Advertisment

বাইশ গজের নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্য়ান্ড

রবিবাসরীয় ক্রিকেটের মক্কা সাক্ষী থাকল রুদ্ধশ্বাস বিশ্বকাপ ফাইনালের। ক্রিকেট বিধাতার লেখা চূড়ান্ত নাটকীয় চিত্রনাট্যে শেষ হাসি হাসল ইংল্যান্ড। তিনবারের ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড অবশেষে অধরা ট্রফির স্বাদ পেল।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
gland wins icc world cup 2019

ট্রফি হাতে মর্গ্য়ান অ্যান্ড কোংয়ের উচ্ছ্বাস (ছবি-টুইটার, আইসিসি)

রবিবাসরীয় ক্রিকেটের মক্কা সাক্ষী থাকল রুদ্ধশ্বাস বিশ্বকাপ ফাইনালের। ক্রিকেট বিধাতার লেখা চূড়ান্ত নাটকীয় চিত্রনাট্যে শেষ হাসি হাসল ইংল্যান্ড। তিনবারের ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড অবশেষে অধরা ট্রফির স্বাদ পেল। তীরে এসে তরী ডুবল নিউজিল্য়ান্ডের। লর্ডসে ইতিহাস লিখল ইয়ন মর্গ্য়ান অ্যান্ড কোং। দেশের মাটিতে আয়োজিত ক্রিকেটের শো-পিস ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ছিনিয়ে নিল ব্রিটিশ বাহিনী। পরপর দুটি বিশ্বকাপে রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল কিউয়িদের । ২০১৯ আইসিসি বিশ্বকাপে লেখা হল ইংল্যান্ডের নাম। নিউজিল্য়ান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল ইংল্য়ান্ড।

এদিন টস জিতে প্রথমে ব্য়াট করে নিউজিল্য়ান্ড মাত্র ২৪১ রানে আট উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায়। লিয়াম প্লাংকেট এবং ক্রিস ওকস বল হাতে জ্বলে উঠলেন। তিনটি করে উইকেট নিলেন তাঁরা। একটি করে উইকেট জোফ্রা আর্চার এবং মার্ক উডের। ব্রিটিশ বোলাররা কার্যত দাপট দেখালেন এদিন। তাঁদের মাপা বোলিংয়ে বোতলবন্দি হয়ে গেলেন কিউয়ি ব্য়াটসম্য়ানরা।

নিউজিল্য়ান্ডের প্রথম উইকেট হারানোর পর খেলাটা ধরে নিয়েছেন হেনরি নিকোলস এবং ক্য়াপ্টেন কেন। সপ্তম ওভারে প্রথম উইকেট হারিয়েছিল কিউয়িরা। ক্রিস ওকসের বলে ওপেনার মার্টিন গাপটিল (১৮ বলে ১৯) আউট হয়ে যান। সেই ধাক্কা সামলে দিয়ে দুরন্ত ছন্দে ব্য়াট করছিলেন কেন আর নিকোলস। কিন্তু এই দুই ব্য়াটসম্য়ানকেই প্য়াভিলিয়নের রাস্তা দেখান লিয়াম প্লাংকেট। ৫৩ বলে ৩০ রান করে প্লাংকেটের বলে জস বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন কেন। এরপর নিকোলস ক্লিন বোল্ড হয়ে যান। ৭৭ বল খেলে ৫৫ রানে থামতে হয় তাঁকে।

এদিন আউট হওয়ার আগে কেন কিংবদন্তি শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট মাহেলা জয়বর্ধনেকে টপকে  একক বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি রান করা অধিনায়ক হয়ে গেলেন। এরপর ক্রিজে ছিলেন টম ল্যাথাম ও রস টেলর। কিন্তু কিউয়ি দলের অন্য়তম স্টার ব্য়াটসম্য়ান টেলরও এদিন বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারলেন না। মার্ক উডের বলে ১৫ রানে এলবিডব্লিউ হতে হয় তাঁকে। এরপর জিমি নিশামকেও ফেরালেন প্লাংকেট। ২৫ বলে ১৯ রান আসে তাঁর ব্য়াট থেকে। এরপর কলিন ডে গ্রান্ডহোম কিছুটা রান করার চেষ্টা করেন। ২৮ বলে ১৬ রান করে ফেরেন তিনি। কিন্তু এরপর আর লোয়ার অর্ডারের কোনও ব্য়াটসম্য়ানই ক্রিজে বেশিক্ষণ সময় কাটাতে পারেননি। মিচেল স্য়ান্টনার নট আউট (৫) থাকলেন ঠিকই। ম্য়াট হেনরি (৪) ও ট্রেন্ট বোল্ট (১) দ্রুত ফেরেন প্য়াভিলিয়নে। নির্ধারিত ওভারে নিউজিল্য়ান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪১ রান তুলতে সমর্থ হয়।

টার্গেট ২৪২। রান তাড়া করতে নেমে ৪৪ ওভারে ১৮৯ রান তুলল ইংল্যান্ড। এদিন জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ওপেন করতে নেমে জেসন রয় ২০ বলে ১৭ করে আউট হয়ে যান। ম্য়াট হেনরির বলে রয় ক্য়াচ তুলে দেন টম ল্য়াথামের হাতে। প্রথম উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ইংল্য়ান্ডকে বেয়ারস্টো আর জো রুট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুই ওভারের মধ্য়েই ব্য়াক-টু-ব্য়াক এই দুই ব্য়াটসম্য়ানকে প্য়াভিলিয়নের রাস্তা দেখান কিউয়ি বোলাররা। গ্রান্ডহোমের বলে ল্য়াথামের হাতে ক্য়াচ হয়ে যান রুট। মাত্র ৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন তিনি। এরপর লকি ফার্গুসনের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান বেয়ারস্টো (৫৫ বলে ৩৬)। তারপর ক্রিজে মর্গ্য়ানের সঙ্গে ছিলেন বেন স্টোকস। মর্গ্য়ানকে ফিরিয়ে দেন জিমি নিশাম। অসাধারণ একটি ক্য়াচ নেন ফার্গুসন। এখান থেকে স্টোকস আর জস বাটলারের ফিফটি প্লাস পার্টনারশিপে জয়ের গন্ধ পেতে থাকে ইংরেজরা। কিন্তু বাটলার (৬০ বলে ৫৯) ফিরে যাওয়ার পর কিউয়িরা ম্য়াচে ড্রাইভারের সিটে চলে আসে। একের পর এক উইকেট হারিয়ে এক সময় ম্য়াচ থেকে প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু একটা প্রান্ত ধরে রাখেন স্টোকস। ৯৮ বলে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ম্য়াচটাকে টাই করেন। অমীমাংসিত ম্য়াচের ভাগ্য় গড়ায় সুপার ওভারে।

৬ বলের ভাগ্য নির্ধারককারী ম্য়াচে নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে ব্য়াটে করা দলকে আগে ফিল্ডিং করতে হয়। ইংল্য়ান্ড প্রথমে ব্য়াট করে। বেন স্টোকস আর জস বাটলার নামেন ব্য়াট করতে। ট্রেন্ট বোল্টের বলে ইংল্য়ান্ডের ওপেনিং জুটি ১৫ রান তোলে। এর মধ্য়ে স্টোকস করেন ৮ রান, বাটলার যোগ করেন আরও ৭। বিশ্বজয়ের জন্য় ইংল্য়ান্ডের টার্গেট হয় ১৬। নিউজিল্য়ান্ডের হয়ে রান তাড়া করতে নামেন জিমি নিশাম ও মার্টিন গাপটিল। জোফ্রা আর্চারের ওভারটা ওয়াইড দিয়ে শুরু করেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি রীতিমতো চাপে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের পরিহাসে সুপার ওভারে টাই হয়ে যায়। এরপর ম্য়াচে বেশি চার মারার বিচারে ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ইংল্যান্ডের ইনিংসে মোট ২৬টি ও নিউজিল্য়ান্ডের ইনিংসে ১৭টি চার আসে।

বিশ্বকাপ ফাইনালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন। ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ডকে ফিল্ডিংয়ের আমন্ত্রণ জানান তিনি।এদিন টসের পর কেন উইলিয়ামসন বলেছিলেন,আমরা আগে ব্য়াট করছি। এই পিচে প্রথমে ব্য়াট করতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ দেশে কিছুটা দ্বন্দে পড়ে যাই। ফলে এটা কঠিন সিদ্ধান্ত বটেই। আমাদের দলে কোনও পরিবর্তন নেই। সেমিফাইনাল ম্যাচটা দু'দলের জন্য়ই কঠিন ছিল। কিন্তু ভাল লাগছে ফাইনালে আসতে পেরে। মার্টিন গাপটিলকে আমরা সবসময় সমর্থন করেছি। ওকে আমরা স্বাধীনতা দিয়েছি গিয়ে মন খুলে ব্য়াট করার জন্য়। হৃদয় দিয়ে লড়াই করে আমরা আজ এই জায়গায় এসেছি। ২০১৫-র ফাইনাল থেকে অনেককিছুই আলাদা। কিন্তু অতীতের যে কোনও অভিজ্ঞতাই আমাদের ইতিবাচক শিক্ষা দেয়। এটা অন্য দিন। যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। জেতার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। তবে আমরা সবার আগে ভাল ক্রিকেট খেলতে চাই।

ম্যাচের লাইভ আপডেট জানুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে

অন্য়দিকে মর্গ্যান জানিয়েছিলেন, "টস হেরে একেবারেই হতাশ নই। এটা ফিফটি-ফিফটি কল ছিল। লর্ডসের মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ সবসময় বোলারদের সাহায্য় করে। আজ যে দল ভাল খেলবে তারাই ট্রফি জিতবে। ফর্মে থাকা নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। জনি পুরো ফিট। আমাদের দলও অপরিবর্তিত। এজবাস্টনে আমাদের বোলিং ছিল সবথেকে শক্তিশালী দিক। প্রথম দশ ওভারেই সুযোগ তৈরি করে নিতে পেরেছিলাম। আজকেও যদি ঠিকঠাক জায়গায় বল রাখতে পারি, তাহলে সুযোগ থাকবে। দলের জন্য় অত্যন্ত গর্বিত আমি। প্রত্যেকেই কঠোর পরিশ্রম করে আজ পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ইংলিশ ক্রিকেটকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছি। গোটা টুর্নামেন্টেই সেটা বজায় রেখেছি।

ইংল্য়ান্ড দল: জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, ইয়ন মর্গ্য়ান (ক্য়াপ্টেন), বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকস, লিয়াম প্লানকেট, জোফ্রা আর্চার, আদিল রশিদ ও মার্ক উড

নিউজিল্য়ান্ড দল: মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস, কেন উইলিয়ামসন (ক্য়াপ্টেন), রস টেলর, টম ল্য়াথাম, জেমস নিশাম, কলিন ডে গ্রান্ডহোম, মিচেল স্যান্টনার, ম্য়াট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট ও লকি ফার্গুসন।

Advertisment
England New Zealand Cricket World Cup
Advertisment