ভারতীয় ক্রিকেটে ঘটনাবহুল সপ্তাহ। প্রথমে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ডের সভাপতি পদ থেকে বিদায়। তারপরে একাধিক প্রচারমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার বোর্ডের মিটিংয়ে তাঁর প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে প্ৰশ্ন তোলা হয়। এন শ্রীনিবাসন নাকি সৌরভের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সবথেকে বেশি।
যদিও মিডিয়ায় ওঠা এই বিতর্কিত অধ্যায় সরাসরি অস্বীকার করেছেন বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ থেকে আইপিএল চেয়ারম্যান হতে চলা অরুণ ধুমল। তবে ঘটনা যাই হোক, ক্রিকেটার হিসাবে যেমন ছাপ রেখে গিয়েছেন মহারাজ। সিএবি এবং বিসিসিআইয়ের শীর্ষপদে থাকার সময় সৌরভ প্রশাসক হিসাবেও বেশ কিছু নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সৌরভ সরতেই ৯৫৬ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে BCCI! ‘মাথার চুল ছেঁড়ার জোগাড়’ জয় শাহদের
১) করোনার সময়েও আইপিএল আয়োজন: এর কৃতিত্ব দেওয়া হয় সচিব জয় শাহকে। তবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুযোগ্য পরিকল্পনা না থাকলে করোনার ভয়াবহ সময়ে আইপিএল আয়োজন বন্ধ রাখতে হত বোর্ডকে। অতিমারিতে ক্রিকেট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ধাক্কা খেয়েছিল একাধিক দেশের ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক আয়। অস্ট্রেলিয়ার মত ধনী দেশের ক্রিকেট বোর্ডও কর্মী ছাঁটাই থেকে ক্রিকেটারদের বেতন কমাতে বাধ্য হয়েছিল।
বিসিসিআইয়ে অবশ্য সেরকম কোনও প্রভাবই পড়েনি। ২০২০-তে দু-দফায় এবং ২০২১-এ একদফায় আইপিএল আয়োজন করে আর্থিক অবস্থা ধরে রাখতে পেরেছিল সৌরভের বিসিসিআই। এতে ক্রিকেটারদের অন্তত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়নি বাকি বিশ্বের ক্রিকেটারদের মত।
আরও পড়ুন: দাদাকে বোর্ডে চূড়ান্ত অপমান শ্রীনিবাসনের, মুখ খুলে পাল্টা ছোবল সৌরভেরও
২) মহিলাদের আইপিএল প্ল্যানিং: প্রশাসক হিসাবে সৌরভ পুরুষ ক্রিকেট দল তো বটেই মহিলাদের ক্রিকেটকেও সমান চোখে দেখেন। ক্রিকেট মহলের একাংশের বহুদিনের দাবি ছিল মহিলাদের আইপিএলও আয়োজন করা হোক। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই বোর্ড সভাপতির মসনদে থেকে মহারাজ বড়সড় ঘোষণায় জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী বছরের (২০২৩) শুরুর দিকেই মহিলাদের আইপিএল আয়োজন করতে চলেছে বিসিসিআই। সৌরভের আমলেই একাধিক ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার মহিলাদের বিগ ব্যাশে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেছেন।
৩) মহিলা ক্রিকেটের উন্নয়ন: সার্বিকভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আমলেই মহিলা ক্রিকেটের চোখে পড়ার মত উন্নতি ঘটেছে। মহারাজের চরম শত্রু-ও এই বিষয়ে নির্দ্বিধায় একমত হবেন। কমনওয়েলথ গেমসে মহিলা দল রুপো জিতেছে, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন হরমনপ্রীত, জেমিমা রদ্রিগেজরা। একাধিক মহিলা ক্রিকেটার প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বাহবা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট সিংহাসনে বসার পথেই সৌরভ! লড়াই করেই ছিনিয়ে নেবেন নিজের ফেলে আসা গদি
৪) লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়কে জাতীয় দলে যোগ করা: দ্রাবিড় জুনিয়র পর্যায়ে নজরকাড়া কোচিং করিয়েছেন। এনসিএ-র ডিরেক্টর হিসাবে উঠতি প্রজন্মের ক্রিকেটার তৈরির কাজও সফলভাবে সামলেছেন। তবে সৌরভ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কিংবদন্তিকে জাতীয় দলে নিয়ে আসেন।
দ্রাবিড় একসময় জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। তবে সৌরভ নিজের উদ্যোগে বুঝিয়ে শুনিয়ে মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে রাজি করান। একইভাবে ভিভিএস লক্ষ্মণকেও দ্রাবিড়ের ছেড়ে যাওয়া এনসিএ ডিরেক্টর পদে নিয়ে আসেন প্রেসিডেন্ট সৌরভ। দ্রাবিড়ের অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলের স্টপ গ্যাপ হেড কোচের দায়িত্ব সামলেছেন লক্ষ্মণ।
আরও পড়ুন: একদিনে মোদি-আম্বানি হওয়া যায় না! বোর্ড-বিদায়ের পর প্ৰথমবার মুখ খুললেন ‘অভিমানী’ সৌরভ
৫) বিশাল অর্থে মিডিয়া রাইটস বিক্রি: করোনা বিশ্ব ক্রিকেট স্তব্ধ করে দিলেও দাবিয়ে রাখতে পারেনি আইপিএল আয়োজন। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব যেখানে প্রাত্যহিক খরচ চালাতে হাবুডুবু খেয়েছে সেই সময়েই ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন করেছে বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেট বোর্ড। ২০২৩ থেকে পাঁচ বছরের জন্য আইপিএলের মিডিয়া রাইটস বিক্রি হয়েছে ৪৮,৩৯০ কোটি টাকায়। এই হাজার হাজার কোটি টাকার এই চুক্তির জেরেই আইপিএল বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ক্রীড়া লিগের আসনে বসেছে। ম্যাচ পিছু আয়ের নিরিখে আইপিএল পিছনে ফেলে দিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকেও।
এই চুক্তির অন্যতম মূল কান্ডারি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, "এভাবেই দুনিয়া এগোয়। আইপিএল সম্প্রচার স্বত্ত্ব যে বিশাল দামে বিক্রি হবে, সেই বিষয়ে আমরা প্রত্যেকেই কার্যত নিশ্চিত ছিলাম। তাই আমরা মোটেই অবাক নই।"