গত কয়েক সপ্তাহে মাঠের পারফরম্যান্সের জন্য নয়, মাঠের বাইরের কারণের জন্য বারবার সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। শেষ ষোলোয় সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬-১ গোলে দুমড়ে মুচড়ে দেওয়া জয় এল রোনাল্ডোকে ছাড়াই। মহাতারকাকে বাইরে বসার দুঃসাহস দেখিয়েই দল সাজিয়েছিলেন পর্তুগালের কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস।
আর রোনাল্ডোকে বাইরে বসিয়ে দেওয়া মোটেই মেনে নিতে পারেননি সুপারস্টারের।বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ। ম্যাচের পরেই জর্জিনা আক্রমণ করে বসলেন স্বয়ং পর্তুগালের ম্যানেজার ফার্নান্দো স্যান্টোসকে। মহাতারকার বান্ধবী ইন্সটা-পোস্টে লিখে দিলেন, "জয়ের জন্য পর্তুগালকে শুভেচ্ছা। এগারো জন প্লেয়ার যখন মাঠে জাতীয় সঙ্গীত গাইছিল, সেই সময় সকলের নজর ছিল তোমার দিকে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে মাঠে নব্বই মিনিট দেখতে না পাওয়াটা লজ্জার বিষয়।"
আরও পড়ুন: রোনাল্ডো বাদ পড়তেই বিশ্বকাপের প্ৰথম হ্যাটট্রিক, ৬ গোলের বন্যা বইয়ে শেষ ৮-এ পর্তুগাল
তিনি এরপরে শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে আরও লেখেন, "এতেই সমর্থকদের তোমার নাম ধরে চিৎকার করা আটকে রাখা যায়নি। ঈশ্বর এবং তোমার বন্ধু ফার্নান্দো কৃপা করে আরও একবার আমাদের আনন্দ দিক।"
পর্তুগাল ৪-১ গোলের লিড নেওয়ার পরেই লুসেইল-এ দর্শকদের 'রোনাল্ডো, রোনাল্ডো' চিৎকারে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। আর সেই হর্ষধ্বনি শেষ পর্যন্ত কোচ স্যান্টোসকে ব্যঙ্গ করায় পর্যবসিত হয় রোনাল্ডোকে মাঠে না নামানোয়। আর দর্শকদের চিৎকার শুনে ডাগ-আউটে ভাবলেশহীন মুখে বসেছিলেন মহাতারকা। আর ৭২ মিনিটে রোনাল্ডো পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নামতেই দর্শকদের উচ্ছ্বাস বাঁধনহারা হয়ে দাঁড়ায়। মাঠে নামার আগেই পেপে অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড পরিয়ে দেন দলের একনম্বর তারকাকে।
ম্যাচের পরে রোনাল্ডোও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন ইনস্টাগ্রামে, "দুর্ধর্ষ একটা দিন গেল পর্তুগালের। ফুটবলের বৃহত্তম মঞ্চে ঐতিহাসিক ফলাফল হল। প্রতিভায় ছড়াছড়ি একটা দলের আভিজাত্যপূর্ণ খেলা দেখা গেল। জাতীয় দলকে শুভেচ্ছা। স্বপ্ন এখনও জীবিত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত। কাম অন পর্তুগাল।"
আরও পড়ুন: টাইব্রেকারের থ্রিলারে মরক্কোর কাছে স্বপ্নভঙ্গ স্পেনের, চোখের জলে বিশ্বকাপ শেষ মোরাতাদের
তাৎপর্যপূর্ণভাবে ম্যাচে নামার আগে রোনাল্ডো সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুপ্রেরণামূলক পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি বলেছেন, "আজকের দিনটা পর্তুগালের, পর্তুগিজদের, আমাদের সকলের। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে যে স্বপ্ন রয়েছে, সেই সব স্বপ্নের দিন আজকেই। সবকিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি, চলো।"
এদিকে, রোনাল্ডোকে বাদ দিলেও মহাতারকার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আগের মতই অটুট। বলে দিচ্ছেন কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোস। "আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভীষণ গভীর। স্পোর্টিং-এ ওর যখন ১৮ বছর বয়স, তখনই থেকেই ওঁকে চিনি। তারপরে জাতীয় দলের জন্য ওঁকে ভাবা হল। ২০১৪-য় আমি জাতীয় দলের কোচ হলাম। রোনাল্ডো এবং আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় ফুটবলার-ম্যানেজার এই সম্পর্ক থেকে পৃথক থেকেছে। আমি বরাবর বিশ্বাস করি রোনাল্ডো জাতীয় দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য।"
বিশ্বকাপে রোনাল্ডোর অভিযান শুরু হয়েছিল ঘানার বিরুদ্ধে গোল করে। পাঁচটি আলাদা আলাদা ফুটবল সংস্করণে গোল করার একমাত্র নজিরও গড়েন তিনি। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে সেভাবে ছাপ ফেলতে পারেননি মহাতারকা। এরপরে একাধিক ঘটনার জেরে তাঁর ফোকাস নড়ে গিয়েছে বলে অনেকের ধারণা।