ফ্রান্স ৪ (মান্দজুকিচ ১৮', (আত্মঘাতী), গ্রিজম্যান ৩৮', পোগবা ৫৯', এমবাপে ৬৫') | ক্রোয়েশিয়া ২ (পেরিসিচ ২৮', মান্দজুকিচ ৬৯')
রাশিয়ায় স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা থাকবেই ক্রোয়েশিয়ার। কিন্তু তারা এটা ভেবে স্বস্তিতে ঘুমোতে পারবে যে, বুক ফুলিয়ে মর্যাদার সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছে।
অন্যদিকে দিদিয়ের দেশোঁ দেখিয়ে দিলেন যে, দু'বছর আগে দেশের মাটিতে ইউরো কাপ ব্যর্থতা তাঁর চোয়াল কতটা শক্ত করে দিয়েছে। সেবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল তার শেষ হাসি কেড়ে নিয়েছিল। এবার দেশবাসীকে বিশ্বকাপটা দিয়েই জ্বালা মেটালেন তিনি।
রবিবাসরীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে মস্কোর লুঝনিকি দেখল ছ'গোলের থ্রিলার। দারুন লড়ল ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু সত্যি বলতে প্রকৃত চ্যাম্পিয়ন টিমই বিশ্বকাপে নাম লেখাল। ১৯৯৮-এর পর ফের চ্যাম্পিয়ন হল ফ্রান্স। বর্তমান ফরাসি কোচ ছিলেন ২০ বছর আগেকার বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স দলের সদস্য। সেবার ফুটবলার হিসেবে কাপ জিতেছিলেন। আর এবার কোচ হয়ে ট্রফি ছুঁলেন। ব্রাজিলের মারিও জাগালো, জার্মানির ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের পর দেশোঁ তৃতীয় ব্যক্তি যিনি কেরিয়ারে ফুটবলার এবং কোচ হিসেবে কাপ জিতলেন। ১৯৭০-এর ফাইনালে কোনও দল চার গোল দেয়নি। ১৯৭০-এ পেলের ব্রাজিল ৪-১ হারিয়েছিল ইতালিকে।
এদিন ১৮ মিনিটে অঘটনের গোলেই ফাইনালের খাতা খোলে ফ্রান্স। আঁটোয়া গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিক বক্সের মধ্যে হাতে লাগিয়ে নিজেদের গোলে ঢুকিয়ে দেন মারিও মান্দজুকিচ। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ফাইনাল ম্যাচে আত্মঘাতী গোল করলেন। গোলের ১০ মিনিটের মধ্যে ইভান পেরিসিচ সমতা ফেরালেন ম্যাচে। কিন্তু বিরতির আগে সেই ক্রোট ফুটবলারের দোষেই ফ্রান্স পেনাল্টি পায়। বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল হয়, সেটা রেফারির চোখ এড়িয়ে যায়। এরপর ফরাসি ফুটবলাররা ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার আবেদন জানান রেফারিকে। পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গ্রিজম্যান কোনও ভুল করলেন না। বল রাখলেন তে-কাঠিতেই। বিরতির আগে ফ্রান্স ২-১ গোলে এগিয়ে যায়।
১৯৩০-এ প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে বিরতিতে আর্জেন্টিনার কাছে পিছিয়ে থেকেও উরুগুয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ পারেনি এই হিসেব বদলাতে।
বিরতির পর আর ফ্রান্সকে আটকান যায়নি। ছ'মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে ফ্রান্সের কাপ নিশ্চিত করেন পল পোগবা (৬৯') ও কিলিয়ান এমবাপে (৬৫')। ৯৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্স ৩-০ গোলে জিতেছিল ব্রাজিলের বিরুদ্ধে। জিনেদিন জিদান দু'টি ও এমানুয়েল পেটি একটি গোল করেছিলেন। পেটির পর পোগবাই প্রথম প্রিমিয়র লিগের ফুটবলার যিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল পেলেন।
এদিন শেষ গোলটি ক্রোয়েশিয়াকে এক কথায় উপহার দিল ফ্রান্স। হুগো লরিস বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে মান্দজুকিচের পায়েই সাজিয়ে দেন। বলাই বাহুল্য বলটা গোলের ঠিকানায় পৌঁছে যায়।
এক মাস ব্যাপী ফুটবলের বিশ্বজোড়া উন্মাদনা শেষ হল এবারের মতো। ফের চার বছরের অপেক্ষা। ২০২২ বিশ্বকাপ বসছে কাতারে। বিশ্বকাপ বিদায়বেলায় বলতেই পারে, 'উইথ লাভ ফ্রম রাশিয়া'।