পর্তুগাল: ৬ (রামোস-৩, পেপে, গুয়েরিরো, লিয়াও)
সুইজারল্যান্ড: ১ (ম্যানুয়েল আকাঞ্জি)
রোনাল্ডোকে বাদ দেওয়ার মঞ্চ প্রস্তুত ছিল। ম্যাচের আগেই পর্তুগিজ সমর্থকরা চাইছিলেন বাইরে রাখা হোক মহাতারকাকে। দেশের জনপ্রিয় ক্রীড়া প্রচারমাধ্যম 'আ বোলা'-তেই সেই সমীক্ষা আপাতত ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।
সেই সমীক্ষার খবর কানে গিয়েছিল কি পর্তুগাল কোচ ফার্নান্দো স্যান্টোসের, তা জানা নেই। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে বাইরে রেখে দল সাজানোর সাহস তিনি দেখালেন। আর রোনাল্ডোকে বাদ দিতেই বহু বছর পর একপেশে জয় উপহার পেল পর্তুগাল।
আরও পড়ুন: টাইব্রেকারের থ্রিলারে মরক্কোর কাছে স্বপ্নভঙ্গ স্পেনের, চোখের জলে বিশ্বকাপ শেষ মোরাতাদের
রোনাল্ডোর বদলে যাঁকে নামানো হয়েছিল, সেই গণক্যালো রামোস হ্যাটট্রিক করে গেলেন। এই প্ৰথমবার পর্তুগিজ জার্সিতে প্ৰথম একাদশে নামলেন। তা-ও আবার স্বয়ং রোনাল্ডোর জায়গায়। আর নেমেই হ্যাটট্রিক। সুইসদের ৬-১'এ উড়িয়ে দিয়ে বহু বছর পর পর্তুগাল বিশ্বকাপের মঞ্চে সেরার সেরা জয় পেল। আগামী মঙ্গলবার কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধে পর্তুগাল নামবে মরক্কোর বিরুদ্ধে। যাঁরা মঙ্গলবারই টাই ব্রেকার শ্যুট আউটে ছুটি করে দিল হেভিওয়েট স্পেনকে।
নকআউট পর্বে প্ৰথম ম্যাচে নামার আগে কোচ স্যান্টোসের সঙ্গে রোনাল্ডোর সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। সেই সঙ্গে জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। তবে চলতি বিশ্বকাপে মোটেই সেরা ছন্দে নেই তিনি। কোরিয়া ম্যাচে পরিবর্ত হিসাবে তুলে নেওয়ার সময় কোচের উদ্দেশ্যে তীব্র বিষোদগার করেন মহাতারকা।
আরও পড়ুন: গোল করেই বারবার ‘কুৎসিত’ নৃত্য! বিশ্বকাপের মঞ্চে নেচেকুঁদে ভয়ঙ্কর বিতর্কে নেইমাররা
রোনাল্ডোকে বাদ দেওয়ার বাতাবরণের মধ্যেই অনেকের ধারণা ছিল বিতর্ক এড়াতে তিনি হয়ত রোনাল্ডোকে প্ৰথম একাদশে নামিয়ে দেবেন। তবে তিনি শুধু রোনাল্ডোকে বেঞ্চে বসানোর দুঃসাহস দেখিয়েই ক্ষান্ত হননি। সেই সঙ্গে রক্ষণেও দিয়েগো ডালটের জায়গায় নামিয়ে দেন জোয়াও ক্যানসেলোকে। আর কোচ স্যান্টোস দুঃসাহস দেখানোর পুরস্কার পেলেন কড়ায় গণ্ডায়। গোলের মালা পরিয়ে দিলেন সুইজারল্যান্ডকে।
প্ৰথম গোল হঠাৎ করেই এসেছিল। রামোস সুইস বক্সের ডানদিকে দুরন্ত পাস পান। টাইট কোন পেয়েও গোলকিপার ইয়ান সমারকে বিট করতে সমস্যা হয়নি তাঁর। বিরতির আগেই কর্ণার থেকে উড়ে আসা বলে পেপে জোরালো হেড করে দলকে ২-০ এগিয়ে দেন। ৩৯ বছর বয়সে পেপে আপাতত বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবথেকে বেশি বয়সে গোলস্কোরারের তালিকায় দুই নম্বর।
বিরতির পর আরও উদ্যম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পর্তুগাল। সুইস অর্ধে টানা চাপ বজায় রাখে পর্তুগিজরা। মাঠের ডানদিকে ডালত নিজের মার্কারকে এড়িয়ে মাটি ঘেঁষা ক্রস রেখেছিলেন। সেখান থেকেই সমারের পায়ের ফাঁক দিয়ে চমৎকার ফিনিশে নিজের দ্বিতীয় গোল করে যান রামোস। এর ঠিক চার মিনিট পরে রামোস গোল করান রাফায়েল গুয়েরিরোকে দিয়ে। বাঁ দিক থেকে সুইস রক্ষণকে ছিন্নভিন্ন করে রামোস বল রাখেন গুয়েরিরোর উদ্দেশ্যে। যেখান থেকে গুয়েরিরো পর্তুগালকে চতুর্থ গোল উপহার দিয়ে যান।
চার গোল হজম করার পরে সুইজারল্যান্ডের হয়ে একমাত্র স্বান্ত্বনা সূচক গোল করে যান ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। তবে তাতেও পর্তুগালের গোল বন্যায় ছেদ পড়েনি। বেনার্দো সিলভা মাঝমাঠে বল বাড়িয়েছিলেন জোয়াও ফেলিক্সের উদ্দেশ্যে। ফেলিক্স থ্রু বল বাড়ান রামোসকে। সেই এসিস্ট থেকেই নিজের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করে যান রামোস।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় বলির পাঁঠা হচ্ছেন দ্রাবিড়! নতুন বছর শুরুর আগেই বিরাট ঘোষনার পথে BCCI
পাঁচ গোল দিয়েও ক্ষান্ত হয়নি ২০১৬-র ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। পরিবর্ত হিসাবে নামা রাফায়েল লিয়াও বক্সের সামনে বল পেয়ে কাট করে ঢুকে বল জালে জড়িয়ে দেন।
বহুদিন পরে স্যান্টোস সন্তোষজনক জয় পেলেন। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টে আগামী ম্যাচগুলোরও ব্লুপ্রিন্টও তিনি পেয়ে গেলেন। রোনাল্ডোকে পরিবর্ত হিসাবে নামিয়ে ২০ মিনিট সুইস ম্যাচে খেললেন। তবে মহাতারকা সেভাবে কোনও প্রভাব ফেলতে পারলেন না। বাকি ম্যাচগুলোতেও যে রোনাল্ডো বেশি ম্যাচ-টাইম পাবেন না, তা বলেই দেওয়া যায়। তা এটা যতই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ হোক না কেন!