scorecardresearch

কাদায় যেন পদ্মফুল! জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই ইস্টবেঙ্গল তারকা আগুন জ্বালাচ্ছেন, মুগ্ধ স্টিম্যাচও

ইস্টবেঙ্গলের শোচনীয় মরশুমের মাঝে একমাত্র আশার সলতে ছিলেন তিনিই

কাদায় যেন পদ্মফুল! জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই ইস্টবেঙ্গল তারকা আগুন জ্বালাচ্ছেন, মুগ্ধ স্টিম্যাচও

সুনীল ছেত্রীর ওয়ান স্টেপ ট্রেডমার্ক পেনাল্টি কিরঘিজস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয় নিশ্চিত করে দিয়েছে। যে রাতে দেশের জার্সিতে সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলা সুপারস্টার ৮৫তম আন্তর্জাতিক গোল করে গেলেন, সেই রাতেই উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন ২৪ বছরের উঠতি তারকা। বর্তমানে ইস্টবেঙ্গল খেলার সুবাদে যাঁর সাকিন ঠিকানা কলকাতা।

নাওরেম মহেশ দেশের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ খেললেন। আর দ্বিতীয় ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন বহুদূর যাওয়ার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর। ৩৪ মিনিট মাত্র খেললেন। দ্বিতীয়ার্ধে ইগর স্টিম্যাচ পরিবর্ত হিসাবে নামালেন মহেশকে। যে এই সময়েই প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে গেলেন। ইমফলের ভিড়ে ঠাসা স্টেডিয়াম ছিল তাঁর সামনে। লেফট উইং দিয়ে কার্যত নাভিশ্বাস তুলে দিলেন কিরঘিজ ডিফেন্সকে। সুযোগ পেলেই ইনসাইড কাট করে বক্সের দিকে হানা দেওয়া, বাইলাইন ধরে সোজা দৌড়, আর বিষাক্ত সমস্ত ক্রস- মহেশ যেন একাই নাস্তানাবুদ করে দিলেন বিপক্ষ রক্ষণকে।

আইএসএল-ও ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে এই কাজটিই করে গিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে। তবে স্টিফেনের লাল-হলুদের শোচনীয় বিপর্যয় রোখার পক্ষে তা যথার্থ ছিল না। ইস্টবেঙ্গল ভুলে যাওয়ার মত মরশুম উপহার দিয়েছে সমর্থকদের, তবে জাতীয় ফুটবলের সঙ্গে মহেশের পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছেন লাল-হলুদ শিবির।

ইস্টবেঙ্গলের হয় নয়টি গোলেই ছিল মহেশের অবদান- সাতটি এসিস্ট এবং দুটো গোল। তাঁর ধারাবাহিকতা ইগর স্টিম্যাচের মন কেড়ে নেয়। ক্রোয়েশিয়ান কোচ আগেই বলেছিলেন, উঠতি তারকাদের জাতীয় দলে সুযোগ দিতে দ্বিধা করবেন না তিনি। সেই দর্শন মেনেই ভারতের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছিল মহেশের।

এর আগে মহেশ কখনই কোনও স্কোয়াডে ফার্স্ট চয়েস ছিলেন না। ২০২০-তে কেরালা ব্লাস্টার্স-এ সই করার পরে তাঁকে লোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুদেবা এফসি এবং তারপর ইস্টবেঙ্গল। যাতে মহেশ পর্যাপ্ত ম্যাচ টাইম পান। প্রথমে মহেশ সেভাবে নজর কাড়তে পারছিলেন না। ফাইনাল থার্ডে সেভাবে জ্বলে উঠতে যেমন পারছিলেন না, অনেক ম্যাচে আবার রিজার্ভ বেঞ্চ গরম করতে হচ্ছিল। তবে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্ৰথমবার পূর্ণ সময়ের খেলার সুযোগেই বদলাল ভাগ্য। তবে ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে ঝলমলে করলেও সরাসরি জাতীয় দলে জায়গা জোটেনি। শিবশক্তি নারায়ণ চোট পাওয়ায় মহেশের ভাগ্যে শিকে ছেড়ে জাতীয় দলের। মায়ানমারের বিরুদ্ধে মাত্র ২০ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। সামান্য সেই ক্যামিওতেই নিজের জাত চিনিয়ে গিয়েছিলেন।

কিরঘিজস্তানের বিরুদ্ধেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দ্বিতীয়ার্ধে সমতা ফেরানোর জন্য কিরঘিজস্তান ভারতীয় অর্ধে চাপ বাড়াচ্ছিল নিয়মিত। ভারত নিখুঁত রক্ষণে মন দিয়েছিল। মাঝমাঠের দখলও নিয়ে ফেলেছিল কিরঘিজস্তান। তবে আকাশ মিশ্র, সন্দেশ জিংঘান এবং আনোয়ার আলির নাছোড় রক্ষণে দাঁত ফোটাতে পারেনি ফিফার ক্রমপর্যায়ে ৯৪ নম্বরে থাকা কিরঘিজরা।

স্টিম্যাচ ৫৬ মিনিটে ব্রেন্ডন ফার্নান্দেজের বদলে নামিয়ে দেন মহেশকে। ব্রেন্ডনের ফ্রিকিক থেকে সন্দেশের গোলেই ভারত এগিয়ে গিয়েছিল। ম্যাচে নেমেই নিজের দ্বিতীয় টাচেই মহেশ প্রায় গোল করে ফেলেছিলেন। সুনীল ছেত্রী দারুণভাবে বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন। তবে নিজের অনভ্যস্ত পায়ের শটে মহেশ সেকেন্ড পোস্ট পেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই ফের মহেশের ঝলক। এবার বক্সের বাইরে থেকে ক্রস তোলার চেষ্টা করতে দেখা গেল তাঁকে। ভারত গোটা ম্যাচেই রক্ষণাত্মক খেলল। সেই ম্যাচেই মহেশের প্রাণবন্ত দৌড় যেন সতেজ হাওয়া বয়ে আনল ভারতের আক্রমণভাগে।

মহেশের জন্যই কিরঘিজরা পাল্টা ডিফেন্স করতে নিজেদের অর্ধে নেমে আসছিল। এতেই মাঝমাঠ পুনরুদ্ধার করতে পারে নীল জার্সিধারীরা। মাঝমাঠের দখল পেতেই নিজের চেনা ছন্দে ফিরলেন রাইট উইংয়ের লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে। যিনি এতক্ষণ পর্যন্ত সেভাবে নজর কাড়তে পারছিলেন না। এই ছন্দ পেয়েই বিধ্বংসী মেজাজে ছাংতে। ক্রস তুললেন। বক্সের মধ্যে হানা দিলেন ক্রমাগত।

ভারতের দ্বিতীয় গোলেও মহেশের অবদান। তাঁর পেস সামলাতে পারেনি কিরঘিজ ডিফেন্ডার। বক্সের মধ্যে ফাউল করে থামাতে হল তাঁকে। তারপরেই সুনীল ছেত্রীর পেনাল্টি থেকে ভারতের দ্বিতীয় গোল।

এশিয়ান কাপের জন্য দলকে দেখে নেওয়ার মঞ্চ ছিল এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট। তবে মহেশের পারফরম্যান্স স্টিম্যাচের মাথাব্যথা আরও বাড়াবে। যদিও তা সুখের। এই পজিশনেই একের পর এক তারকা অপেক্ষায়- উদন্ত সিং, বিক্রম প্রতাপ সিং, মহম্মদ ইয়াসির সকলেই এই মুহূর্তে ফর্মে রয়েছেন। মে মাসে ফের যখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত, স্টিম্যাচকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Read the full article in ENGLISH

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Sports news download Indian Express Bengali App.

Web Title: East bengals naorem mahesh shone in tri nation tournament india vs kyrgyz republic