অতিমারীর অভিশাপে অনলাইনেই চলছে ফুটবল প্রশিক্ষণ। (নিজস্ব চিত্র)
শীতকাল মানেই গড়ের মাঠে ক্রিকেট, কমলালেবুর কোয়া মুখে পুরে দর্শকদের সামনে ব্যাটে-বলের ঝংকারের মৌতাত। ফুটবল প্রেমী জনতা আবার ঢুঁ মারেন ইস্ট-মোহন তাঁবুতে, এরিয়ান-উয়ারি-ইস্টার্ন রেলের মাঠে। তবে এই শীত বার্ধক্যের লেপ-চাদরে মুড়ে দিয়েছে কলকাতার ক্রিকেট-ফুটবল শুধু নয়, গোটা দেশের খেলার অন্দরমহলেই। করোনা, অতিমারী, লকডাউন, আইসোলেশন, আরটিপিসিআর-এর মত ভারী ভারী শব্দ চেতনে-অবচেতনে-অস্থি-মজ্জায় একাকার হয়ে গিয়েছে গোটা বিশ্বের।
Advertisment
আর এই অকাল বার্ধক্যের গ্রাসে পড়ে গিয়েছে আস্ত এক উঠতি প্রজন্ম। মেসি-রোনাল্ডো-এমবাপে-হাল্যান্ডদের জন্য যে শৈশব রাত জাগে তাদের মুখে এখন অন্ধকার ভবিষ্যৎ। প্রিয় তারকাদের অনুপ্রেরণা সাজিয়ে কিনে রাখা বুট, শর্টস, জার্সি আপাতত বাড়ির আলমারিতেই শোভা পাচ্ছে।
লকডাউন দূরে আসলে ক্রমশ সরিয়ে দিচ্ছে শিশুদের ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকেই। ময়দানের অন্যতম নামি শীর্ষকর্তা নবাব ভট্টাচার্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে হতাশ গলায় জানাচ্ছিলেন, "সব জায়গাতেই খেলা হচ্ছে। আমাদের এখানেই নিষেধাজ্ঞা। আমাদের কোচ আপাতত ট্রেনিংয়ের চার্ট ফুটবলারদের সঙ্গে শেয়ার করছেন। সেই অনুযায়ী, ফুটবলাররা টাস্ক কমপ্লিট করে ভিডিওতে তা পাঠাচ্ছেন। আপাতত তো কিছুই করার নেই। এভাবেই চলছে।"
Advertisment
দিল্লিতে রমরমিয়ে কোচিং করেন বঙ্গসন্তান সন্দীপ ঢোলে। দিল্লির সন্তোষ ট্রফি দলের গোলকিপার কোচ বর্তমানে আইলিগের হিন্দুস্তান এফসির সঙ্গে জড়িয়ে। কোচিংকে প্যাশন করে দেড় দশক আগে বাংলা ছেড়ে দিল্লি চলে যাওয়া সন্দীপ বাবু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন সেই অসহায়তারই কথা।
নিজের জোড়া একাডেমি রয়েছে- সেফ হ্যান্ডস এবং নেতাজি সুভাষ একাডেমি। তিনি ফোনে একরাশ হতাশামাখা গলায় বলছিলেন, "মাঠে সামনে থেকে দেখে যেমন একজন শিক্ষার্থীর ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব, অনলাইনে জুম কলে তা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। তবুও যতটা পারছি চেষ্টা করছি। এই পরিস্থিতি আসলে কোচ হিসেবে আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আপাতত এভাবেই চলতে হবে। মাঠে প্রিয় ছাত্রদের দেখার জন্য এখন তর সইছে না।"
যুব উঠতি ফুটবলার বাদ দিয়ে সিনিয়র পর্যায়েও এমন সমস্যার মুখে পড়েছেন কোচেরা। ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নিয়েই মাঝপথে গোয়ায় হাজির হয়েছিলেন কোচ মারিও রিভেরা। তবে কোয়ারেন্টিনে থাকায় এতদিন দলের ফুটবলারদের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বও মেটানো সম্ভব হয়নি। নির্দিষ্ট কোয়ারেন্টিন মেয়াদ শেষ করার পরে আবার কোভিডে আক্রান্ত টুর্নামেন্ট। এখনও অনুশীলনেই নামতে পারেননি তিনি।
সবুজ মাঠের বদলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে অনুশীলন করছেন (নিজস্ব চিত্র)
আইলিগ বাতিল হয়ে গিয়েছে করোনা সংক্রমণের কারণে। আইলিগে একসময় অংশ নেওয়া ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব বর্তমানে মাঠের বাইরে প্রস্তুতি সারছে। কোচ করে আনা হয়েছে বেলজিয়ান স্টিভ হারবর্তকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "হোটেল রুমে বন্দি থেকে কোচিং করাতে হচ্ছে। স্কিলের ট্রেনিং তো অনলাইনে সম্ভব নয়, আপাতত ফিটনেস ট্রেনিং করাচ্ছি। সমস্ত মাসল গ্রুপ যাতে সবজি6 ট্রেনিং করতে পারে, সেই চার্ট আলাদা করে তৈরি করে শেয়ার করতে হচ্ছে। এটা ভীষণ সমস্যার।"
"এছাড়াও অনেক যুব ফুটবলাররা অনলাইনে সেভাবে সড়গড় নয়, তাই আমাদের কোচিং স্টাফের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে, সেই ফুটবলারদের। মাঠে শারীরিক কসরতের থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা চ্যালেঞ্জ।" বলছেন টিনটিনের দেশের কোচ।
এই অন্ধকার কেটে কবে আবার সবুজ মাঠে দামাল বুটের দাপাদাপি শুরু হয়, সেটাই আপাতত দেখার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন