একের পর এক ম্যাচে জয় নেই। ইস্টবেঙ্গল খেললে যেখানে জয় অবধারিত থাকত, সেখানে বর্তমানে শিরোনাম হয় জয় পেলে। হার-ই যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ইস্টবেঙ্গল। চলতি আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের ক্রমাগত খারাপ খেলায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে এবার প্রাক্তন ফুটবলাররা চিঠি দিলেন লাল হলুদ ক্লাব সচিবকে।
ইনভেস্টর সমস্যা মেটানোর সময় ক্লাবে এগারোজন প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে গড়া হয়েছিল ফুটবল কমিটি। সেই কমিটির তরফে এবার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে চিঠি দেওয়া হল।
গত ১৯ জানুয়ারি ক্লাবকে চিঠি দেওয়ার পরে সেই খবর এবার প্রকাশ্যে আনলেন বিকাশ পাঁজি, অতনু ভট্টাচার্য, মিহির বসুরা। ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে প্রাক্তনদের গঠিত কমিটির এগারোজন কমিটির মধ্যে হাজির থাকতে পারেননি দুজন- মেহতাব হোসেন এবং কৃষ্ণেন্দু রায়। চিঠির বয়ানে লেখা হয়েছে-
আরও পড়ুন: সুভাষকে কেন নয় দ্রোণাচার্য! প্রশ্ন ব্রাত্য মহাগুরু কোলাসোর, মুখ খুললেন নঈমও
"আমরা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলারদের গঠিত কমিটি (ক্লাবের সদস্য) আজ মিলিত হয়ে ক্লাবের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার বিষয়ে মতামত পেশ করলাম।"
"আজ থেকে ১০ মাস আগে চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুকুমার সমাজপতির আহ্বানে প্রাক্তন ফুটবলারদের উপস্থিতিতে একটি কমিটি গঠন করে তৎকালীন পরিস্থিতিতে ক্লাবকে আমাদের পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দীর্ঘ ১০ মাস ক্লাবের লড়াইকে সামনে থেকে দেখে এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলার জার্সি পড়ে খেলার আবেগ থেকে দেখে আমাদের উপলব্ধির কথা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে সবাইকে জানাতে চাই।"
আরও পড়ুন: আরও পড়ুন: সুভাষের নামে প্ৰথম সম্মানই ডার্বি-নায়ক কিয়ানকে! বড় ঘোষণা সবুজ-মেরুনের
"গত ২-৩ বছর ক্লাবের খেলার ফলাফল শুধু আমাদের নয়, সমস্ত ফুটবল প্রেমীদের ভীষণভাবে আঘাত করেছে। হারা-টা ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। যা আগে তার ঠিক উল্টোটা ছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হার মানে ছিল অঘটন। আর এখন ক্লাব কোনও খেলায় জিতবে কিনা, সেই বিশ্বাসটাই হারিয়ে গিয়েছে।"
"আমাদের সম্মিলীত আবেদন ক্লাব নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী টিম করে সেই টিমের যে টুর্নামেন্ট খেলার প্রয়োজন, সেই টুর্নামেন্ট গুলোই খেলুক। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, আমরা প্ৰথম দিকে যখন মিলিত হয়েছিলাম, তখন ক্লাবের ভিতরে তিনজন খেলোয়াড় শ্রী সুভাষ ভৌমিক, ভাস্কর গাঙ্গুলী এবং তরুণ দে বলেছিলেন,
"যাঁরা আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে সম্মান দিয়ে ডাকবে, আমরা সেই টুর্নামেন্ট গুলোই খেলব। তবে শুধু অংশগ্রহণ করার জন্য খেলব না, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব। আর আমরা ISL ISL করে কেন মরছি? এই টুর্নামেন্টের আমাদেরকেই প্রয়োজন আছে, এটা খুব শীঘ্রই সবাই বুঝতে পারবে। গত দু-বছর ক্লাবের এত খারাপ ফলের পরেও বিশ্বস্ত সূত্রে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে পাওয়া খবরে দেখা গিয়েছে, আমাদের ক্লাবের খেলাতেই সবথেকে বেশি দর্শক।"
"গত AGM এ সমস্ত সভ্যরাও সভাপতির কাছে অনুরোধ রেখেছিলেন, সেখানে আমরাও কেউ কেউ উপস্থিত ছিলাম যে কোনও মতেই যেন কোনও একটা টুর্নামেন্টকে মাথায় রেখে খেলতে হবে বলে খেলব, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলব এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলব। যাতে ১০০ বছরের জেতার মানসিকতা বজায় থাকে।"
আমরা সকলেই চাই ক্লাবের যোদ্ধারা সম্মানের সঙ্গে লড়াই করবে। এবং জয় এনে ক্লাবকে গৌরবান্বিত করবে। এটাই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সংস্কৃতি, এটাই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঐতিহ্য।"
আরও পড়ুন: প্রদীপ ‘গুরু’র যোগ্য শিষ্য সুভাষ!
"তবে এটাও বলা প্রয়োজন, আমরা কোনও ব্যক্তি বা ইনভেস্টরের বিরুদ্ধে নই। আমরা সিস্টেমের বিরুদ্ধে। সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, সেরকম ইনভেস্টর প্রয়োজন। যাদের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি করে সুন্দরভাবে টিম তৈরি করে ইস্টবেঙ্গল যাতে ISL বা যে কোনও টুর্নামেন্টে তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলে। সেটা ISL হোক I League বা কলকাতা লিগ- যাই হোক না কেন!"
"এমতাবস্তায় প্রাক্তন খেলোয়াড়দের তরফ থেকে ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে আন্তরিক অনুরোধ, ক্লাব তার সঠিক সিস্টেম বজায় রেখে, সম্মান বজায় রেখে, সামর্থ্য অনুযায়ী টুর্নামেন্টে খেলে জয়ের অভ্যাসে ফিরে আসুক।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন