জার্মানি ০
দক্ষিণ কোরিয়া ২ (ওয়াই কিম ৯২', এইচ সন ৯৬')
ফ্ল্যাশব্যাক: ১৪ জুলাই ২০১৪, ভেন্যু ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়াম। চলছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানি। ম্যাচের বয়স তখন ১১৩ মিনিট। ঝড়ের বেগে ডি-বক্সে ঢুকে গোল করে জার্মানিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করে দিলেন মারিও গোটজে। বাকিটা ইতিহাস। বার্লিনের দেওয়াল ভাঙা দেশ সাক্ষী থাকল রূপকথার।
কাট টু ২৭ জুন ২০১৮। কাজান এরিনাতে 'নাও অর নেভার' ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি সেই জার্মানি, যারা শুধু ২০১৪ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নই নয়, ভ্লাদিমির পুতিনের পৃথিবীর দীর্ঘতম ভূখণ্ড থেকে গতবছর কনফেডারেশন কাপ নিয়ে দেশে ফেরা 'ডাই ম্যানশ্যাফট'ও।
এদিনও সেই অতিরিক্ত সময়। কিন্তু এদিনের চিত্রনাট্যে জার্মানির জন্য মিরাকেল নয়, বিধাতা লিখলেন দম্ভচূর্ণ। ৯২ ও ৯৬ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার জোড়া মিসাইল উৎক্ষেপণে উড়ে গেল জার্মান ট্যাঙ্ক। ইতিহাসের গৌরব ভূলুণ্ঠিত বাস্তবের আকস্মিকতায়। লো কোম্পানির বিশ্বকাপ থেকে বিদায়। এই প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিল জার্মানরা। তারা কখনও গ্রুপ পর্যায়ে দু'ম্যাচ হারেনি। এবার শুরুতেই মেক্সিকোর কাছে হেরেছিল। দ্বিতীয় ম্যাচেই শুধু সুইডেনকে হারায়।
এদিন ম্যাচের ১৯ মিনিট থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জার্মানির পায়ের তলা থেকে ভূমি সরার সূত্রপাত। জুং উ ইয়ংয়ের ফ্রি-কিক আর একটু হলেই গোলে ঢুকে যাচ্ছিল। বল ফসকেও কোনও ভাবে বাঁচিয়ে দিলেন ম্যানুয়েল ন্যয়ার। বুঝিয়ে দিলেন গত বিশ্বকাপের সোনালি দস্তানার মালিক আজ শুধুই তাঁর ইতিহাসের ছায়া মাত্র। বিরতির আগে পর্যন্ত জার্মানি ৮০ শতাংশ বল পায়েই রাখল, গোলে নয়।
দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানির বেশ কয়েকটা অবধারিত গোল আটকে দিলেন ম্যাচের সেরা দক্ষিণ কোরিয়ান গোলরক্ষক। চো হিউন উ। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত এসবই ছিল ম্যাচের মুহূর্ত। নাটক আর চূড়ান্ত নাটক তোলা থাকল ম্যাচের অতিরিক্ত ১০ মিনিটের জন্য। কিম ইয়ংয়ের গোল ৯২ মিনিটের গোল বাতিল হয়ে গেল অফসাইডের ফাঁদে পড়ে। তখনও বাঁচার আশা দেখছে জার্মানি। কিন্তু ভিএআর আছে যে এবারের আসরে। প্রযুক্তির বিচারে ১-০ এগিয়ে গেল দক্ষিণ কোরিয়া। এখানেই শেষ হয়ে গেল জার্মানির রাশিয়া অভিযান। এরপর আরও নাটক। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় গোল ছেড়ে মরিয়া লড়াইয়ে নামলেন ন্যায়ার। খেলতে চলে এলেন ফরওয়ার্ডে। ফাঁকা গোলের হাতছানি বিপক্ষ দলে। হিউঙ মিন লম্বা পাস থেকে স্কোরলাইন ২-০ করলেন। কফিনে ঠুকলেন শেষ পেরেক।
রাশিয়ার স্পোর্টস ক্যাপিটাল বলেই পরিচিত এই কাজান। এখানেই বিখ্যাত হেরিটেজ সাইট কাজান ক্রেমলিন। ভোলগা ও কাজা নকা নদীর সংযোগস্থল এই শহর। জোয়াকিম লো যদি একাকী এই নদীতে চোখের জল ভাসান তাহলে তিনি সব হারানোর বেদনায় ডুববেন না। তিনি খুঁজবেন ফিলিপ লাম, মিরোস্লাভ ক্লোজে, বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার, লুকাস পোডলস্কিকে। একমাত্র লো জানেন তিনি কী হারিয়েছেন।
অন্যদিকে সুইডেন ৩-০ হারিয়েছে মেক্সিকোকে। দক্ষিন কোরিয়া পরের রাউন্ডে না-যেতে পারার সুবাদে মেক্সিকো ম্যাচ হেরেও নক-আউটে চলে গেল। সুইডেন গ্রুপ টেবিলের শীর্ষে থেকেই শেষ ১৬-তে গেল।