বৃহস্পতিবারের বিকেল। বৃষ্টিভেজা তিলোত্তমা। গোর্কি সদনের সভাঘর তখন যেন এক খণ্ড রাশিয়া। প্রাক-বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে সলতে পাকানোর কাজটা শুরু করল ইউথ গিল্ড ফর ফ্রেন্ডশিপ (সোসিও-কালচারাল অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ অর্গানাইজেশন)। শহরে ইন্দো-রুশ সংস্কৃতির মেলবন্ধনের কাজ করে এই সংগঠন। এবার বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন। থাকছে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনীও।
সংবাদ মাধ্যমের গুটিকয়েক প্রতিনিধি ও সংগঠনের কর্তাদের নিয়েই আলোচনা এগিয়ে চলল। ঘড়ির কাঁটা যখন সন্ধ্যা ছ’টা ছুঁইছুঁই, দেখা গেল এক রুশ সুন্দরী তাঁর স্মার্টফোন নিয়ে পরপর ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে শুরু করে দিয়েছেন। যদিও তিনি এ শহরের অতিথি নন। দশ দশটা বছর এখানে কাটিয়ে ফেলেছেন ইরিনা মালিশেভা। বেশ পরিচিত মুখ। এই মুহূর্তে রাশিয়ান সেন্টার অফ সায়েন্স অ্যান্ড কালচারের (গোর্কি সদন) সহকারি ডিরেক্টর পদে রয়েছেন তিনি। কলকাতায় বসে তাঁর চেয়ে ভাল রাশিয়ার আপডেট খুব কম মানুষই দিতে পারবেন। ঝকঝকে ইংরেজিতে কথা বলেন ইরিনা, অনান্য রাশিয়ানদের মতো নন।
এ সময়টা কলকাতায় থাকলেও তাঁর মন পড়ে রাশিয়াতেই। বলছেন, "রাশিয়া কিন্তু পুরোপুরি প্রস্তুত। একেবারে সাজ-সাজ রব। একেবারে উৎসবের মেজাজ। জানেন, রাশিয়ার রেড স্কোয়ারে একটা ঘড়ি রয়েছে সেখানে বিশ্বকাপের কাউন্টডাউন দেখাচ্ছে? আজ আমরাও এখানে বিশ্বকাপের দিন গোনা শুরু করে দিলাম। আর তো মোটে সাত দিন।”
কথার ফাঁকেই উঠে গিয়ে বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ম্যাসকট জাবিভাকার (Zabivaka) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি। জাবিভাকার মানেটাও তিনিই বলে দিলেন, "দ্য ওয়ান হু স্কোরস গোলস।" অর্থাৎ, একজন গোল স্কোরার। ইরিনাই জাবিভাকার ইতিহাসও শুনিয়ে দিলেন। বললেন, ইন্টারনেট ভোটের মাধ্যমেই ম্যাসকটের পশু হিসেবে নেকড়েকে (৫৩ শতাংশ ভোট) নির্বাচিত করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বিড়াল (২০ শতাংশ ভোট) এবং বাঘও (২৭ শতাংশ ভোট) ছিল।
এসবের মাঝেই অনুষ্ঠানের মাত্রাটা একটু অন্য়রকম করে দিলেন প্রাক্তন ফুটবলার ভুবন চট্টোপাধ্য়ায়। যদিও তিনি এদিন ফুটবলের কথা শোনালেন না। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের তে-কাঠির নিচে দাঁড়ানো মানুষটা অনেকদিন ধরেই গীতিকার, সুরকার ও গায়কের ভূমিকাতেই জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করেছেন। বেশ কয়েকটি অ্যলবামও রয়েছে তাঁর। এবার বিশ্বকাপের জন্যই বাংলা ও ইংরেজিতে গান বেঁধেছেন তিনি। 'অনেক দিনের আশা, ফুটবলের এই নেশা' এবং 'সি দিস ইজ ফিল্ড, ফুটবল ইজ আওয়ার ড্রিম' শোনালেন তিনি।
রাশিয়ার ফুটবলের কথা বললে অবশ্যই চলে আসবে সেদেশের কিংবদন্তি গোলকিপার লেভ ইয়াসিনের কথা। পিটার দ্য গ্রেট, লেলিন-স্তালিন, ম্যাক্সিম গোর্কির মতোই তিনিও রাশিয়ার মানুষের হৃদয়ে থেকে যাবেন চিরকাল। তাঁর এক একটা সেভ সোনায় লেখা থাকবে ফুটবলের ইতিহাসে। তাঁর ক্লাব ডায়নামো মস্কো ও লুজনিকি স্টেডিয়াম আজও মনে রাখে মানুষটাকে। ইয়াসিন এতটাই প্রাসঙ্গিক যে, কিছুদিন আগেই তাঁর সেভ করার ছবি দিয়ে ১০০ রুবলের নোট ও রাশিয়ান ডাকবিভাগ থেকে ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে।
কাজেই ইয়াসিনের কথা স্বভাবতই চলে এল গোর্কিতে। ভুবন বলছেন, "এখানেই লেভ ইয়াসিনের ৮০ তম জন্মদিন সাড়ম্বরে পালিত হয়েছিল। শিবাজি বন্দ্যোপাধ্য়ায়, অতনু ভট্টাচার্য, তরুণ বোস, প্রতাপ ঘোষ, সংগ্রাম মুখোপাধ্য়ায়ের মত গোলকিপাররা এসেছিলেন। আজও মনে আছে দিনটা। আমার লেখার উপরেই পুরো অনুষ্ঠানটা হয়েছিল।" বাকিদের মতো ভুবনও বললেন যে, ইয়াসিনই সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গোলকিপার।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে ইরিনা রাশিয়ান হয়েও বললেন, তাঁর দেশকে তিনি চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখছেন না। কারণ হিসেবে বললেন, "আমরা হকিতে খুব ভাল, কিন্তু ফুটবলে এখনও অত শক্তিশালী হইনি। আশা করছি গ্রুপ স্টেজের পরেও আমরা থাকব।" ইরিনার মতে, ব্রাজিল বা জার্মানিই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন।