মিঠুন ভৌমিক
২০০৪ সালের বেইজিং। ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ (আদতে জোসেফ) ব্লাটার এশিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ফুটবল এক্সপোতে ভাষণ দিতে উঠে বললেন ফুটবলের আদিমতম রূপটি সুদূর অতীতে (খ্রিষ্ট পূর্ব ২০৬) চিনে জন্ম নেয়, পরে ডালপালা মেলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়ায়। ত্সু চু নামের এই খেলাটির সঙ্গে আধুনিক ফুটবলের বেশ খানিকটা মিল আছে। গোলপোস্ট হিসেবে ব্যবহার করা হত দুটো বাঁশের মাঝে টাঙানো একটি সিল্কের চাদর। সেই চাদরের মধ্যেকার ফাঁক দিয়ে গলিয়ে দিতে হতো সেলাই করা চামড়ার বল।
হান সম্রাটদের আমলে খুব রমরম করে চলার পর একসময় রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে ত্সু চু'ও জনপ্রিয়তা হারায়। সাম্রাজ্যবাদের নিয়মই হল শাসন কায়েম ও বাণিজ্য। এইভাবেই, সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে চিনের বিস্তার আদিম ফুটবলকে নিয়ে যায় জাপানে (স্থানীয় নাম "কিমেরি")। ৬০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ যখন কিমেরি'র প্রতিবেদন লিপিবদ্ধ হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে তার নিয়ম আদিম চৈনিক খেলাটির থেকে আলাদা, সেখানে একদল লোক বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে বলকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখছে। ত্সু চু ও কিমেরি, আশ্চর্যজনকভাবে আধুনিক ফুটবল কোচিংয়ে প্রাসঙ্গিক। গোলপোস্টের থেকে আকারে অনেক ছোট লক্ষ্য স্থির করে ক্রমাগত বল মেরে যাওয়া শ্যুটিং বা পাসিং অনুশীলনে আকছার দেখা যায়, যা অবিকল ত্সু চু খেলার গোল দেওয়ার মত। অন্যদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে পায়ে-মাথায়-ঘাড়ে বল নাচিয়ে যাওয়া চেনা বল-কন্ট্রোলের অনুশীলন। আবার মেসোআমেরিকান "বল গেম", যেখানে হাত ছাড়া শরীরের নানা অঙ্গই ব্যবহার করা যেত, সেখানেও নিয়ম ছিল বল মাটিতে পড়বেনা। এমনিতে বল গেমের ঐতিহ্য বহু পুরনো, প্রায় ১৪০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের আশেপাশে এই খেলার শুরু, কিন্তু সেই সময়ে এর যা রূপ তাকে ফুটবল বলা যায়না। মায়া, আজটেক দুই সভ্যতাতেই এই খেলার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যুদ্ধ, ধর্মীয় আচার, বিনোদন - সর্বত্র কেন্দ্রীয় জায়গা নিত এই বলগেম। একেবারে শুরুতে হাত, পা এমনকি পাথরের তৈরি র্যাকেটের মত একটা জিনিস ব্যবহার করা হত বলেও জানা গেছে।
আরও পড়ুন, ফুটবলই পারে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিতে: সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়
কলম্বাস আমেরিকা থেকে স্পেনে ফেরার সময় সঙ্গে নিয়ে যান মেসোআমেরিকান রাবার বল। তখনও রাবার এখনকার মত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েনি। এশিয়ার পালক ভরা চামড়ার বলের থেকে এই রাবার বল অনেক বেশি লাফাত, খেলা হত প্রচণ্ড গতিময়, খেলোয়াড় ও দর্শক দুইপক্ষেরই উন্মাদনার সীমা থাকত না। সম্ভবত এই কারণেই মেসোআমেরিকান সভ্যতার একেবারে গোড়া থেকেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে এই বল গেম। মিথোলজিতেও প্রবলভাবে উপস্থিতি এই খেলা, যা স্রেফ খেলা নয়, এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্যের এক অপরিহার্য অংশ। যেখানে চাঁদ ও সূর্যের উৎপত্তি হচ্ছে মর মানুষের সঙ্গে অজেয় দেবতাদের খেলাকে কেন্দ্র করে। কাজেই পৃথিবীর অন্যান্য ফুটবলপ্রেমী সভ্যতাগুলির থেকে মেসোআমেরিকান ফুটবল সংস্কৃতি খুবই আলাদা। চিনে যখন ত্সু চু জনপ্রিয় ছিলো, তখনও তা সবথেকে জনপ্রিয় খেলা ছিল না। রোমান সেনেটাররা বল নিয়ে একধরণের লোফালুফি খেলায় উৎসাহী ছিলেন, বলা বাহুল্য, তার সঙ্গে জনপ্রিয়তায় গ্ল্যাডিয়েটরের যুদ্ধের কোন তুলনাই হয়না। মেসোআমেরিকায় এক নম্বর খেলা, শুরু থেকেই বল গেম।
আধুনিক ফুটবলের অন্যতম প্রধান ময়দান ইওরোপেও বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের বল গেম চালু ছিলো। মিনোয়ান সংস্কৃতিতে, রোমানদের মধ্যে, আরো পরে কেল্টিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই ধরনের বিভিন্ন খেলার বিবরণ পাওয়া যায়। নবম শতাব্দীতে জনপ্রিয় হয় এরকমই একটি রূপ, যেখানে হাত, পা এবং হকি স্টিকের মত একধরনের লাঠি দিয়ে খেলা চলতো। অনেকে একে রাগবির পূর্বসূরী মনে করেন। আরও পরে এই খেলা ধর্মীয় আচারগুলির সাথে জড়িয়ে যায়। মনে রাখতে হবে ইওরোপে ততদিনে খ্রিষ্টধর্মের আধিপত্য সম্পূর্ণ হয়েছে। ধর্মীয় পরবের দিনগুলিতে একধরণের "মব ফুটবল" খেলা হতে থাকে। গোলপোস্ট হিসেবে ব্যবহার হতে শুরু হয় চার্চগুলো। কতজন এক এক দলে খেলবেন তার কোন সীমারেখা থাকেনা। ১৩১৪ নাগাদ , দ্বিতীয় এডোয়ার্ডের সময়ের এক বিবরণ থেকে জানা যাচ্ছে এরকমই এক খেলাকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। দাঙ্গার জন্য ঐ সময়ের বহু শাসক রীতিমত ফরমান জারি করে ঐ মব গেম নিষিদ্ধ করেছিলেন। এইসব ঘটনা সত্ত্বেও, এইসব বল গেম কোন সভ্যতাতেই খুব একটা কল্কে পায়নি। শিকার, ঘোড়দৌড় বা এইধরনের খেলাগুলোই বেশি জনপ্রিয় ছিলো। রোমে কোনও কলোসিয়ামে কোনও বল গেম খেলা হয়নি। অলিম্পিয়ায় বল গেমের কোন রূপের অস্তিত্ব নথিভুক্ত নেই। অভিজাত শ্রেণি, যাঁরা হয় বিলাসব্যসনে অথবা যুদ্ধে ব্যস্ত থাকতেন, তাঁদের কাছে ব্রাত্য ছিলো আধুনিক ফুটবলের পূর্বসূরী এইসব খেলাগুলো।
অবশ্য সময় পাল্টাবে। যে ইউরোপে একসময় ব্রাত্য ছিলো ফুটবল, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে আধুনিক ফুটবলের সূচনা হবে। প্রায় ছশো বছর পরে। ততদিনে নানা আভ্যন্তরীণ যুদ্ধবিগ্রহ ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ, অভিবাসন পেরিয়ে ক্রমশ জনসাধারণের খেলা হয়ে উঠছে ফুটবল। প্রসঙ্গত, ফুটবল কথাটা প্রথম পাওয়া যায় তৃতীয় এডোয়ার্ডের একটা ফরমানে, সেটা ১৪০৯ সাল। যদিও তখনো "হ্যান্ডলিং দ্য বল" নিষিদ্ধ নয়, কাজেই নিয়মকানুন খুব একটা পাল্টায়নি। আরো প্রায় পাঁচশো বছর এগিয়ে এসে দেখা যাচ্ছে, চতুর্থ এডওয়ার্ডের সময়ের সরকারি নিষেধাজ্ঞায় ফুটবলকে বিভিন্নরকম জুয়াখেলার সাথে একাসনে বসানো হয়েছে। সেটা ১৪৭৭ সাল। বলা হচ্ছে, সক্ষম পুরুষেরা যেন ধনুর্বিদ্যা বা সমতুল্য কোন অনুশীলনে অংশ নেয়, যাতে দেশের প্রতিরক্ষায় তারা শামিল হতে পারে। ১৪৫০ থেকে ১৬৫০ সালের মধ্যে ম্যানচেস্টার বা লিভারপুলের মত অধুনিক ফুটবলের তীর্থস্থানেও কখনো না কখনো অভিজাত শ্রেণি ফুটবল নিষিদ্ধ করেছিল বলে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এত নিষেধাজ্ঞা, নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও ফুটবল একসময়ে সর্বসাধারণের খেলা হয়ে ওঠে। যতই সময় গড়ায়, ও সেইসঙ্গে বলও পৃথিবীর বিভিন্ন ময়দানে, ততই স্থানীয় সংস্কৃতির মিশেলে খেলা হয়ে ওঠে মানুষের উত্থান পতনের প্রতিরূপ। জীবনের সঙ্গে তার মিল ধরা পড়তে থাকে অনবরত।
প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক এডুয়ার্ডো গ্যালিয়ানো একবার বলেছিলেন Tell me how you play and I will tell you who you are".
বস্তুত সমস্ত জনগোষ্ঠীর ফুটবলই তাদের নিজস্ব ইতিহাস, ভূগোল, জাতিসত্তার আয়না। যেভাবে লাতিন আমেরিকা ফুটবল খেলে তা ইউরোপের থেকে খুবই আলাদা। যেভাবে উত্তর আমেরিকা ফুটবল খেলে তা আফ্রিকার থেকে খুবই অন্যরকম। আবার এশিয়ার নিজস্ব জীবনদর্শন আছে, যা ধরা পড়তে বাধ্য তাদের ফুটবলবোধে। কিন্তু এ তো গেল বিশাল এক একটি মহাদেশের কথা। একই মহাদেশের বিভিন্ন শরিকের মধ্যেও কি পার্থক্য নেই? চীন ও জাপানের ফুটবল ম্যাচ দেখতে বসলে এটা যেমন বোঝা যায় যে দুটো আলাদা দেশের মানুষ, তাদের ইতিহাস সমেত ময়দানে অবতীর্ণ, তেমনি ইরানের খেলা দেখলে বোঝা যায় যে তারা পূর্বোক্ত দুটি এশিয় দেশের থেকে আলাদা ফুটবল সংস্কৃতি বহন করে।
আরও পড়ুন, উত্তর সত্য, সাংবাদিকতা এবং আমরা
এই ফুটবল সংস্কৃতির পার্থক্য সবথেকে ভালো বোঝার সুবিধে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেখানে নানা দেশের ছেলেমেয়েরা একত্র হয়েছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ এইদিক থেকে ফুটবল সংস্কৃতির "মেল্টিং পট"। বিশেষত উত্তর আমেরিকায় ইন্ডোর ও আউটডোর ফুটবল টুর্নামেন্টে যখন বিভিন্ন ফুটবল দর্শনের সংঘাত হয় তখন তা অতীব উৎসাহব্যঞ্জক উদাহরণ তৈরি করে। স্টিরিওটাইপ না করেও, স্রেফ পর্যবেক্ষণভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ আপনি করে ফেলতে পারবেন, যেখানে একদল ডিরেক্ট ফুটবল খেলবে, একদল খেলতে চাইবে পাস, একদল বেশি ড্রিবল করবে। কোনও দল হারা-জেতা নিয়ে মাথা ঘামাবে না, কোনও দল আবার জেতাটাই একমাত্র মোক্ষ ভাববে, অন্য কোনও দল হয়ত খুব দৃষ্টিনন্দন খেলাতেই আগ্রহী, ফলাফলে নয়। এইরকম সব নানা ফুটবলদর্শনের মেলবন্ধন বা সংঘাত হতে থাকে অপেশাদার, জনসাধারণের জন্য ফুটবলেও।
কিন্তু এসব তো অনেক পরের কথা। ইতিহাসের খেই ধরে আমরা ফিরে গিয়ে দেখি কীভাবে ফুটবলের সময় গড়াল অষ্টাদশ শতকের দিকে। একটা কথা মনে রাখা খুবই দরকারি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফুটবল বলতে বোঝাতো রাগবি ও ফুটবলের মাঝামাঝি একধরণের খেলা। কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল না, কারণ কোনও সংগঠন তৈরি হয়নি তখনও। জনসাধারণের মধ্যে, বিশেষত শ্রমিকদের মধ্যে এর প্রচলন বাড়ে কলকারখানায় কাজের সময়সীমা নির্ধারিত হয়ে যাবার পর, যখন দৈনিক কাজের সীমা বেঁধে দেওয়া হয় এবং শনিবার দুপুর দুটোয় ছুটি হয়ে যেতে শুরু করে। এর বাইরে স্কুল কলেজগুলোতে ফুটবল চালু ছিল, বস্তুত তাদেরই উদ্যোগে এর নিয়মাবলী লেখার কাজ শুরু হয়, শেফিল্ড ও লন্ডনের স্কুল দলগুলি এতে অংশ নিতে শুরু করে। যেহেতু ফুটবলে প্রচুর ধাক্কাধাক্কি, চোট-আঘাত ও প্রায়শই বড়ো ধরনের মারামারি হতো তাই অভিজাতরা সে সময়েও তেমনভাবে এ খেলায় আকৃষ্ট হয়নি। "শ্রমিক ও গ্রামের ছেলেদের খেলা" হিসেবে পরিচিত ফুটবল তখনও বস্তুত রাগবির মতই, যেখানে একদল ছেলে হাডল করে, পরস্পরকে আক্রমণ করে স্কোর করবে।
নিয়মকানুনের অভাব ও সেই সংক্রান্ত গোলমাল থামাতে ১৮৪৮ সালে ‘কেমব্রিজ রুলস’ তৈরি হলো। এই নিয়মাবলীতেও হ্যান্ডবল শাস্তিযোগ্য নয়, বরং অনুমোদিত, যদিও প্রধানত কিকিং এর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ১৮৭১ সালে, যখন রাগবি আর ফুটবল আলাদা হয়ে যাবে তার আগে অবধি এই নিয়মের কমবেশি তারতম্যই চালু থাকবে।
কিন্তু নিয়মের ইতিহাস বা রাগবি-ফুটবলের ঐতিহাসিক বিচ্ছেদে আমরা পরে কখনও ফিরে আসব। বরং দেখা যাক ইংল্যান্ডের বাইরে, অন্যত্র কী হচ্ছে সেই সময়ে। ঐ সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আফ্রিকার ফুটবল। আফ্রিকায় ফুটবল খেলা শুরু হয় ১৮৬২ সালে। বোঝাই যাচ্ছে তখনও তার রূপ পুরোনো ধাঁচের, রাগবি ফুটবল। এর পরপরই অবশ্য, ফুটবলের নিয়ম আলাদা হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ফুটবল প্রবলভাবে ছড়াবে আফ্রিকায়। ১৯০০ সালের মধ্যেই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে জোরকদমে শুরু হয়ে যাবে ফুটবল মিশরে, আলজেরিয়ায়, দক্ষিণ আফ্রিকায়। অচিরেই জনপ্রিয়তম খেলার শিরোপা জুটে যাবে।
শুধু আফ্রিকায় না, অন্যত্রও ফুটবলের জয়যাত্রা বিংশ শতাব্দী থেকে শুরু হয়ে আজও প্রবলভাবে জারি আছে। ২০০৬ সালে করা ফিফার সমীক্ষায় জানা গেছে প্রায় ২০০ টি দেশের ২৫ কোটি মানুষ ফুটবল খেলে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এক একটি ম্যাচের মোট দর্শকসংখ্যা অনায়াসে ৭১ কোটিতে পৌঁছে যায় (ইতলি বনাম ফ্রান্স, ২০০৬)।
আফ্রিকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফুটবল ঢুকে পড়ে ভারতেও। ১৮৫৪ সালে প্রথম ফুটবল ম্যাচ হয় ব্রিটিশ ভারতে, অংশগ্রহণ করে "ক্যালকাটা ক্লাব অফ সিভিলিয়ান্স" ও "দ্য জেন্টলমেন অফ ব্যারাকপোর"। ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় প্রথম ভারতীয় ফুটবল ক্লাব ক্যালকাটা এফসি (এটি প্রথমে রাগবি ক্লাব ছিলো, ১৮৯৪ সালে ফুটবল খেলতে শুরু করে)। ১৮৮৮ সালে শুরু হয় প্রথম ফুটবল টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপ। ডুরান্ড কাপ পৃথিবীর তৃতীয় প্রাচীনতম প্রতিযোগিতা (এফ এ কাপ এবং স্কটিশ এফ এ কাপের পরেই) । আই এফ এ গঠিত হয় ১৮৯৩ সালে, যদিও ১৯৩০ সাল অবধি সেখানে কোন ভারতীয় প্রতিনিধি ছিলোনা। ১৮৯১ সালে রোভার্স কাপ এবং এর পরপরই কলকাতায় আইএফএ শীল্ড এবং লীগ শুরু হয়। ১৮৯২ সালে শোভাবাজার ক্লাব প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে ইস্ট সারে রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে ট্রেডস কাপ ফাইনাল জিতে নেয়। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মোহনবাগান ১৯১১'র শীল্ড ফাইনালে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। ষাট হাজার দর্শক, যাদের অধিকাংশই মোহনবাগান সমর্থক, ক্রমাগত বন্দেমাতরম স্লোগান দিয়েছিলো সেই ম্যাচের নব্বই মিনিট। এইভাবে ফুটবলের চিরাচরিত আবেগ, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের মিশেল ঢুকে পড়লো ব্রিটিশ ভারতে। এক্ষেত্রে ফুটবল উপলক্ষ্য হলো জাতীয়তাবাদের। এই জাতীয়তাবাদী ঢেউয়ে ভর করেই শুরু ভারতীয় ফুটবলের যাকে স্বর্ণযুগ বলে মনে করা হয় সেই সময়ের, যা শিবদাস ভাদুড়ী থেকে গোষ্ঠ পাল হয়ে প্রদীপ ব্যানার্জি, চুনী গোস্বামী প্রমুখ তারকার জন্ম দেবে।