FIFA Football World Cup 2018, Brazil Vs Mexico: ব্রাজিল ২ (নেইমার ৫১', ফার্মিনো ৮৮'), মেক্সিকো ০
জাস্টিন টিম্বারলেকের 'কান্ট স্টপ দ্য ফিলিং' নাকি রিহানার 'দিস ইজ হোয়াট ইউ কেম ফর', লকার রুমে ঢুকে কোন গানটা বাজাবেন নেইমার? দেশকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তোলা নায়কের এখন পার্টি মুড। নেইমারের প্লে-লিস্টে এই দু'টো গান থাকেই, সঙ্গে তাঁর দেশের মিউজিক তো বটেই।
ডায়েটের তোয়াক্কা না-করে তাঁর পছন্দের ইতালিয়ান বা জাপানিজ খাবারই হয়তো চেয়ে নেবেন হোটেলের রুম-সার্ভিস থেকে পায়ে আইস-প্যাক দিয়ে। যদিও সামারা স্টেডিয়ামের ৪১ হাজার জোড়া চোখ দেখেছে, তিনি আজ একাই মেক্সিকো ভক্ষণ করে ব্রাজিলের 'অন আ হেক্সা মিশন' জিইয়ে রাখলেন, বলা ভালো তাতে যাবতীয় সম্ভাবনার রসদ জোগালেন।
এই নেইমারের ব্রাজিল আজ রেসের প্রথম সারির ঘোড়া। যার জন্য বাজি ধরতে পিছপা হবে না বুকিরাও। নেইমার-মার্সেলোদের হেড স্যার অঙ্কের প্রফেসরের মতোই নিখুঁত হিসেব নিকেশ করেই দলটার পরিচালনা করছেন। টোটাল ফুটবল, ক্লিনিক্যাল ফুটবল, এফেক্টিভ ফুটবলের মতো শব্দগুলো ঢুকিয়ে দিয়েছেন পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলটার শিরায়-উপশিরায়।
৪-৪-২ ছকের গেমপ্ল্যানে ফ্যাগনার, মিরান্ডা, সিলভার সঙ্গে রাখলেন ফিলিপ লুইসকে। চোট পাওয়া মার্সেলোকে নামানোর ঝুঁকি নিলেন না। মাঝমাঠে উইলিয়ান, পাউলিনহো, ক্যাসেমিরো, কুটিনহোকে রাখলেন ডাবল স্ট্রাইকার জেসাস-নেইমারের সাপ্লাই লাইন হিসেবে।
ব্রাজিল-মেক্সিকোর প্রথমার্ধের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের চিত্রটা এক ছিল ঠিকই। কিন্ত নেইমারদের পরাস্ত হতে হল 'দ্য গ্র্রেট মেক্সিকান ওয়ালে'। ২০১৪ হোক বা ২০১৮ বিশ্বকাপ, ঝাঁকড়া চুলের মেক্সিকান গোলকিপার প্রকৃত অর্থেই সেদেশের দুর্ভেদ্য দেওয়াল। এদিনও নিজের নামের সুবিচার করলেন ওচুয়া। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকল ব্রাজিলের গোলের সংখ্যাটা বাড়তেই পারত।
ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট খেলা সেলেকাওরা ১৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে মাঠে ফিরে বদলে গেল দ্বিতীয়ার্ধে। ভুল ত্রুটি ধুয়ে মুছে সাফ। নিষ্প্রভ উইলিয়ানও ছুটলেন কিলিয়ান এমবাপের গতিতে। ম্যাচের ৫১ মিনিটেই এল সেই ব্রাজিলিয়ান শিল্প। বক্সের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী জোগো বোনিতা। নেইমারের ব্যাকহিল উইলিয়ানকে। সেখান থেকে চোখের পলকে উইলিয়ানের কাটব্যাক নেইমারকে। তখন দর্শক ওচুয়াও। এরপর স্লাইড করলেন নেইমার-জেসুস। পিছনে আগুয়ান পাউলিনহোও। কিন্তু নেইমারের পা ছুঁয়ে চলে আসল ম্যাচের প্রথম গোল।
৮৮ মিনিটে ফের সেই নেইমার। যাকে বলে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল। হাফ-লাইনের একটু আগে থেকে বাঁ-প্রান্ত ধরে সোলো রান নিলেন। মেক্সিকান রক্ষণ তখন দিশাহীন। মাইনাস করলেন ফার্মিনোকে। ওচুয়ার হাত লাগল ঠিকই। কিন্তু তাতেও ফার্মিনোর বুটের ছোট ট্যাপে কোনও প্রভাব ফেলল না। বেজে গেল মেক্সিকোর বিদায়ঘণ্টা। নক-আউটের আগে মেক্সিকো বলেছিল, তারা অনেক দূর যাবে, কিন্তু আজকের মেক্সিকো ব্রাজিলকে চ্যালেঞ্জটাও ছুঁড়তে পারল না।
চারদিন পর কাজান এরিনায় নেইমাররা নামবেন সেমি ফাইনালের লড়াইয়ে। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে, ব্রাজিল কাদের জন্য অপেক্ষা করবে, বেলজিয়াম না জাপান। তবে এই ব্রাজিল স্বপ্ন দেখায়, ছ'নম্বর ট্রফির প্রতীক্ষা বাড়ায়।