ইস্টবেঙ্গলে দু-বছরের চুক্তিতে সই করেছিলেন। তবে লাল-হলুদ জার্সিতে আর মাঠে নামা হয়নি। তারপরে বেতন নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কার্যত দ্বন্দ্বযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। সেই জল গড়ায় ফিফার আদালত পর্যন্ত।
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে বেতন-বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া ওমিদ সিং অবশ্য এখনও ভারতের কোনও ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখেন। আর ভারতের ক্লাবে খেলতে চাওয়ার জন্যই রীতিমত শাসানি হজম করতে হয়েছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইরানিয়ান ফুটবলার। ইগর স্টিম্যাচের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া তারকা বলছিলেন, "শুধু ভারত নয়, ইরানের জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ডাক পেয়েছিলাম। তবে আমি যেহেতু ভারতের হয়ে খেলতে ইচ্ছুক ছিলাম, আমাকে চরম আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল। ওঁরা আমাকে রীতিমত হুমকি দেয়। তারপর থেকে ইরানের জাতীয় দলেও আর ডাকা হয় না। ভারত থেকেও কোনও সমর্থন মেলেনি।"
আরও পড়ুন: ক্যাপ্টেন পোগবাকে নিয়ে বিরক্ত মেরিনার্সরা! এবার মুখ খুললেন কোচ ফেরান্দোও
ইস্টবেঙ্গলের বিতর্কিত অধ্যায় নিয়েও মুখ খুলেছেন পার্শিয়ান গালফ লিগে খেলা তারকা ফুটবলার। ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে খুল্লামখুল্লা তারকা। বলে দিয়েছেন, "ইরানের সবথেকে বড় টিভি অনুষ্ঠানে একবার বলে দিই ভারতের জাতীয় দলে খেলতে চাই। সেই সাক্ষাৎকারের পরে ভারতের একাধিক ক্লাবের তরফে বন্যার মত প্রস্তাব ভেসে এসেছিল। পুরো বিষয়টি সমাপ্ত হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে দু-বছরের চুক্তিতে সই করার পরে।"
"তারপরে তো বিতর্কিত সেই ঘটনা। হঠাৎ করেই ভারত সহ বিশ্বের সমস্ত লিগ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে লিগ শুরু হওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গলের ম্যানেজমেন্ট এবং হেড কোচ বদলে যায়। নতুন কোচ আমাকে নিতে চাইছিলেন না। তবে আমার সঙ্গে চুক্তির মান্যতা দিতে চাইছিল না ওঁরা।"
সেই আক্ষেপ এখনও রয়ে গিয়েছে ওমিদের। ইরানের শহরে বসে সেই আকুতি নিয়েই তিনি এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছিলেন, "ইস্টবেঙ্গল আমার চুক্তিকে মান্যতা দিতে পারত। তারপরে পাসপোর্ট নিয়ে সহজেই ক্লাবের জাতীয় দলের ফুটবলারের কোটায় খেলতে পারতাম। নতুন কোচ ভাবেনই নি যে আমি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফুটবলার। উনি বরং নতুন ফুটবলার সই করিয়ে দলকে আর্থিক সমস্যায় ফেললেন। এখন মনে হচ্ছে, আমি যদি ইউরোপ থেকে আসতাম, তাহলে হয়ত যোগ্য সম্মান পেতাম।"
আরও পড়ুন: এই তিন ভুলেই ডুবছে পালতোলা নৌকো! না শুধরোলে বিদায় হতে পারে ফেরান্দোর
ভারতের হয়ে খেলার জন্য বারংবার হুমকি। আর সেই হুমকি নিয়েই বেঁচে রয়েছেন ওমিদ। গলায় অদ্ভুত আশঙ্কা নিয়ে তিনি বলে চলেছিলেন, "বিশ্বের অন্য কোথাও এরকম কেউ বলতে হয়ত সাহস করবে না। তবে এমন একটা দেশে বসে ভারতে খেলার কথা বলেছি, যেখানে হুমকির মুখে আমার পরিবারের নিরাপত্তা। যেখানে সকলেই জানেন ইরানিয়ান সরকার কতটা কঠোর। আশা করেছিলাম ভারত সরকার আমাকে সাহায্য করবে। তবে তেমনটা হয়নি।"
অনেক চেষ্টা করেও ভারতীয় পাসপোর্ট আদায় করতে পারেননি। সেই হতাশা চেপেচুপে বলে দিলেন, "পাসপোর্টের জন্য বহুবার আবেদন-নিবেদন করেছি, এক বছর পর OCI পাসপোর্ট আদায় করতে পারলেও ভারতের পাসপোর্ট অবশ্য এখনও পাইনি।"
আরও পড়ুন: স্ট্র্যাটেজিতে কোনও গলদ নেই, হারের পর ফুটবলারদের দিকে সরাসরি আঙুল বাগান বস ফেরান্দোর
ভারত কবে ডাকবে, সেই আশায় আপাতত ইরানে বসে দিন গুনছেন ওমিদ সিং।