Advertisment

মেসির আর্জেন্টিনা দলে কেন একজনও নেই কালো ফুটবলার! ভয়ঙ্কর সত্যিটা জানলে শিউরে উঠবেন

আর্জেন্টিনার জার্সিতে কখনই কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার খেলতে দেখা যায়নি। ভিতরের কারণ চমকে ওঠার মত

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
NULL

ইতিহাস গড়া থেকে মাত্র এক ম্যাচ দূরে আর্জেন্টিনা। ফ্রান্সকে রবিবার ফাইনালে হারালেই তৃতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেবে আর্জেন্টিনীয়রা। সেই আর্জেন্টিনা, যে দলে কোনও কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার দূরবীন দিয়েও খুঁজলে পাওয়া যাবে না। বিশ্বকাপ আসে যায়, ধবধবে ফর্সা ফুটবলার বোঝাই আর্জেন্টিনা প্রতিনিধিত্ব করে। সেই আর্জেন্টিনীয়দেরই লাতিন আমেরিকান স্কিলের বিচ্ছুরণ ওঠে মাঠে। ধ্বংস হয়ে যায় প্রতিপক্ষ।

Advertisment

অধুনা পৃথিবী এক আস্ত শরণার্থীর দেশ। সীমান্ত দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। লাতিন আমেরিকান দেশগুলির কথা বাদ-ই দেওয়া যাক। ইউরোপের কোনও দেশেই এখন সেরা এগারো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পুরো সাদা দল নামানো সম্ভব নয়। আর্জেন্টিনা যাঁদের মুখোমুখি হচ্ছে সেই ফ্রান্স একাদশে কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলারদের পাল্লা ভারি। লিলিয়ান থুরাম, দেশাইলি, কারেম্বু, ভিয়েরাদের মত আফ্রিকান শরণার্থীদের নিয়ে গড়া একাদশই ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ।এনে দিয়েছিল। ২০১৮-য় সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই কালোদের আধিপত্য এবং ফরাসি বিশ্বকাপ জয়। এমবাপে, ভারানে, পোগবা, কান্তে, উমতিতি, ডেমবেলের মত আফ্রিকানদের গড়া একাদশ সেরার শিরোপা পরে নিয়েছিল।

আরও পড়ুন: মেসির হাতে বিশ্বকাপ উঠলে দুঃখে ভেঙে পড়বেন, প্রকাশ্যে বিষ্ফোরক ‘অভিশাপ’ রোনাল্ডোর

ফ্রান্স বাদ দিলেও ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানির মত শ্বেতাঙ্গ দেশের ফুটবল দলেও কালোদের রমরমা। এরকম শরণার্থী বা কৃষ্ণাঙ্গ নীতির উল্টোপথে গিয়েই বছরের পর বছর খেলে চলেছে আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকান দল হয়েও দেশের 'ফেয়ার এন্ড লাভলি' পলিসি ধরে রেখেই রাজত্ব করছেন মেসিরা। কীভাবে? এর আসল রহস্য লুকিয়ে দেশটির নীতিতেই। ২০১০-এ আর্জেন্টিনীয় সরকার জনগণনায় জানিয়েছিল, দেশে কৃষ্ণাঙ্গ জনজাতির সংখ্যা মাত্র ১,৪৯,৪৯৩। সেই হিসাবে দেশটির মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম কালো।চামড়ার। এই তথ্য প্রকাশ করে আর্জেন্টিনীয় সরকার আসলে বোঝাতে চেয়েছিল আর্জেন্টিনা পুরোপুরি সাদাদের দেশ।

আর্জেন্টিনীয় সরকার যতই নিজেদের দুধ-সাদা জাতির দেশ হিসেবে তুলে ধরুন না কেন, বাস্তব ঘটনা মোটেও তা নয়! ওয়াশিংটন পোস্টের এক আর্টিকলে বলা হচ্ছে, অধুনা সাদা-দেশ বলে নিজেদের দাবি করা আর্জেন্টিনার ঔপনিবেশিক সময়ে গোটা জনজাতির এক তৃতীয়াংশই ছিল কালো। আর্জেন্টিনার নিজস্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ হয়েছিল দাস হিসাবে আফ্রিকা থেকে আনা লাখে লাখে কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকরা।

আরও পড়ুন: বিদায় ফুটবল, দুনিয়াকে কাঁদিয়ে বুটজোড়া তুলে রাখতে চলেছেন মেসি

প্রশ্ন হল, এই বিপুল জনগোষ্ঠী এখন কোথায় তাহলে বিলুপ্ত হয়ে গেল? দেশের কৃষ্ণাঙ্গদের অবলুপ্তির জন্য আর্জেন্টিনীয় সরকার বেশ কিছু গল্প-কাহিনী বাজারে ছেড়েছিল। আর্জেন্টিনার গৃহযুদ্ধের সময়ে কালোদের নাকি 'ক্যানন ফডার' অর্থাৎ সামনে রেখে যুদ্ধ চালানো হয়েছিল। স্প্যানিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায়ের সময়েও এভাবে যুদ্ধে আফ্রিকা থেকে দেশটিতে দাস হিসাবে আসা বহু কৃষ্ণাঙ্গ মৃত্যু বরণ করেন। যুদ্ধের আগে নাকি কালোদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর পর তাঁদের মুক্তি দেওয়া হবে।

আরও একটা যে গল্প সরকারি উদ্যোগে প্রচারণা করা হয়েছিল, ঊনবিংশ শতকের যুদ্ধে প্রচুর কৃষ্ণাঙ্গের প্রাণহানি ঘটার পরে কালো মহিলাদের কাছে সাদাদের বিয়ে করা ছাড়া আর অন্য কোনও অপশন ছিল না। ফলে আর্জেন্টিনায় সাদাদের পাশাপাশি মরোচো (তামাটে), পার্দো (বাদামি বর্ণ) এবং ত্রিগুয়েনো (গম-বর্ণ) তিন মিশ্র-শঙ্কর বর্ণের উদ্ভব ঘটে।

আরও পড়ুন: ওটা পেনাল্টি ছিলই না! হারের পরেই ইতালিয়ান রেফারিকে ‘জঘন্যতম’ বলে দিলেন মদ্রিচরা, দেখুন ভিডিও

তৃতীয় যে কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, তা অনেকটাই হাস্যকর। বলা হয়, ১৮৭১-এ আর্জেন্টিনায় যে পীত জ্বরের আবির্ভাব ঘটে তাতে নাকি সবথেকে বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা বস্তির মত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা কৃষ্ণাঙ্গরা। ওই রোগে বহু কালো চামড়ার মানুষ মৃত্যু বরণ করেন।

ঘটনা হল, এই তিন মিথ বাজারে ছেড়ে নিজেদের হোয়াইট সুপ্রিমেসি থিওরিতে সিলমোহর দিয়েছিল আর্জেন্টিনীয় সরকার। তবে তিন কাহিনীর বেলুন-ই পরবর্তী গবেষণায় ফুটো হয়ে গিয়েছে। ইতিহাসবিদ জর্জে রেইড আন্দ্রুজ গবেষণা করে দেখিয়ে দিয়েছেন, গৃহযুদ্ধে আফ্রো-আমেরিকান ইউনিটের মাত্র ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বাকিরা সকলে হয় পেরু, ব্রাজিলের মত অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশে আশ্রয় নিয়েছিল। অথবা আফ্রিকায় নিজেদের দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। কারণ দেশটির সাদা-শাসকগোষ্ঠী মোটেই কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি সদয় ছিল না।

আরও পড়ুন: হাত মেলাতে গিয়ে মেসির কাছে অসম্মানিত! ডাচ তারকা বিষ্ফোরকভাবে জানালেন ঝামেলার জন্য দায়ী কে

দ্বিতীয়ত, কালো মহিলারা সাদাদের বিবাহ করতে বাধ্য হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গদের যুদ্ধে প্রাণহানি ঘটায়। এমন তথ্যও নাকচ হয়ে গিয়েছে পরবর্তীতে। জানা যায়, কৃষ্ণাঙ্গ মহিলারাই দেশের মুলস্রোতে মিশে যাওয়ার জন্য সাদাদের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হতে বাধ্য হতেন। যাতে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত না হতে হয়। এতেই উদ্ভব ঘটে কিছুটা 'কম সাদা' জাতিগোষ্ঠীর। এতে পুরোপুরি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে তো মুক্তি মিলল। তৃতীয়ত, হলুদ জ্বরে প্রাণহানির থিওরিও ঠিক ধোপে টেকেনি। পরে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, গায়ের রং দেখে জ্বরের আমদানি ঘটেনি।

আসলে আর্জেন্টিনীয় সাদা চামড়ার শাসক গোষ্ঠী দেশকে কালো-র হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বদা বদ্ধপরিকর ছিলেন। দশকের পর দশক ধরে দেশজ পলিসি নির্ধারণ করার সময়ে বরাবর সাদাদের সমাজের সামনের স্রোতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি করেছে। এতেই বছরের পর বছর ধরে কার্যত দেশটি কালো-জনজাতি কার্যত অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: এদিকে কী দেখছ, বোকা কোথাকার! ডাচদের অসভ্যতায় ক্ষেপে লাল মেসিও, ম্যাচের পরেই তুলকালাম

আর্জেন্টিনার সাদাদের নেতা দমিনগো সারমিয়েন্টে যিনি পরবর্তীতে দেশটির প্রেসিডেন্টও হন, বিশ্বাস করতেন, আধুনিক সমাজের আগমন ঘটেছে শ্বেতাঙ্গদের হাত ধরে। কালোদের তিনি পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় মনে করতেন। তিনি 'ফাকুনদো: সিভিলাইজেশন এন্ড বারমারিজম' গ্রন্থে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে আর্জেন্টিনা পিছিয়ে পড়ছে কালো চামড়ার মানুষদের জন্য। দেশকে আধুনিক ভাবধারায় নিয়ে আসার জন্যই হোয়াইট সুপ্রিমেসি নিয়ম চালু করেন তিনি।

আরও পড়ুন: মেসিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছিলেন, সেই রেফারিকেই লাল কার্ড দেখাল ফিফা

কালোদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পাশাপাশি ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষদের আহ্বান জানানো হয়। সেই কারণেই বর্তমান আর্জেন্টিনায় স্প্যানিশ, ইতালিয়ান এবং জার্মান জাতিগোষ্ঠীর রমরমা।

কার্যত দেশটির আত্মায় চুনকাম করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে আর কী! তবে গোটা দেশের 'ফেয়ার এন্ড লাভলি' পলিসিতেও ইতিহাসের কালো অধ্যায় ঢাকা যায়নি এখনও। বিশ্বকাপ এলেই বেরিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনার ভয়ঙ্কর কালো-মুছে দেওয়ার ইতিহাস।

FIFA World Cup Argentina FIFA World Cup. Football Qatar World Cup 2022
Advertisment