আর্জেন্টিনা: ৩ (মেসি, আলভারেজ-২)
ক্রোয়েশিয়া: ০
২০১৮-র অপমান ভুলতে পারেননি লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। গ্রুপ পর্বে নীল-সাদা জার্সিধারীদের হেনস্তা করেছিলেন সাদা-লাল সৈনিকরা। রাশিয়ার বদলা আর্জেন্টিনা নিল বুধবারের কাতারে। সেই একই প্রতিপক্ষকে একই ব্যবধানে চূর্ণ করে। ক্রোয়েশিয়াকে প্রতিশোধের আগুনে পুড়িয়ে মারল আর্জেন্টিনা। ২০১৮-র বদলা নিয়ে জয় এল সেই ৩-০ ব্যবধানেই।
লড়াই ছিল দুই এলএম১০-এর। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ছিল এল ক্ল্যাসিকোর ছোঁয়া। সেই লড়াইয়েই লুকা মদ্রিচ ধ্বংস হয়ে গেলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসির প্রতিহিংসার আগুনে। নিজে গোল করলেন। দলের আগামীর সুপারস্টারকে দিয়ে গোল করালেন। ফাইনালে পৌঁছেই গেল আর্জেন্টিনা।
আরও পড়ুন: হাত মেলাতে গিয়ে মেসির কাছে অসম্মানিত! ডাচ তারকা বিষ্ফোরকভাবে জানালেন ঝামেলার জন্য দায়ী কে
এই নিয়ে পঞ্চমবার ফাইনালে পৌঁছল আলবিসিলেস্তে ব্রিগেড। মেসির জন্যই যেন রাত জাগা। কাতারের লুসেইল স্টেডিয়ামে ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায় ছিল ফুটবল জনতা। তাঁদের হতাশ করলেন না মহানায়ক। ৩৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে এগিয়ে দিলেন। তারপরে ফুটবলের অন্যতম সেরা এসিস্ট করলেন তৃতীয় গলদ ক্ষেত্রে। যে এসিস্ট দেখার জন্য বহু রাত জাগা যায়। বহু পথ পাড়ি দেওয়া যায়।
আর মেসির নিয়মিত অতিমানবিক পারফরম্যান্সের মঞ্চেই নতুন তারকার সন্ধান পেয়ে গেল আর্জেন্টিনা। হুলিয়ান আলভারেজ। গ্রুপ পর্বেই ভরসা জুগিয়েছিলেন ম্যান সিটির উঠতি প্রতিভা। আর সেমিফাইনাল মঞ্চ তাঁকে তারকার খ্যাতি দিয়ে গেল। মেসির পেনাল্টি ঘোরের রেশ কাটিয়ে ওঠার আগেই আলভারেজের ডাউন দ্যা মিডল রান। যাতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ক্রোটদের ডিফেন্স। ক্রোয়েশিয়ার তিন ডিফেন্ডারও দৌড়ে নাগাল পাননি আলভারেজের। তিনজনের নাকের ডগা থেকে সাড়া ফেলে দেওয়া গোলকিপার লিভাকোভিচকে টপকে বল জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি আলভারেজের।
আরও পড়ুন: এদিকে কী দেখছ, বোকা কোথাকার! ডাচদের অসভ্যতায় ক্ষেপে লাল মেসিও, ম্যাচের পরেই তুলকালাম
সোলো রানের অবিশ্বাস্য গোলের পরেই কার্যত ভেঙে যায় ক্রোয়েশিয়ার যাবতীয় প্রতিরোধ। তার আগে ৩৪ মিনিটে বক্সের মধ্যেই আলভারেজকে ফাউল করে বসেন ডমিনিক লিভাকোভিচ। সেই পেনাল্টি থেকেই আর্জেন্টিনার গোলের সূত্রপাত।
বিরতিতেই ০-২ গোল হজম করার পরে ক্রোয়েশিয়া দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ সাজাচ্ছিল। আর্জেন্টিনার বক্সে আসার আগেই অবশ্য সমস্ত মুভ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। বক্সে ক্লিনিক্যাল না হতে পাড়ার জন্যই আর্জেন্টিনীয় গোলকিপার এমি মার্টিনেজকে কার্যত কোনও পরিশ্রমই করতে হল না।
আর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি মেসির স্বপ্নের এসিস্ট মাঠের মধ্যেই হতাশায় ডুবিয়ে দেয় গতবারের ফাইনালিস্টদের।
আরও পড়ুন: মেসিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন, সেই রেফারিকেই লাল কার্ড দেখাল ফিফা
বিরতির আগেই মেসির সেই চিরচেনা ঝলক। সেই ড্রিবল। পিছনে চারজন ক্রোট ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে একদম বক্সের বাঁ দিক ঘেঁষে বল নিয়ে উঠলেন। বল কন্ট্রোল করলেন সেই মাস্টার জাগলারের মত। সময়-কাঁটা ঘুরিয়ে দিলেন যেন কয়েক বছর। যে ক্রোট ডিফেন্ডারকে নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে এবারের বিশ্বকাপে জসকো ভার্ডিওলকে মাটি ধরালেন। যেখানে মাইনাস করলেন, সেখান থেকে গোল না করাই পাপ। হুলিয়ান আলভারেজের মত ক্লিনিক্যাল ফিনিশারের ভুল হয়নি। আর্জেন্টিনারও ফাইনালে উঠতে দেরি হয়নি।
আর মাত্র একটা ম্যাচ। সেই একটা ম্যাচ জিতলেই অমরত্ব পেয়ে যাবেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আর তো মাত্র ৫টা দিন!