ফের মহীরুহ পতন ময়দানে। আলোর দেশে বুধবার পাড়ি দিলেন ইস্টবেঙ্গল কিংবদন্তি পরিমল দে। ময়দানি ফুটবল হারাল জংলা দে-কে। দীর্ঘ রোগভোগের পর পরিমল দে প্রয়াত হলেন বুধবার। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
জন্ম খড়দায়। কলকাতা লিগে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল বালি প্রতিভা ক্লাবের হয়ে। আর কলকাতা লিগে আবির্ভাবেই নায়ক হয়েছিল পরিমল দে। ভবিষ্যতে যে ক্লাবের জার্সিতে তিনি কিংবদন্তি তুল্য হয়ে উঠবেন, সেই ক্লাবের জালেই বল জড়িয়ে নিজের আবির্ভাব সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন।
ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দুরন্ত গোলে আত্মপ্রকাশ ঘটানো পরিমল দে পরের বছরেই তেষট্টিতে যোগ দেন উয়ারিতে। উয়ারির জার্সিতে সেই বছর আরও বিধ্বংসী মেজাজে ধরা দেন তিনি। একই মরশুমে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহামেডান- তিন ক্লাবের জালেই বল জড়ান তিনি। তারপরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
উয়ারিরর দুর্ধর্ষ পরিমলকে পাওয়ার জন্য ঝাঁপায় একের পর এক ক্লাব। তবে শেষমেশ তিনি সই করেন ইস্টবেঙ্গলেই। তারপর টানা সাত বছর পরিমল দে-র ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় লাল-হলুদ তাঁবু। এরপরে মোহনবাগানে দু-বছর খেলে ফের তিয়াত্তরে নাম লেখান পুরোনো ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে। প্রিয় ক্লাবেই নেন অবসর।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দুই পৃথক পৃথক স্পেলে আইএফএ শিল্ড এবং কলকাতা লিগ ডাবল জিতেছেন তিনবার- ১৯৬৬, ১৯৭০ এবং ১৯৭৩-এ। সবমিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে ৮৪ গোল করেছেন।
আইএফএ-এ শিল্ডে পরিবর্ত হিসাবে নেমে ইরানের পাস ক্লাবের বিরুদ্ধে তাঁর গোল এখন ময়দানি ফুটবলে মিথ হয়ে গিয়েছে। পরিবর্ত হিসাবে নেমে সেবার দ্রুততম গোলের নজির গড়ে যান তিনি। সেই রেকর্ড এখনও অক্ষুণ্ন। ডুরান্ড কাপ এবং রোভার্স কাপ জিতেছেন যথাক্রমে ২ বার এবং ৩ বার। ১৯৬২ এবং ১৯৬৮-তে বাংলাকে সন্তোষ ট্রফি জিততেও সাহায্য করেন।
জাতীয় দলের হয়ে পাঁচ ম্যাচ খেলেছেন জংলা দে। ১৯৬৬-এ মারডেকা কাপে কোরিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় স্থান নির্ণায়ক ম্যাচে পরিমল দে গোল করে দেশকে ব্রোঞ্জ জিততে সাহায্য করেন। ১৯৮৮-এ ইস্টবেঙ্গলের ক্যাপ্টেন হিসাবে বরদলুই, নাগাজি এবং চাকুলা গোল্ড কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-হলুদ শিবির।
২০১৪-এ আগেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত ময়দানি ফুটবল। শোকপ্রকাশ করেছেন ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে এদিন লাল-হলুদ পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। শেষ যাত্রায় জংলা দে-র গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয় লাল-হলুদ পতাকা এবং ফুলের মালা। তিনি রেখে গেলেন একমাত্র পুত্র প্রতীক এবং পুত্রবধূ রিমিকে।