জনপ্রিয়তা, গোলসংখ্যা বা তারকা খ্যাতি নয়, জার্মানি ফুটবল দলে জায়গা পেতে গেলে যেটা দরকার তা হল টিম স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী সেই প্লেয়ারের গ্রহণযোগ্যতা। এই হিসেবেই প্রিমিয়র লিগ জয়ী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড দলের সদস্য এবং এবছরের 'পিএফএ ইয়ং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার' খেতাবজয়ী লিরয় সেনেরও জার্মানির এবছরের বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই হয়নি।
জোয়াকিম লো'র ৪-২-৩-১ ছকে প্রতিটি পজিশনের প্লেয়ারের জন্য নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। সে কারণেই প্রয়োজনমত ছক বদলে ২-৪-৩-১ বা ৪-৪-১-১ এ খেলার সময়ও জার্মানি দলের খেলোয়াড় বদল হয় না বললেই চলে। লো'র এই স্ট্র্যাটেজিই জার্মানিকে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিল।
জার্মানির দুজন সেন্টার-ব্যাকের ভূমিকা পরস্পরের থেকে আলাদা। এঁদের মধ্যে একজন বেশিক্ষণ বল ধরে রাখতে সক্ষম, আর অন্যজন বল নিয়ে আক্রমণে যেতে পারদর্শী। এই পজিশনের দুই প্লেয়ার জেরোম বোটাং এবং ম্যাট হামেলসের মধ্যে হামেলস বল পাসিংয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ।
জার্মানির দুজন উইং-ব্যাক হিসাবে লো'র পছন্দ এমন খেলোয়াড় যাঁরা মাঠ জুড়ে খেলার পাশাপাশি প্রয়োজনে ট্যাকলও করতে পারেন। জার্মানির প্রাক্তন ক্যাপ্টেন ফিলিপ লাম এই পজিশনে অনবদ্য খেলে গত বিশ্বকাপে ট্রফি এনে দেওয়া সত্ত্বেও কোচ এবার তাঁর জায়গায় বেছে নিয়েছেন বেয়ার্ন মিউনিখের জশুয়া কিমিচকে।
এই পজিশনে খেলা আরেকজন খেলোয়াড় লেফট-ব্যাক জোনাস হেক্টর। জোয়াকিম লো স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী প্লেয়ার বাছার উপর কতটা জোর দেন তা বোঝা যায় হেক্টরের নির্বাচন দেখলে। হেক্টরের টিম গত মরশুমে অবনমনের আওতায় পড়া সত্ত্বেও তাঁকে বেছে নিতে দ্বিধা করেননি লো।
জার্মানি দলের দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে লো বেছে নিয়েছেন সামি খেদিরা এবং টনি ক্রুজকে। গত বিশ্বকাপে টনির পজিশনে খেলা বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার প্রয়োজনে ডিফেন্স থেকে উঠে এসে দারুণ কিছু পাস বাড়িয়েছিলেন। আর খেদিরা সবসময় থেকেছেন সেন্টার ব্যাকের ঠিক ওপরে। প্রয়োজনে মাঝমাঠে উঠেও এসেছেন তিনি।
তবে ক্রুজ এবং অনবদ্য অ্যাটাকিং ক্ষমতার দরুণ খেদিরাকে অন্য পজিশনেও তুলে আনতে পারেন কোচ। সেক্ষেত্রে লো'র এই পজিশনের জন্য পছন্দ হবেন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ইল্কে গুন্ডোয়ান এবং লিওন গোরেস্কাকে।
আরও পড়ুন- FIFA World Cup 2018: আর বাকি পাঁচ দিন, দেখুন সেরা পাঁচ মিডফিল্ডার কারা
এরপর তিনজন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের মধ্যে জোয়াকিম লো-র প্রথম পছন্দ জার্মানির ১০-নম্বর জার্সিধারী মেসুট ওজিলকে। ওজিল ২০১০-এর বিশ্বকাপ থেকেই স্ট্রাইকারের ঠিক পিছনের এই পজিশনে খেলে আসছেন। অন্য দুজন মিডফিল্ডার হিসাবে জার্মানি দলে খেলেন মার্কো রয়েস এবং টমাস ম্যুলার। প্রয়োজনে অ্যাটাকিং ফুটবল খেলবার পাশাপাশি এই দুজনই রক্ষণাত্মক ফুটবলার হিসাবেও যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। দল চাপে পড়লেই ৪-৪-১-১ ছকে খেলবার সময় এই দুজন খেলোয়াড় নেমে আসেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে।
বায়ার লিভারকুসেন দলের জুলিয়ান ব্র্যান্ড এবং পিএসজি'র জুলিয়ান ড্র্যাক্সলারও বেশ স্বচ্ছন্দ এই দুই ভূমিকায়। সেনকে দলে নেওয়া হলে হয়ত তিনিও এই পজিশনে স্বচ্ছন্দে খেলতে পারতেন। কিন্তু ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার হিসাবে পরিচিত এই তারকা খেলোয়াড় ডিফেন্সে খেলতে হয়ত স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না।
জার্মানি দলের একমাত্র স্ট্রাইকার পোজিশনে কে খেলবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে জার্মানির প্রতিটি বিশ্বকাপ দলেই একজন তারকা স্ট্রাইকার খেলেন। এই তালিকায় রয়েছেন হেলমুট রান, ম্যাক্স মোর্লক, উয়্যে সিলার, র্যুডি ভয়লার থেকে শুরু করে জেরার্ড মুলার, জুর্গেন ক্লিন্সম্যান এবং মিরাক্লোভ ক্লোজের মত তারকাদের নামও। মিরাক্লোভ ক্লোজের পর এই পজিশনে খেলার জন্য সেরকম বিশ্বাসযোগ্য কেউ নেই।
আরও পড়ুন- FIFA World Cup 2018: গোর্কি সদনে ফুটবল ফিয়েস্তা, সৌজন্যে মিলি দ্রুগ
লো'র ঘোষণা অনুযায়ী ৩১ বছর বয়সী মারিও গোমেজকে এই পজিশনে রাখা হলেও আর্ন্তজাতিক ফুটবলে তিনি ততটা ধারাবাহিক নন। জাতীয় দলের হয়ে তিনি এখনও অবধি খেলেছেন মাত্র ৩১টি ম্যাচ। গোমেজ ছাড়া এই পজিশনে খেলতে পারেন যুবতারকা টিমো ওয়ার্নার। আরবি লিপজিগ দলের এই স্ট্রাইকারের গোলের কাছে অবিশ্বাস্য দক্ষতার দরুন তাঁর সঙ্গে প্রায়ই ক্লোজের তুলনা টানা হয়।
ওয়ার্নার গতবছর কনফেডারেশন কাপে তিনটি গোল করে ছিনিয়ে আনেন গোল্ডেন বুট খেতাব। ক্লোজের ১১-নম্বর জার্সি পরে তিনি ১৩টি ম্যাচে মোট ৭টি গোল করলেও তাঁর চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনও হয়ে ওঠেনি। এবছর বিশ্বকাপে তিনি কি পারবেন লো'র বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কেবল সময়ই।