Advertisment

অন্ডকোষ আঁকড়ে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি বিশ্বকাপে! কদর্য রাজনীতিতে ভয়াবহ বিতর্ক কাতারের মাঠে

বিশ্বকাপে বেনজির বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন দুই সুইস তারকা

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
NULL

চলতি বিশ্বকাপ থেকে রাজনৈতিক ছোঁয়াচ দূরে রাখা যায়নি। ইরানের হিজাব বিতর্ক যেমন দূরে সরিয়ে রাখা যায়নি, তেমন ইরান-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক শৈত্য আছড়ে পড়েছে বিশ্বকাপের ময়দানে। এবার ইউরোপের বলকান রাজনীতি স্পর্শ করল বিশ্বকাপের চত্ত্বর। সুইজারল্যান্ড বনাম সার্বিয়া ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সুইস তারকা গ্রানিট জাকাকে দেখা যায় সার্বিয়া ডাগ-আউটের উদ্দেশ্যে নিজের অন্ডকোষ আঁকড়ে ধরে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করছেন। এতেই আলবানিয়ান-কসোবো রাজনীতি তুঙ্গে উঠেছে।

Advertisment

মাঠে কোনও টেনশনের কথা জাকা ম্যাচের পরে অস্বীকার করলেও তাঁর এমন অঙ্গভঙ্গি মোটেই ভুলে যাওয়ার নয়। একইভাবে সার্বিয়ান দর্শকরা ব্যঙ্গ করছিলেন জারদান শাকিরিকে। গোল করে সেই দর্শকদেরই মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করে থাকার বার্তা দিলেন। নিজের জার্সির দিকে আঙুলও দেখালেন 'আলপাইন মেসি' শাকিরি।

আরও পড়ুন: ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগাল! বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় কোন দলের সামনে কোন দল

এই প্ৰথমবার রাজনীতি খেলার মাঠে টেনে আনলেন না শাকিরি। ২০১৮-য় রাশিয়া বিশ্বকাপে ঈগল স্যালুট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন শাকিরি, জাকা। আলবানিয়ান পতাকার কালো ঈগলকে ব্যঙ্গ করে সেই স্যালুট ঠুকেছিলেন দুজনে।

বলকান অঞ্চলের রাজনীতি বুঝতে হলে তাকাতে হবে ২০০৮-এর ১৭ ফেব্রুয়ারি। সেদিন কসোভো হঠাৎ করেই নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করে। সার্বিয়ান নিয়ন্ত্রণাধীন যুগোস্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পরে কসোভো স্বাধীন হয়। হঠাৎ করেই দেশটির জনগন টিভিতে দেখেন তাঁদের প্রধানমন্ত্রী হাসিম টাশি স্বাধীন ঘোষণা করার বার্তা দিচ্ছেন। রাজধানী প্রিস্টিনায় তারপরেই হুল্লোড় শুরু হয়। আনন্দের, উৎসবের। আতশবাজিতে ভরে ওঠে আকাশ। জনতা গাইতে থাকে, 'ও কসোভো, ও আমাদের মাতৃভূমি।'

আরও পড়ুন: ব্রাজিলের দর্প চূর্ণ করে জয় ক্যামেরুনের! ঘুম পাড়ানি ফুটবলে বিরক্ত করলেন সেলেকাওরা

বিশ্ব যদিও কসোভোকে এখনও স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারত, রাশিয়া, চীনের কাছে স্বীকৃতি না পেলেও কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের একশোর বেশি দেশ। যদিও কসোভো জাতিসংঘের সদস্য দেশ নয়। ফিফার তরফেও দেশটিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। সার্বিয়া নিজেদের অখন্ডতা ধরে রাখতে মরিয়া। এমন প্রেক্ষিতেই সার্বিয়ান দর্শকদের উদ্দেশ্যে শাকিরি, জাকাদের কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি।

আলবানিয়ান, ম্যাসিডোনিয়ারা অনেকেই কসোভোকে নিয়ে গর্বিত। সুইজারল্যান্ডের বেশ কয়েকজন ফুটবলারের শিকড় রয়েছে আলবানিয়ায়। জাকার বাবা ছিলেন একজন কসোভোর স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী। সার্বিয়ান সরকার জাকার বাবাকে জেলে ঢুকিয়ে অকথ্য অত্যাচার করেছিল। সাবেক যুগোস্লাভ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সাত বছর হাজতবাস করতে হয়েছিল জাকার বাবাকে। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে জাকার বাবা পরিবার সহ চলে আসেন সুইজারল্যান্ডে। জাকার দাদা টাউলন্ত এখনও আলবেনিয়ার জাতীয় দলে খেলেন।

শাকিরির গল্পটা আলাদা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই শাকিরির পরিবার সুইজারল্যান্ডে চলে আসে। তাঁর বাবা এক রেস্তোরাঁয় ধোঁয়া-মোছার কাজ করতেন। শাকিরি নিজেও এক অফিসের বহুতলে সাফাই কর্মীর কাজে লিপ্ত ছিলেন। তাঁর মা অফিসের সাফাইকর্মী ছিলেন। শাকিরির সঙ্গে তাঁর ভাই মাকে সাহায্য করতেন। ২০১২-য় সুইজারল্যান্ড বনাম আলবেনিয়া ম্যাচের আগে শাকিরি নিজের বুটে সুইজারল্যান্ড, আলবেনিয়া এবং কসোভোর পতাকা নামিয়ে খেলতে নেমেছিলেন। যাঁর চূড়ান্ত সমালোচনা করে সার্বিয়ার তারকা আলেকজান্ডার মিত্রোভিচ পাল্টা দেন। বলে দেন, কসোভোর প্রতি যদি এতই ভালোবাসা তাহলে সুইজারল্যান্ড ছেড়ে কসোভোর হয়ে খেলছেন না কেন তিনি!

সবমিলিয়ে জাকা, শাকিরির কাণ্ডে বিশ্বকাপের মঞ্চে যে তুঙ্গে বলকান রাজনীতি তাতে সন্দেহ নেই।

FIFA World Cup. Football FIFA World Cup Switzerland Qatar World Cup 2022 Serbia
Advertisment