কোয়েস জমানায় ইস্টবেঙ্গলের সিইও ছিলেন। আদ্যন্ত লাল হলুদ সমর্থক। কোয়েস জমানা খতম হয়েছে লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে ইস্টবেঙ্গল এবং কোয়েসের সঙ্গে পেশাদারি সম্পর্কও। তবে সঞ্জিত সেন এখনও একনিষ্ঠ ফুটবল ভক্ত। ফুটবল-প্রেমের সেই তাগিদেই এবার ভারতীয় ফুটবলে কার্যত বিপ্লব এনে ফেলেছেন তিনি।
সমমনস্ক ফুটবল উৎসাহীদের সঙ্গে গড়ে ফেলেছেন ইউএক্সেল স্পোর্টস ভেঞ্চার্স। তৃণমূল স্তরে ফুটবল প্রসারের জন্য যে সংস্থা হাত মিলিয়েছে কেশব উমা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সঙ্গে। যৌথ যে উদ্যোগে ইতিমধ্যেই ফুটবল উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে পাঁচলার গঙ্গাধরপুর এলাকায় আবাসিক এবং অ-আবাসিক ট্রেনিং সেন্টার চালু হয়ে গিয়েছে। টিডি এবং প্রধান পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছে ময়দানের বিখ্যাত শঙ্করলাল চক্রবর্তীকে।
তৃণমূল স্তরে এরকম উদ্যোগ তো আকছারই হয়েছে। সঞ্জিত সেনের মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ আলাদা অন্য ক্ষেত্রে। ইউএক্সেল স্পোর্টস গাঁটছড়া বেঁধেছে নরওয়ের বিখ্যাত টেক সংস্থা জিপিএম এএস-এর সঙ্গে। আধুনিক ফুটবল পাঠে উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ অনস্বীকার্য। সেই লক্ষ্যেই টেক জায়ান্টের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সঞ্জিত সেনের ফুটবল সংস্থা।
আরও পড়ুন: চার আনা নিয়ে নববর্ষে ক্লাবে ঢুকতেন ধীরেন দে! বারপুজোর রেওয়াজে স্মৃতিমেদুর ময়দান
চমক এখানেই শেষ হয় ইউএক্সেল স্পোর্টসের উদ্যোগে সামিল হয়েছে নরওয়ের প্রিমিয়ার ডিভিশনের বিখ্যাত ক্লাব ভাইকিং এফকে। আটবার নরওয়ের প্রিমিয়ার লিগ এবং ছয়বার নরওয়েজিয়ান কাপ জেতা ভাইকিং এফকে নরওয়ের অন্যতম সেরা ক্লাব। চেন্নাইয়িন এফসির তারকা লালরিনজুয়ালা ছাংতেও যে ক্লাবে ট্রায়াল দিতে গিয়েছেন। রয় হজসনের মত বিখ্যাত কোচের প্রাক্তন ক্লাবের স্বজ গাঁটছড়া বাঁধা ভারতের তৃণমূল ফুটবল স্তরে কার্যত মাস্টারস্ট্রোক।
সঞ্জিত সেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "গঙ্গাধরপুরে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক সন্তোষ কুমার দাস মহাশয়ের স্থাপিত KUCT ফুটবল একাডেমি সেট আপ ছিলই। সেটাকেই ফুটবল এক্সিলেন্স সেন্টার হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। জিপিএম এএফ-এর সঙ্গে ভাইকিংয়ের নিজস্ব যোগাযোগ রয়েছে। জিপিএম সিইও বোরে নিয়েলসন এবং ভাইকিং এফএ-র তৎকালীন সিইও এইরিক হেনিংসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিল। তারপরেই এই চুক্তি। নরওয়ের যুব ফুটবল দলের বর্তমান সহকারী কোচ আন্ডার্স সায়েরভোল্ড এখনকার টেকনিক্যাল টিম এবং টিডি শঙ্করলালের সঙ্গে কোঅর্ডিনেশন করে ট্রেনিং ক্যাম্পের কাজ করছেন।"
ফুটবলার তুলে আনার দায়িত্বে শঙ্করলাল (ছবি: সঞ্জিত সেন)
শুধু নরওয়ের বিখ্যাত ক্লাবই নয়, ইউরোপের একাধিক নামিদামি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে ইউএক্সেল। একাধিক ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। আর যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করছেন সায়েরভোল্ড। শিক্ষার্থী ফুটবলারদের নিয়ে ট্রেনিংয়ের সুযোগ মিলতে পারে ইউরোপে। নরওয়ে শীতকালীন দেশ। তাই সেকথা বিবেচনা করে ট্রেনিংয়ের জন্য উঠতি ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া হতে পারে স্পেন অথবা জার্মানিতে।
আরও পড়ুন: মোহনবাগান নামের আগে ATK, ক্লাবের আবেগে আঘাত! সহ-সভাপতি হয়েই সোচ্চার কুনাল
শঙ্করলাল চক্রবর্তী এমন উদ্যোগে রীতিমত উচ্ছ্বসিত। কোচ অজয় আচার্য এবং শাহিদ আনসারির সঙ্গে নতুন ভূমিকায় সবুজ মেরুনের প্রাক্তন বস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি বললেন, "পুরো ট্রেনিং মডিউলই বিদেশের ধাঁচে বানানো হয়েছে। বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী, ট্রেনিং মডিউল সেট করা হয়েছে। ভাইকিংয়ের তরফে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রেনিংয়ের মডিউল দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, কোচের সঙ্গে কো অর্ডিনেশন করে ট্রেনিং করানো হয়। পুরোপুরি বিদেশি ধাঁচের এমন ট্রেনিং মেথড ভারতীয় ফুটবলে বিরল।"
সঞ্জিত-শঙ্করলালের যুগলবন্দি শুরুতেই যে সুপারহিট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।