আজ রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ নিমতলা ঘাট মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তী প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শেষকৃত্যের আগে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় 'গান স্যালুটে' শ্রদ্ধা জানানো হয় ভারতীয় ফুটবলের মুকুটহীন সম্রাটকে।
অথচ অদৃষ্টের পরিহাস, যিনি আজীবন মানুষের মধ্যে, মানুষের সঙ্গে থাকতে ভালবাসতেন, অশক্ত শরীরেও ছুটে যেতেন নানান সামাজিক অনুষ্ঠানে, যাঁর শেষযাত্রায় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘটত জনসমুদ্রের আবেগ আর ভালবাসার বিস্ফোরণ, তাঁর চিরবিদায় ঘটল স্রেফ পরিবার-পরিজন, সরকারি নেতা-মন্ত্রী, কিছু প্রাক্তন খেলোয়াড়, কর্মকর্তা এবং এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্থানীয় শ'খানেক মানুষের উপস্থিতিতে।
করোনা-আতঙ্কের প্রকোপে একরকম নিঃশব্দেই অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন বিংশ শতাব্দীর চিরশ্রেষ্ঠ ভারতীয় ফুটবলার। থাকল না বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের তাঁবুতে তাঁর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা অর্পণ করতে পারলেন না তাঁর অগণিত ভক্ত-অনুরাগীরা।
তবে সশরীরে হাজির থাকতে না পারলেও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন অনেকেই, সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে নিতান্ত সাধারণ মানুষও। শুক্রবার দুপুরে কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে তাঁর প্রয়াণের খবর পাওয়ার পর থেকেই টুইটারে নামে শোকবার্তার ঢল।
অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি প্রফুল প্যাটেল টুইটে জানান, পিকে-র স্মৃতির প্রতি সম্মানবশত দিল্লিতে তাদের সদর দফতরে পতাকা অর্ধনমিত রাখে এআইএফএফ।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি নিউমোনিয়া-ঘটিত সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২ মার্চ ভেন্টিলেটরে রাখা হয় প্রবাদপ্রতিম এই ফুটবলারকে। হাসপাতাল সূত্রে ৪ মার্চ জানানো হয়, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন পিকে। কিন্তু ফের শারীরিক অবস্থার ক্রমাবনতি শুরু হয়। আজ দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। পিকে-র প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সহ সারা দেশের ক্রীড়ামহল। আক্ষরিক অর্থেই ভারতীয় ফুটবলে যুগাবসান।
পিকে আর নেই। ভুল। আছেন, এবং থাকবেন ভারতের ফুটবল ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন নিয়ে। আছেন, এবং থাকবেন অগণিত ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়জুড়ে।