সোশ্যাল মিডিয়ায় যার সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়, ইনবক্সে মাঝে মাঝেই গল্প গুজব, তেমন কাউকে সকালবেলা ভোরের রাশিয়ার ছবি পোস্ট করতে দেখলে ভিরমি খেয়েছেন? ভাবছেন, বাই উঠলে তো কটক যাওয়ার কথা ছিল, বাঙালি রাশিয়া পৌঁছে গেল কী করে! কী করে গেল? প্লেনের ভাড়া কত? ম্যাচের টিকিটের দামই বা কী? এসবের একটাই উত্তর। পরিকল্পনা। হুজুগ বলতে পারেন, তবে আপনাকেও মানতে হবে, এ হুজুগ পরিকল্পিত।
বিশ্বকাপের উন্মাদনা রাশিয়ায় এবার বিশ্বকাপ দেখতে গিয়েছিলেন গুজরাটপ্রবাসী বাঙালি ব্যাঙ্ক অফিসার প্রণব রায়। রাশিয়া যাওয়া নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে প্রথমেই বলে উঠলেন, ‘ভেরি এক্সপেনসিভ’। তিনি দেখেছেন মোট চারটি ম্যাচ। বলা ভাল, দেখতে পেরেছেন। তার বেশি পেরে ওঠেননি। এক তো রাশিয়ার ভৌগোলিক বিস্তার। বিশাল দেশ হওয়ার কারণে এক শহর থেকে আরেক শহরের দূরত্ব অতিক্রম করাই বিশাল ব্যাপার। দ্বিতীয়ত টিকিট। টিকিটের ন্যূনতম দাম প্রায় বারো হাজার টাকা। প্রণবকে এ হুজুগে মাতিয়েছিলেন তাঁর ছেলেবেলার এক বন্ধু। তবে হুজুগ হলেও তা তাৎক্ষণিক ছিল না। গত বছর জুন থেকে শুরু হয়েছিল পরিকল্পনা। প্রণববাবু জানালেন, এ একটা অভিজ্ঞতা। সে অভিজ্ঞতা শুধু ফুটবলজনিত নয়। সারা পৃথিবীর মানুষ জড়ো হচ্ছেন, সুদূর পানামা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া থেকে মানুষ আসছেন, কেউ জাহাজ চালিয়ে, কেউ বিমানে চেপে, ফুটবলের নামে এই হয়ে ওঠা উৎসবে যোগদান করতে- তার শরিক হতে পারাটাই একটা গোটা জীবন দেখে ফেলার শামিল।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির মনোবিদ্যা বিভাগের অতিথি অধ্যাপক অমিতাভ সেনগুপ্তের রাশিয়া যাওয়া অবশ্য অনেকটাই পূর্বপরিকল্পিত। দু বছর আগে থেকে পরিকল্পনা করেছেন তাঁর মতো আরও কিছু ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে। আগে ফ্রান্সে ইউরো কাপও দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। এবার airbnb সংস্থার সহযোগিতায় আগে থেকে টিকিট কেটে, ঘর ভাড়া করে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন চাল-ডাল-তেল। রান্না করছেন নিজেরাই। ফিফা ফ্যান আই ডি-র মাধ্যমে বাকি ব্যবস্থা হয়েছে। অমিতাভ জানালেন, তীর্থের কাকের মতো রাত জেগে বসেছিলেন তাঁরা। টিকিট ওপেন হওয়া মাত্র ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন কম্পিউটার স্ক্রিনে।
অমিতাভর সুপরিকল্পিত ও সফল রাশিয়া গমনের খরচপাতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রায় লাখ খানেক টাকা লাগছে তাঁর। ARBNB-র মাধ্যমে ঘর ভাড়া করেছেন তিনি। জানালেন, রাউন্ড অফ সিকসটিনের খেলা দেখতে গেলে ২২ হাজার ভারতীয় মুদ্রা খরচ করতে হচ্ছে। আর প্রণববাবুর এবারের হুজুগের অভিজ্ঞতা তাঁকে টেনে নিয়ে যাবে আগামী ওলিম্পকে। পরিকল্পনা শুরু করেছেন তিনি। তবে মাঝবয়সী প্রণবের নিজস্ব টিপস্, এরকম পরিকল্পনায় পরিবার নয়, সঙ্গী করা উচিত প্রাণের বন্ধুদের।
ফলে ২০২২-এর কাতারের জন্য যাঁরা মুখিয়ে আছেন, তাঁরা প্রস্তুত হোন। কাতার কিন্তু ঘরের বেশ কাছে।