কোহলির আচমকা পদত্যাগ ক্রিকেটবিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১-২ এ সিরিজ হারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই কোহলি শনিবার আচমকাই টেস্টের অধিনায়ক থেকে সরে দাঁড়ান।
৬৮ টেস্টে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়া কোহলি ৪০টি জয় সমেত টিম ইন্ডিয়ার সর্বকালের সফলতম টেস্ট ক্যাপ্টেন। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জেতা ক্যাপ্টেন কোহলির কেরিয়ারের উচ্চতম মাইকফলক। টেস্টে ৭ বছরের অধিনায়কত্বের কেরিয়ারে দাঁড়ি ফেললেন শনিবার।
টেস্টে ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক কোহলি। তারপরেই ৬০ টেস্টে ২৭ জয় নিয়ে এই তালিকায় দ্বিতীয় ধোনি। ২১ জয় নিয়ে সফলতমদের তালিকায় তৃতীয় সৌরভ।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত! কোহলি দায়িত্ব ছাড়ার পরে প্ৰথমবার মুখ খুললেন সৌরভ
সব দেশ মিলিয়ে সবথেকে বেশি জয়ের নিরিখে কোহলি তালিকায় চতুর্থ স্থানে। তাঁর আগে রয়েছেন গ্রেম স্মিথ (৫৩) রিকি পন্টিং (৪৮) এবং স্টিভ স্মিথ (৪১)। ২০১৪/১৫-য় অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে ধোনি নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পরে কোহলি অধিনায়ক হন।
২০১৪/১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝপথে ধোনি যখন আচমকা নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, সেই সময় অধিনায়ক হন কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি-শাস্ত্রী যুগ চলে ২০১৭-২০২১ পর্যন্ত। দেশে সেরা সেরা দলের বিরুদ্ধে যেমন জয় পেয়েছে কোহলি-শাস্ত্রীর ভারত, তেমন বিদেশের মাটিতে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছে। কোহলি-শাস্ত্রীর জুটিতে ভারত প্ৰথমবার অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফেরে ২০১৮/১৯-এ। গত বছরে ইংল্যান্ড সফর বাতিল হওয়া পর্যন্ত ভারত সিরিজে ২-১ এ এগিয়ে ছিল।
কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় দল দেশে-বিদেশে অপ্রতিরোধ্য শক্তি হয়ে উঠেছিল টিম ইন্ডিয়া। কোহলির ভারত দীর্ঘদিন টেস্টের ক্রমপর্যায়ে একনম্বর স্থান ধরে রেখেছিল। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্ৰথমবারের ফাইনালেও ভারত পৌঁছয়।
আরও পড়ুন: টেস্টের নেতৃত্বেও ছেঁটে ফেলতে পারেন সৌরভরা, আগাম বুঝেই বিরাট সিদ্ধান্ত! বিস্ফোরক সানি
এখন দেখে নেওয়া যাক টেস্টে কোহলির পাঁচ মহাকীর্তির জয় নজির-
৫) ইংল্যান্ড, নটিংহ্যাম, ২০১৮:
২০১৮-য় ইংল্যান্ড সফরের শুরুটা মোটেই ভাল হয়নি ভারতের। সিরিজের প্ৰথম দুই ম্যাচেই লর্ডস এবং ট্রেন্ট ব্রিজে হেরে বসেছিল। দ্বিতীয় টেস্টে ভারত তো কার্যত সমস্ত বিভাগে হেরে গিয়েছিল। তবে সমস্ত সমালোচনা উড়িয়ে ভারত নটিংহ্যাম টেস্ট জিতে নিয়েছিল ২০৩ রানের ব্যবধানে। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোহলি, দুই ইনিংসে ৯৭ এবং ১০৩ করে। হার্দিক পান্ডিয়া এবং জসপ্রীত বুমরা দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেন।
৪) দক্ষিণ আফ্রিকা, জোহানেসবার্গ, ২০১৮: বিদেশে সেনা কান্ট্রিতে প্ৰথমবার নেতৃত্ব দেওয়ার এসাইনমেন্ট পেয়েছিলেন কোহলি। ভারত সেই সিরিজেও ফেভারিট ছিল। তবে সিরিজের প্ৰথম দুই টেস্টেই হেরে বসে টিম ইন্ডিয়া। সিরিজের ফলাফল আগেই নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার পরে ভারত শেষ টেস্টে মনে রাখার মত পারফরম্যান্স মেলে ধরে।
লো স্কোরিং ম্যাচে দুই ইনিংসেই ভারতের হয়ে ফারাক গড়ে দেন ক্যাপ্টেন কোহলি। ভারত দুই ইনিংসে তুলেছিল ১৮৭ এবং ২৪৭। কোহলির ব্যাট থেকে দুই ইনিংসে বেরোয় ৫৪ এবং ৪১। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করে যান মহম্মদ শামি এবং জসপ্রীত বুমরা। ওয়ান্ডার্সের চ্যালেঞ্জিং পিচে ভারত ৬৩ রানে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে।
আরও পড়ুন: বিরাট সরতেই কোহলি-ভক্তদের টার্গেট সৌরভ-শাহকে! বেনজির ডামাডোলে ভারতীয় ক্রিকেট
৩) অস্ট্রেলিয়া, বেঙ্গালুরু, ২০১৭:
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে কোহলির ভারত কখনও দেশের মাটিতে সিরিজ হারেনি। তবে সেই সিরিজে পুণের স্পিনিং ট্র্যাকে স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়া দুরন্ত পারফর্ম করে এগিয়ে গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় ম্যাচেই ভারত মোকাবিলা করতে নেমেছিল বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে। যেখানে স্পিনারদের জন্য যাবতীয় রসদ মজুত ছিল। প্ৰথমে ব্যাট করে নাথান লিয়নের ৮ উইকেটের দাপট সামলে কেএল রাহুল ৯০ করলেও ভারত স্কোরবোর্ডে ১৮৯-এর বেশি তুলতে পারেনি।
এরপরে ব্যাট করতে নেমে জাদেজার ৬ উইকেট সত্ত্বেও অস্ট্রেলীয়রা ওই পিচে ৮৭ রানের লিড নিয়ে ফেলে। তবে পূজারা-রাহানের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ভর করে ভারত কোনওরকমে স্কোরবোর্ডে ২৭৪ তোলে। জয়ের জন্য অজিদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৮৮ রানের। এরপরেই শুরু হয় অশ্বিনের ম্যাজিক। দক্ষিণী স্পিনারের ঘূর্ণির সামনে ১১২ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। অশ্বিন নেন হাফডজন উইকেট।
আরও পড়ুন: ড্রেসিংরুমে আগেই নেতৃত্ব ত্যাগের ঘোষণা! সতীর্থদের কাছে বিশেষ অনুরোধও ছিল কোহলির
২) মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া, ২০১৮:
২০১৮/১৯-এ অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ভারতের কখনও অজিদের মাটি থেকে সিরিজ জেতার নজির ছিল না। এমন অবস্থায় তৃতীয় টেস্টে মেলবোর্নে বক্সিং ডে-র আগে সিরিজ ছিল ১-১। সেই টেস্টেই অনবদ্য পারফরম্যান্স মেলে ধরেছিল টিম ইন্ডিয়া। প্ৰথম ইনিংসে পূজারার সেঞ্চুরি এবং কোহলির ৮২ রানে ভর করে ভারত ৪৪৩/৭ তুলেছিল। জবাবে বুমরার ম্যাজিক স্পেলের সামনে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১৫১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। বুমরা একাই নেন ছয় উইকেট, মাত্র ৩৩ রানের বিনিময়ে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ব্যাটিং ব্যর্থতার মুখে পড়লেও অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩৯৯ এর কঠিন চ্যালেঞ্জ খাড়া করতে সমর্থ হয়। পারেনি অজিরা। ভারত টেস্ট জিতে যায় ১৮৮ রানের ব্যবধানে। চতুর্থ টেস্ট বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সিরিজে সমতা ফেরানোর আশার সলিল সমাধি ঘটে।
আরও পড়ুন: বিশ্বাস রাখার জন্য ধন্যবাদ… নেতৃত্ব ছেড়ে ধোনিতে আবেগী কোহলি, নুইলেন কৃতজ্ঞতায়
১) লর্ডস, ইংল্যান্ড, ২০২১:
কোহলির অধিনায়কত্বের সর্বসেরা জয় এসেছিল লর্ডসেই। প্ৰথম ম্যাচ ড্র হওয়ায় ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ওপেনিংয়েই কেএল রাহুল-রোহিত শর্মা ১২৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে যান। রাহুলের সেঞ্চুরিতে ভর করে ভারত স্কোরবোর্ডে ৩৬৪ তোলে। তবে ইংল্যান্ডও পাল্টা দেয় ব্যাট হাতে। ২৭ রানের লিড সমেত শেষ করে ইংরেজরা।
দ্বিতীয় ইনিংসে পূজারা-রাহানের ১০০ রানের পার্টনারশিপ সত্ত্বেও ভারত সমস্যায় পড়ে ২০৯/৮ হয়ে গিয়ে। এরপরে ম্যাচের গতি বদলে দেন দুই টেলএন্ডার বুমরা-শামি ৮৯ রানের জুটিতে। জবাবে শেষদিনে রান তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডকে ভারত থামিয়ে দেয় মাত্র দুটো সেশনে। অবিস্মরণীয় জয় পায় ভারত।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন