নিখুঁত স্ট্র্যাটেজিতে অপ্রতিরোধ্য দুর্দমনীয় মোহনবাগানের হাতে মোমবাতি ধরিয়ে দিলেন। সবুজ মেরুন জার্সিতে একের পর এক সুপারস্টার। ইউরো কাপ, বিশ্বকাপ খেলা তারকা। ভারতের জাতীয় দলের অর্ধেক ফুটবলারই মোহনবাগানের স্কোয়াডে। সেই স্কোয়াডই থেমে গেল কুয়াদ্রারের প্রফেসরির কাছে।
দীর্ঘ চার বছর পর ডার্বির রং লাল-হলুদে মুড়ে দেওয়ার পর কুয়াদ্রাত বলে দিলেন, "মোহনবাগান স্কোয়াডে তো অনেক তারকা। দল গড়তে প্রচুর অর্থ খরচ করেছে। ইউরো কাপ, বিশ্বকাপে খেলা তারকা রয়েছে ওঁদের। তবে ওঁরা এখনও ম্যাচ ফিট নয়। কামিন্স, সাদিকু, পেত্রাতোসের মত ফুটবলারকে ওঁরা অল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করতে পেরেছে। হ্যাঁ, ডুরান্ড প্রাক মরশুম টুর্নামেন্ট। এখানে সকলকে সমানভাবে ম্যাচে নামানো যায় না। তবে ওঁদের দেখে মোটেও ফিট মনে হয়নি।"
স্বপ্নের জয়ের পরেও মা রয়েছে মাটিতে। এখনই আবেগে ভেসে যেতে চান না। বরং মাটিতে পা রেখে অল্প অল্প করে লক্ষ্যে পৌঁছতে চান। ডার্বি জিতলেও ডুরান্ডকে প্রাক মরশুম টুর্নামেন্টের বেশি ধরছেন না স্প্যানিশ কোচ। তাই পাখির চোখ করছেন আইএসএল-কে। প্ৰথম ম্যাচে বাংলাদেশ আর্মির বিপক্ষে জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে এসেছিল, লাল-হলুদ শিবির।
ডার্বি জয়ের পর অতীতের ম্যাচের প্রসঙ্গও কুয়াদ্রাতের গলায়। "কয়েক দিন আগেই দুই পয়েন্ট হারাতে হয়েছিল প্ৰথম ম্যাচে। কিন্তু সেই স্মৃতি মুছে লক্ষ্য ছিল ভালভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর। আমি আসলে ফুটবলারদের মধ্যে ফাইটিং স্পিরিট তৈরি করতে চাই। ফুটবল এমন যখন কোনও ম্যাচে কেউ নায়ক হয়, অন্যদিন সে-ই খলনায়ক হয়। অনুশীলনে আমরা প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রম করছি।"
মোহনবাগান প্ৰথম দু-ম্যাচ জিতে পরের পর্বের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল প্রথম ম্যাচ ড্র এবং ডার্বি জয়ের সৌজন্যে পরবর্তী রাউন্ডে পৌঁছনোর বিষয়ে ফেভারিট দ্বিতীয় দল হিসেবে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে পাঞ্জাব এফসির বিপক্ষে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী কুয়াদ্রাত জানাচ্ছেন, "আমরা পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ভাল খেলতে মরিয়া। ওরা এবার আইএসএল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বুধবারের ম্যাচ জিতে শেষ আটে কোয়ালিফাই করতে চাই আমরা।”
চলতি ট্রান্সফার সিজনে নন্দকুমার ওড়িশা এফসি থেকে নাম লিখিয়েছিলেন লাল-হলুদে। ডার্বি জয়ের পর আপাতত তিনিই লাল-হলুদ জনতার নয়নের মণি। শেষবার ভারতীয় হিসাবে চার বছর আগে ডার্বি জয়ে ইস্টবেঙ্গলে ভারতীয় হিসাবে গোল ছিল জবি জাস্টিনের। এবার নন্দ-র। শনিবাসরীয় ডার্বির নায়ককে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল বস। বলছেন, "নন্দ অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। আইএসএল-এ দুর্ধর্ষ কিছু গোল করেছে নন্দ। ওঁর সঙ্গেই আলাদা করে উল্লেখ করতে হয় খাবরার কথা। আগের ম্যাচের ওঁর ভুলে গোল হজম করেছিল দল। তারপর মন খারাপ করেছিল ও। এদিন নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করল খাবরা। নিশু কুমার এই ম্যাচে কার্ড সমস্যায় খেলতে পারেননি। ও এলে আরও অপশন বাড়বে। এখনও আমাদের বিদেশিরা ম্যাচ ফিট নয়। তবে আগামীদিনে সেটাও হতে যাবে।"
গত সিজনে ইস্টবেঙ্গলের হতশ্রী পারফরম্যান্সের মধ্যেই গোলাপ হয়ে ফুটেছিলেন ক্লেইটন সিলভা। এবার সেই ক্লেইটনকে দলে রেখেই ডুরান্ডের স্কোয়াড গড়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ডার্বির দিন সকালেই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড শহরে পা রাখলেন। কোচ কুয়াদ্রাত জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ধকল সামলে কলকাতায় আসা ক্লেইটনের সঙ্গে তাঁর খুব বেশি কথা হয়নি। তবে সাজঘরে তিনি ফুটবলারদের সমস্ত আলোচনাতেই ছিলেন। যোগ্য নেতার মতই দলকে পরিচালনা করেছেন মাঠের বাইরে।
এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে আমাদের। আমি খুব খুশি। তবে আরও বেশি খুশি সমর্থকদের জন্যে। ম্যাচের পর যখন ওরা মাঠে নেমে এসেছিলেন তখন ওদের চোখে আনন্দাশ্রু দেখতে পেয়েছিলাম। সেটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। পারদো এবং ক্লেইটনকে ছাড়াই ইস্টবেঙ্গলের জয় ভরসা জোগাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের। সমর্থকদেরও আলাদা করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রোফেসর কার্লেস কুয়াদ্রাত।