আর্জেন্টিনা: ২ (ম্যাক এলিস্টার, আলভারেজ)
পোল্যান্ড: ০
মেক্সিকো: ২ (মার্টিন, চ্যাভেজ)
সৌদি আরব: ১ (আল দাসেরি)
রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ। একসঙ্গে দুটো। জোড়া রোমাঞ্চকর ম্যাচে বিশ্বকাপের থ্রিলার দেখল বুধবারের রাত। মেক্সিকোর কাছে হিসাব স্পষ্ট ছিল। সৌদির বিরুদ্ধে তিন গোল দরকার ছিল তাদের। আর্জেন্তিনাকে বধ করা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে নেমেছিল মেক্সিকো। অন্যদিকে, মেসিকে রোখার চ্যালেঞ্জ ছিল পোল্যান্ডের কাছে।
আর্জেন্টিনার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে জোড়া গোলে ব্যবধানে হারল পোল্যান্ড। মেসিদের পজেশনভিত্তিক ফুটবলে কার্যত পাত্তাই পেল না লেওয়ানডস্কিরা। গোটা ম্যাচেও আর্জেন্টিনার গোলমুখে একটাও শট নিতে পারল না পোলিশরা। তা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনার কাছে হেরে গোল পার্থক্যে শেষ ষোলোর জায়গা নিশ্চিত করে ফেলল পোল্যান্ড। আর্জেন্টিনার পর গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে।
আরও পড়ুন: অতীত Man U, এশিয়ার এই ক্লাবে সই করছেন রোনাল্ডো! বিশ্বকাপের মঞ্চেই বিরাট আপডেট প্রকাশ্যে
একদিকে পোল্যান্ড বনাম আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে, সৌদি আরব বনাম মেক্সিকো। দুই ম্যাচে প্রতি মিনিট গড়ানোর সঙ্গেই চার দলের হিসাব-নিকেশ কষা চলছিল মাঠের লড়াইয়ের সঙ্গে সমান্তরালভাবে। পোল্যান্ড ধরাশায়ী হল হেভিওয়েট আর্জেন্টিনার সামনে। অন্যদিকে, ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেল মেক্সিকো। সৌদির বিরুদ্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও তৃতীয় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে লড়াই চালাল মেক্সিক্যানরা। তবে শেষ লগ্নে গোল হজম করে বসে সমস্ত স্বপ্নের অপমৃত্যু হয় মেক্সিকোর।
আরও পড়ুন: পরিচিত নীল-সাদা নয়, পোল্যান্ড ম্যাচে বেগুনি জার্সিতে কেন মেসিরা, ম্যাচের পরেই রহস্য ফাঁস
অন্য গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন-রানার্স কার্যত নিশ্চিত। তবে গ্রুপ সি নিয়েই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। হাফটাইমে দুই ম্যাচই গোলশূন্যভাবে শেষ হওয়ায় তুঙ্গে উঠেছিল কৌতুহল। তবে দুই ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে হল পাঁচ-পাঁচটা গোল। জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। হেরেও গোল পার্থক্যে মেক্সিকোকে টেক্কা দিয়ে শেষ ষোলোয় পোল্যান্ড।
মাস্ট উইন ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে আবার পেনাল্টি মিস করে বসেন লিওনেল মেসি। ৩৯ মিনিটে গোলকিপার সেজেনি তাঁকে ফাউল করেন। সেই পেনাল্টি শট পোলিশ গোলকিপার আটকে দেন অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায়। তার আগে আর্জেন্টিনা গোটা ম্যাচ জুড়েই কার্যত ছিঁড়ে খেল পোল্যান্ডকে। আক্রমণের পর আক্রমণ। গঞ্জালেজ, মেসি, ডি পল, ডি মারিয়াদের আক্রমণের স্রোতে খেই হারিয়ে ফেলেছিল পোল্যান্ড। তবুও বিরতি পর্যন্ত আর্জেন্টিনা গোলের দেখা পায়নি, তার নেপথ্যে পোলিশ গোলকিপার সেজেনি।
আরও পড়ুন: বাগান কোচের হাতেই তৈরি রিচার্লিসন সহ তিতের ৫ সুপারস্টার! বিশ্বকাপেই সবুজ-মেরুনের ব্রাজিল কানেকশন
অন্য ম্যাচে সেই একই দাপট নিয়ে মাঠে নেমেছিল মেক্সিকো। বারবার গোলমুখী শটে সৌদির নাভিশ্বাস তুলছিলেন রাউল জিমেনেজরা। হাই লাইন ট্যাকটিক্সে হার্ভে রেনার্দের সৌদির গলা চেপে ধরছিল মেক্সিকো। প্রথমার্ধে সৌদির গোলে দশ-দশটা শট নিয়েছিল মেক্সিকো। কোনও শট বাঁচালেন গোলকিপার। কোনও শট বিপন্মুক্ত করলেন সৌদি রক্ষণভাগের ফুটবলাররা।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার ওর থেকেই নাটকীয়ভাবে পট পরিবর্তন। বিরতির পর বাঁশি বাজার পরেই আর্জেন্টিনাকে লিড এনে দেন ম্যাকএলিস্টার। একইভাবে মেক্সিকোর হয়ে সৌদির বিপক্ষে ১-০ করে যান হেনরি মার্টিন।
এল ত্রি-রা ম্যাচের রাশ এরপরে পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় ৫২ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে। বাঁ পায়ের ফ্রিকিক ধরে গোল করে যান লুইস চ্যাভেজ। এমন অবস্থায় আরও একটা গোল মেক্সিকোকে পরের রাউন্ডে নিয়ে যেতে পারত।
আর্জেন্টিনার হয়ে পোল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার কাজ করে যান জুলিয়ান আলভারেজ। আর্জেন্টিনা দু-গোল করে দেওয়ার পরে মেক্সিকোর দরকার ছিল আর একটা গোল। তবে তা হয়নি। একদম শেষ দিকে মেক্সিকোর সমস্ত আশায় জল ঢেলে সৌদি একমাত্র গোল করে যায় আল দাসেরির মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: মাঠেই লুটিয়ে মৃত্যু ফুটবলারের! বিশ্বকাপের সময়েই ভয়াবহ দুঃসংবাদে ছারখার দুনিয়া
এমনিতেই মেক্সিকোকে বিশ্বকাপে তাদের সমর্থককুল খুব বেশি আশা করেনি। বিশ্বকাপে খেলতে আসার আগে পোল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করেছিল। এবং আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিল। তবে সৌদির বিরুদ্ধে শেষ ৪০ মিনিটের মরিয়া লড়াই দেখিয়ে দিল ভবিষ্যতে সমর্থকদের অনেক গর্বের মুহূর্ত উপহার দিতে পারে মেক্সিকো। ৫৬ এবং ৮৬ মিনিটে জোড়া গোল অফসাইডের জন্য বাতিল না হলে হয়ত আর্জেন্টিনার সঙ্গেই শেষ ষোলোর বিমানে উঠে পড়ত মেক্সিকো।