সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে ঝড় হয়ে ফিফার সিদ্ধান্ত নেমে আসতে পারে আর্জেন্টিনার ওপর। বিশ্বের সেরা তারকা লিওনেল আন্দ্রেস মেসিকে ছাড়াই খেলতে নামতে হতে পারে আলবিসিলেস্তেদের। এমনই সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। বিতর্কিত নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পর আর্জেন্টিনার বিশৃঙ্খলা খতিয়ে দেখার বার্তা দিয়েছিল ফিফা। নীল-সাদা জার্সিধারীদের কী শাস্তি দেবে ফিফা তা এখনও ফিফার তরফে জানানো হয়নি।
তবে সেই ম্যাচের জন্যই এবার এক ম্যাচ সাসপেন্ড হতে পারেন স্বয়ং মেসি। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বেনজিরভাবে মাথা গরম করতে দেখা গিয়েছিল আর্জেন্টিনীয় ক্যাপ্টেনকে। উত্তেজনার আবহে দুই দলের ফুটবলাররা মাঠে একাধিকবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। গোটা ম্যাচে দুই দলের ফুটবলার , সাপোর্ট স্টাফ মিলিয়ে ১৭ জনকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ম্যাচে এতজনকে কার্ড দেখানোর নজির আর নেই।
আরও পড়ুন: হাত মেলাতে গিয়ে মেসির কাছে অসম্মানিত! ডাচ তারকা বিষ্ফোরকভাবে জানালেন ঝামেলার জন্য দায়ী কে
সেই ম্যাচের রেফারি লাহুজ তো বটেই ডাচ কোচ ভ্যান গাল, জোড়া গোলে ডাচদের নায়ক ওয়েগহর্স্ট সকলেই ম্যাচের পর মেসির তোপের মুখে পড়েছিলেন।
আগুনে টাইব্রেকার পর্ব শেষের পরেই দুই দলের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে বারবার আবেগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছিলেন দুই দলের ফুটবলাররা। আর সেই ঘটনার রেশ রয়ে গিয়েছিল অনেকক্ষণ।
আরও পড়ুন: সেমিতে নামার আগেই চরম দুঃসংবাদ আর্জেন্টিনার! মেসিদের ভয়ঙ্কর শাস্তি দিতে মাঠে নামছে ফিফা
ম্যাচের পরেই মেসি টিওয়াইসি স্পোর্টসকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সেই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ম্যাচের শেষলগ্নে আর্জেন্টিনার নেমেসিস হয়ে ওঠা ওয়াট ওয়েঘর্স্ট। মেসি ডাচদের ওপর এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে সঙ্গেসঙ্গেই বেসিকতাসের স্ট্রাইকারকে বলে দেন, “ওহে বোকা, এদিকে কী দেখছ? যাও, ভাগো।” মেসি বিষ্ফোরকভাবে সাক্ষাৎকারে বলে দেন, গোটা ম্যাচে তাঁকে কখনই সম্মান দেয়নি নেদারল্যান্ডস। এমনকি ডাচ কোচ লুই ভ্যান গাল-ও তাঁকে অসম্মান প্রদর্শনে পিছপা হননি।
ভ্যান গাল-কে সেই সাক্ষাৎকারে একহাত নিয়ে মহাতারকা মেসি বলে দেন, “ম্যাচের আগে কথা বলা একদম পছন্দ করি না। উনি যতবার খেলায় ঢুকেছেন বারবার আমাদের প্ররোচনা করে গিয়েছেন, ধাক্কাধাক্কি করেছেন। অনেক কথা শুনিয়েছেন। এগুলো মোটেই ফুটবলের অংশ নয়। আমি সকলকে সবসময় শ্রদ্ধার চোখে দেখি। ওঁরাও যদি এরকম সম্মান দেয়, সেটা ভালো লাগবে। ওঁদের কোচ মোটেই আমাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। আমাদের অনৈতিকভাবে আক্রান্ত হতে হচ্ছিল। ভ্যান গাল বরাবর বলেন, উনি সবাইকে ফুটবলের নৈতিকতার পাঠ দেন। তারপরে লম্বা ফুটবলারদের মাঠে নামিয়ে মারামারি করতে পাঠান।”
আরও পড়ুন: এদিকে কী দেখছ, বোকা কোথাকার! ডাচদের অসভ্যতায় ক্ষেপে লাল মেসিও, ম্যাচের পরেই তুলকালাম
ম্যাচের পরে স্প্যানিশ রেফারিকেও একহাত নেন মেসি। বলে দেন, এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচের দায়িত্ব নেওয়ার মত যথেষ্ট যোগ্যতা নেই লাহুজের, “রেফারিকে নিয়ে একদম কথা বলতে পছন্দ করি না। কারণ ওঁরা পরে প্রতিশোধ নেয়। সবসময় সৎ থাকা সম্ভব হয়না। তবে ফিফার এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তার করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের মত এরকম ম্যাচে এমন একজন রেফারিকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত হয়নি।”
আরও পড়ুন: মেসিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন, সেই রেফারিকেই লাল কার্ড দেখাল ফিফা
আগুনে মেসির অভিযোগের পরেই রেফারি লাহুজকে সরিয়ে দিয়েছে ফিফা। এমনটাই জানা গিয়েছে। তবে আর্জেন্টিনীয়দের শাস্তির কথা এখনও ঘোষণা করেনি ফিফা। সাধারণত, অভিযোগ ওঠার সময় থেকে পরের ম্যাচে খেলতে নামার আগেই ফিফা শাস্তির বয়ান দেয়। মেসি মাঠে এবং রেফারির খুল্লামখুল্লা সমালোচনা করে শৃংখলাভঙ্গ করেছেন, এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে, এক ম্যাচের শাস্তি জুটতে পারে মহাতারকার। সেক্ষেত্রে মেসিকে ছাড়াই হয়ত নামতে হতে পারে আর্জেন্টিনাকে। ফিফার রায় কী হতে চলেছে, সেদিকেই আপাতত নজর গোটা বিশ্বের।