আর্জেন্টিনা: ২ (মেসি, ফার্নান্দেজ)
মেক্সিকো: ০
হারলেই বিদায়। বিশ্বকাপ স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটত টুর্নামেন্ট এক সপ্তাহ না গড়াতেই। সৌদির কাছে হারের পর ডু অর ডাই ম্যাচে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়েছিল মেক্সিকোর বিরুদ্ধে। আর সেই ম্যাচেই আবার নীল-সাদা জার্সির ত্রাতা হয়ে উঠলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। স্বপ্নের গোল করলেন। দাপটে খেললেন। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ২-০ জিতে নকআউটে যাওয়ার রাস্তা এখনও খুলে রাখল আর্জেন্টিনা। মেসির সঙ্গেই দ্বিতীয়ার্ধে গোল এল হার্নান্দেজের পা থেকে।
তার আগে পোল্যান্ড সৌদি আরবকে হারিয়ে দেওয়ায় কিছুটা চাপেই ম্যাচ শুরু করেছিল আর্জেন্টিনা। তবে ত্রাতা মেসি দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি ২০ গজ দূর থেকে লো শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন। তারপরে এনজো ফার্নান্দেজের রকেট শট হেভিওয়েট মেক্সিকোকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়।
কাতারই কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। আগেই জানিয়ে দিয়েছেন মেসি। প্ৰথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান নিজের শেষ বিশ্বকাপেই। আর মেক্সিকো ম্যাচে রূপকথার গোল করে মহাতারকা ছুঁয়ে ফেললেন স্বয়ং দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনাকে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে গোল সংখ্যার নিরিখে। মেসি এবং ম্যারাডোনা দুই কিংবদন্তিরই বিশ্বকাপ গোলসংখ্যা আট। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মেসি এবং ম্যারাডোনা দুজনেই আট গোল করেছেন ২১টি বিশ্বকাপের ম্যাচে খেলে। ঘটনাচক্রে মারাদোনার দ্বিতীয় প্রয়াণ বার্ষিকীর একদিন পরেই এল মেসির তাঁকে স্পর্শ করার বিশ্ব নজির।
আর্জেন্টিনার সম্ভাব্য বিদায়ের ম্যাচে প্রথমার্ধে তুমুল টেনশন। আইকনিক লুসেইল স্টেডিয়ামে দুই দলের দর্শকরাই দুর্ধর্ষ আবহ তৈরি করেছিলেন। ১৯৯৪-এ রোজ বোল স্টেডিয়ামে ফাইনালের (৯৪,১৯৪) পর মেক্সিকো-আর্জেন্টিনা ম্যাচেই (৮৮,৯৬৬) সবথেকে বেশি দর্শক হাজির হয়েছিলেন বিশ্বকাপের কোনও গ্যালারিতে। প্রথমার্ধে দুই দলই সতর্ক ভঙ্গিতে শুরু করেন। ফলে গোলের দেখা মেলেনি।
মেক্সিকোর হাই প্রেসিং ফুটবলের সামনে আর্জেন্টিনা সেভাবে আক্রমণ শানাতে পারছিল না। মাঝমাঠের জটলায় আটকে পড়ছিলেন মেসিও। বিরতির আগে মেসি এবং লাউতারো মার্টিনেজের একটি প্রচেষ্টা ছাড়া বলার মত কিছু নেই আর্জেন্টাইন ফুটবলের।
আরও পড়ুন: রূপকথার জয়েও নকআউট নিশ্চিত নয়! শেষ ১৬-য় পৌঁছতে এখনও কী কী করতে হবে আর্জেন্টিনাকে
তবে মেক্সিকো ম্যাচের সবথেকে বড়সড় ধাক্কার সম্মুখীন হয় বিরতির ঠিক আগেই। মাঝমাঠের জেনারেল অধিনায়ক আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তা সত্ত্বেও মেক্সিকো এরপরেও দু-বার গোল করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। প্ৰথমে আলেক্সিস ভেগার বাঁকানো ফ্রিকিক বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্টাইন কিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তারপরেই ভেগার গোলার মত শট উড়ে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
আরও পড়ুন: এই স্পেশ্যাল বুটেই আর্জেন্টিনাকে স্বপ্নের জয় মেসির! সোনালি বুটের রহস্য জানলে মাথা নুইবে সম্মানে
দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমার্ধের জড়তা কাটিয়ে আক্রমণে আরও জোর বাড়ান স্কালোনির ছেলেরা। তারপরেই মেসির রূপকথার গোলে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে আলবিসিলেস্তে ব্রিগেডের। মেসির গোলে এসিস্ট এল ডি মারিয়ার পা থেকে। যিনি এই নিয়ে কেরিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপে খেলছেন।
গোলের পর রক্ষণ মজবুত করার জন্য আর্জেন্টাইন কোচ ডি মারিয়াকে তুলে নামিয়ে দেন ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোকে। পাল্টা মেক্সিকো কোচ এক ডিফেন্ডারকে তুলে ফরোয়ার্ড রাউল জিমেনেজকে নামিয়ে দেন। তবে শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনাই। পরিবর্ত হিসাবে নামা এনজো ফার্নান্দেজের ৮৭ মিনিটের গোলে জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।