েন্ট রয়েছে চুক্তিতে, সেই বিষয়ে শ্রী সিমেন্ট যদি একটু নমনীয় হয়, আমরা যে কোনো মুহূর্তে সই করে ফেলতে রাজি।"
আরো পড়ুন: আগে ডাকেনি, এখন প্রাক্তনদের টার্মশিট দেখানোর জন্য কর্তারা ব্যস্ত কেন: গৌতম সরকার
ঘটনা হল, এই অচলাবস্থার জন্য ক্লাবের তরফ থেকে পুরোদস্তুর দায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিনিয়োগকারী সংস্থার দিকে। বারবার বার্তা দিলেও আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে বিলগ্নিকারী সংস্থা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ফুটবলে বিনিয়োগে মোহভঙ্গ হয়েই নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাইছে শ্রী সিমেন্ট? ক্লাবের তরফে বলা হচ্ছে, সঠিকভাবে ক্লাব পরিচালনার উদ্দেশ্য থাকলে আক্রমণাত্মক একের পর এক পয়েন্ট সংযোজন করত না শ্রী সিমেন্ট। ক্লাব বারবার আলোচনায় বসতে উদ্যোগী হলেও পিছিয়ে গিয়েছে শ্রী সিমেন্ট। ক্লাব যাতে মূল চুক্তিপত্রে সই না করতে বাধ্য হয়, সেই জন্যই কি নমনীয় হওয়ার পথে না হেঁটে একের পর এক আপত্তিকর একের পর এক পয়েন্ট যোগ করেছে শ্রী সিমেন্ট!
বিনিয়োগকারী সংস্থার তরফে বারবার বলা হয়েছে, স্পোটিং রাইটস ফেরত নিতে হলে, ক্লাবকে টাকা খরচ করতে হবে। কারণ ইতিমধ্যেই প্রথম মরশুমে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে শ্রী সিমেন্ট। ক্লাবের বক্তব্য পরিষ্কার, মৌ স্বাক্ষরের ভিত্তিতে দল গঠন করেছে শ্রী সিমেন্ট। বিনিয়োগ করার সঙ্গেই ইস্টবেঙ্গলের মত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ব্যবহার করতে পেরেছে তাঁরা। তার জন্য তো অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে নি ক্লাব, তাহলে এখন স্পোর্টিং রাইটস ফেরত দেওয়ার সময় অর্থ দাবি করার যুক্তি কি! ইস্টবেঙ্গলের ব্র্যান্ড ভ্যালু তো কম নয়।
ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ফুটবলে বিনিয়োগ করে এক মরশুম পরেই মোহভঙ্গ ঘটেছে শ্রী সিমেন্টের। তাদের ব্যবসা মূলত পশ্চিম এবং উত্তর ভারতে। পূর্ব ভারতে সেরকম ব্যবসা নেই। তাছাড়া শ্রী সিমেন্ট হয়ত ব্যক্তিগতভাবে উপলব্ধি করেছে কলকাতায় ফুটবলে লগ্নি করলেও স্বয়ংশাসিতভাবে ক্লাব পরিচালনা করতে পারবে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক সমীকরণের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে। সেই কারণেই হয়ত গুটিয়ে নেওয়ার প্রয়াস। অসম্ভব সমস্ত পয়েন্ট যোগ করে ক্লাব কর্তাদের সই না করতে বাধ্য করা, হয়ত তারই ইঙ্গিত। এমনটাই বক্তব্য ক্লাবের একাংশের।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এফডিএসএল কর্তৃপক্ষ সরাসরি এই বিষয়ে এবার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় কিনা, সেটাই দেখতে মুখিয়ে ফুটবল মহল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন