/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/04/thorllahur-siggeirsson.jpg)
ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী সিগারসন - ছবিঃ সিগারসন/ সোশ্যাল মিডিয়া
কোচ হয়েই স্টিফেন কনস্টানটাইন আইসল্যান্ড থেকে বিদেশি সহকারী বাছাই করে এনেছিলেন। থোরহালুর সিগার্সন ইউরোপ ছেড়ে প্ৰথমবার কোচিং করতে পা রেখেছিলেন ভারতে। স্টিফেন কনস্টানটাইনের সহকারী হিসাবে। তবে ইস্টবেঙ্গল-অভিযান মোটেই সুখের হয়নি ৩৬ বছরের আইস্ল্যান্ডিক কোচের। ব্যর্থতার তকমা নিয়েই ভারত ছাড়তে হয়েছে।
দেশে ফিরে আইস্ল্যান্ডিক এফএ-এ বড়সড় পদে আপাতত আসীন তিনি। যুব প্রতিভা শনাক্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। রেকিয়াভিক থেকেই ইস্টবেঙ্গল, আইএসএল, ভারত নিয়ে খুল্লামখুল্লা সিগার্সন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র সঙ্গে একান্ত ইমেল-সাক্ষাৎকারে যা যা বললেন তুলে দেওয়া হল:
১) ভারতীয় ফুটবল, বিশেষ করে কলকাতায় আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
বিরাট অভিজ্ঞতা। আইএসএলে সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এমনকী, ঐতিহ্যশালী ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কঠিন সময়েও এই ক্লাবের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্ববোধ করেছি। বিশেষ করে সল্টলেক স্টেডিয়ামে খেলা পড়লে আমার একটা আলাদা অনুভূতি হত। ম্যাচের আগে মাঠে দাঁড়ানোটা, সে এক আলাদা অনুভূতি।
আরও পড়ুন: দৌড়ে এগিয়ে থেকেও শেষমেশ ব্রাত্য! কুয়াদ্রাত ইস্টবেঙ্গল কোচ হতেই মুখ খুললেন গামবাউ
২) আপনার কোচিং থেকে ইস্টবেঙ্গলের প্রত্যাশা কী ছিল?
আমার মনে হয় যে আমি ক্লাব, দল আর খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি যখন আসি, তখন মহেশের মতো খেলোয়াড় আমাদের প্রথম একাদশে ছিল না। আর, মো তো আমাদের দলেই ছিল না। আমি আমার চিন্তাভাবনা অনুযায়ী, খেলোয়াড়দের দলে জায়গা দেওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। মাঠের বাইরে, আমি অনেক বিখ্যাত মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি। নতুন বন্ধু তৈরি করতে পেরেছি। আশা করি সেই যোগাযোগ আর বন্ধুত্ব আজীবন থাকবে।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/04/image-3.png)
৩) আপনি আপনার স্বল্প কোচিং কেরিয়ারে আইসল্যান্ডের বেশ কয়েকটি সেরা ক্লাবকে কোচিং করিয়েছেন। ভারতীয় ফুটবলে সেই অভিজ্ঞতা কি আপনার কোনওভাবে কাজে লেগেছে?
আমি মনে করি দুঃসাহসী হওয়াটা আমার সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে সাহায্য করেছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে আপনার কমফোর্ট জোনের বাইরে যেতে হবে। তবেই ইতিবাচক অভিজ্ঞতা পাবেন। আমি এর আগেও ভারত ভ্রমণ করেছি। এখানকার খাবার আমি বেশ পছন্দ করি। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কোচিং পদ্ধতিকে অন্য ধরনের ফুটবলের সঙ্গে মেলানো এবং বিভিন্ন ধরনের ফুটবল ভাবনাকে সংযুক্ত করা আমার একটা লক্ষ্য।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/04/image-4.png)
৪) টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইনের সঙ্গে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন? আগে চিনতেন?
না, আগে চিনতাম না। আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, ভাবনাচিন্তা আর পদ্ধতি অনেকটাই আলাদা। আমি যতটা সম্ভব পেশাদার হওয়ার চেষ্টা করেছি। তাঁর ভাবনার সঙ্গে খাপ খাইয়েছি। ওই পরিবেশে খেলোয়াড়দের সাহায্য করেছি। স্টিফেন অতীতে ভারতীয় জাতীয় দলের সঙ্গে ভালো কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও তিনি চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য পান, সেই কামনাই করি।
৫) এই মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের ভুলগুলো কী ছিল?
আমি বিশ্বাস করি না যে কোনও একটা জিনিস বা একটা সিদ্ধান্ত গোটা মরশুমের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। আমি বিশ্বাস করি যে ক্লাবের সাফল্যের জন্য আগামী কয়েক বছরে আরও নানা পদ্ধতির প্রয়োগ করা জরুরি। এমন কিছু করা জরুরি, যেখানে সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সুযোগ-সুবিধা থাকবে। স্কোয়াডে ভারসাম্য থাকবে। একটা উজ্জ্বল পরিকাঠামো থাকবে। কোচিং স্টাইল, খেলার ধরন, প্লেয়ারদের অ্যাপ্রোচ সবকিছুর মধ্যে একটা এগিয়ে যাওয়ার ভাবনা থাকবে। আসলে একটি সফল পরিবেশ তৈরি করতে ক্লাবের চারপাশের সবাইকে একই দিকে সারিবদ্ধ করা দরকার। যেটা তারা করছে বলেই আমার বিশ্বাস।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/04/image-6.png)
৬) স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনকে মরশুম শেষ হওয়ার পরে তাঁর পদ থেকে সরানো হবে। আপনি কি মনে করেন, এটা ক্লাবের জন্য সঠিক পদক্ষেপ?
সঠিক না-ভুল, তা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। এই পরিচালকদের সিদ্ধান্ত। যাই হোক না কেন, আমি ক্লাবকে সমর্থন করব। কারণ, আমি সত্যিই চাই যে ইস্টবেঙ্গল ভালো করুক, এগিয়ে যাক এবং তারা যেখানে আছে সেখান থেকে আরও উন্নতি করুক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আগামী বছরের জন্য একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা।
৭) সুমিত পাসির মতো একজন খেলোয়াড়কে নিয়মিত স্টার্টার বানানোর জন্য স্টিফেন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছেন। আপনার কী মত?
চারটে ম্যাচ খেললেই কোনও খেলোয়াড় নিয়মিত স্টার্টার হয়ে যায় না। ফুটবল একটা দলগত খেলা। আমি কখনও মনে করি না যে একজন খেলোয়াড়ের দিকে আঙুল তোলা বা তাঁকে দোষ দেওয়াটা ঠিক।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/04/image-5.png)
8) আপনি এখন আইসল্যান্ডের এফএ-তে চিফ ট্যালেন্ট স্পটার। এই অ্যাসাইনমেন্টটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
এটা একটা রোমাঞ্চকর অ্যাসাইনমেন্ট। কারণ, এই কাজটা আইসল্যান্ডের ফুটবল সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। আমাদের কাজ হল অল্পবয়সি প্রতিভাদের নিয়ে কাজ করা। যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষের বাস দ্বীপটায়। যার লক্ষ্য ইউরোর মূলপর্ব এবং বিশ্বকাপের মূলপর্বে পৌঁছনো। আমাদের যুবদলের সেটআপ সেই সাফল্যে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। প্রতিভাকে চিনে নেওয়া একটা বিরাট ব্যাপার। একজন যুব জাতীয় কোচ হওয়া বিরাট দায়িত্ব। তার সঙ্গে এটা একটা বিরাট সম্মানেরও ব্যাপার।
৯) আপনি কি অদূর ভবিষ্যতে ভারতে আসতে চান?
হ্যাঁ, আশা করি যে ভারতে আবার কাজ করার সুযোগ পাব। খেলোয়াড় এবং ব্যাকরুম স্টাফদের সঙ্গে আমার একটি দুর্দান্ত সম্পর্ক ছিল। আমি তাঁদের প্রত্যেককে যোগ্য সম্মান দেখিয়েছি। মাঠে এবং মাঠের বাইরে তাঁদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান, ভারতীয় খেলোয়াড়দের সম্পর্কে জ্ঞান, আমার বিজ্ঞানসম্মত ভাবনাচিন্তা, আধুনিক পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা, আশা করি এসব আমাকে ভবিষ্যতে ফের ভারতে কোচিং করানোর সুযোগ দেবে।