Advertisment

এক টেস্ট খেলেই বিদায়! ইডেনে বিকাশের যন্ত্রণার শরিক হবেন শচীন-সৌরভও

বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম টেস্ট খেলেই বিদায় নিয়েছিলেন। যন্ত্রণা তাড়া করে এখনও। চোট আর বোর্ডের অবহেলায় হারিয়ে যাওয়া বিকাশ রঞ্জন দাসই এবার হাজির থাকবেন ইডেনের ঐতিহাসিক টেস্টে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sourav Ganguly and Biksah Ranjan Das

সৌরভের আমন্ত্রণে ইডেনে আসছেন বিকাশ (ছবি- রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

একেবারে নাম ধরে ধরে চিঠি এসেছে। তা-ও আবার প্রিয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। ইডেনে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি। তাই আপাতত স্বপ্নের ঘোরে রয়েছেন তিনি। বিকাশ রঞ্জন দাস, বাংলাদেশ ক্রিকেট নদীর স্রোতে হারিয়ে যাওয়া একটি নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের বয়স দু-দশক হতে চলল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের শৈশবে তাঁর হাতেই একসময়ে স্বপ্ন দেখতেন ওপার বাংলার সমর্থকরা। জাতীয় দলের জার্সিতে ভারতের বিরুদ্ধে বাইশ গজে ঐতিহাসিক প্রথম টেস্টের সাক্ষীও ছিলেন। সেই বিকাশ দাসের যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না, এখনও মহারাজ তাঁকে মনে রেখেছেন।

Advertisment

উনিশ বছর আগের স্মৃতি মনে পড়লে কখনও আনন্দ কখনও আবার বিষাদ ছুয়ে যায় তাঁকে। ইডেনে সংবর্ধনা নিতে কলকাতা আসার আগেই পুরনো স্মৃতির অ্যালবাম খুলে বিকাশ বলছিলেন, "ম্যাচের আগে যখনই ভাবতাম সৌরভ-শচীনকে বল করব, বিশ্বাসই হচ্ছিল না। সত্যি কথা বলতে ভীষণ রোমাঞ্চিত ছিলাম। রমেশকে বোল্ড করলাম। প্রথম ইনিংসে আমরা ভাল করলাম। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের কারণে ম্যাচটা আর পাঁচদিনে টেনে নিয়ে যেতে পারিনি।"

Biksah Ranjan Das বোলিংয়ে নজর কেড়েছিলেন বিকাশ রঞ্জন দাস (ছবি- রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

আরও পড়ুন ইডেনে স্বপ্নপূরণের আমন্ত্রণ, অপেক্ষায় সৌরভের প্রিয় শান্ত

সেই অভিষেক টেস্ট খেলা বাংলাদেশের স্বপ্নের নায়কদের ইডেন গার্ডেন্সে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০০০-র ১০ নভেম্বর অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ ভারতের বিপক্ষে। সেই দলটিতে যারা ছিলেন তাদের সকলকে ইডেনের গোলাপি টেস্ট দেখতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে অন্যরকম অভিষেক হয়েছিল ‘প্রিন্স অফ কলকাতা’র। সেই ম্যাচ থেকেই যে টিম ইন্ডিয়ার নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডটা পড়েছিলেন সৌরভ। যে কারণেই বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টটা তার কাছেও স্মরণীয় ঘটনাগুলোর একটি। জাতীয় দলের প্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গেই ইডেনে সংবর্ধনা নিতে হাজির থাকবেন বিকাশ।

Bangladesh test team প্রথম টেস্ট খেলা বাংলাদেশের জাতীয় দল (ছবি-রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

এখনও সেই ম্যাচের কথা উঠলে অনর্গল বলে যেতে পারেন বিকাশ দাস। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তিনি বলছিলেন, "সেই স্বপ্নস্মৃতি কি ভোলা যায়! সবই তো মনে পড়ে। শান্ত (হাসিবুল হোসেন) ভাই প্রথম ওভার করেছিল। অন্য প্রান্ত থেকে শুরু করেছিলাম আমি। প্রথম বলটা করেছিলাম সদাগোপান রমেশকে।"

আরও পড়ুন নেতা সৌরভের প্রথম প্রতিপক্ষই অভিষেক টেস্টে নামা বাংলাদেশ, কোথায় এখন তাঁরা

পদ্মাপাড়ের ক্রিকেট মহলের অনেকেই বলেন, বিকাশ হতে পারতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বকালের সর্বসেরা বোলার। সেই সম্ভবনাও ছিল। ১৮-র গণ্ডি না পেরোতেই বাংলাদেশের হয়ে খেলেন অভিষেক টেস্ট। তবে ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝড়ে পড়েছিলেন। অভিষেক টেস্টই যে হয়ে থেকেছিল তাঁর কেরিয়ারের শেষ টেস্ট! প্রথম টেস্ট খেলার পরই দলের বাইরে চলে যান বিকাশ রঞ্জন দাস। তারপর ২০০৪ সাল অবধি ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে আর দেখা যায়নি তাঁকে।

প্রথম টেস্টের পরেই চোট। তারপরেই অনেকটাই আড়ালে চলে যান তিনি। সেই সময়কার কথা মনে পড়লে আক্ষেপ, যন্ত্রণা এখনও কুঁড়ে কুঁড়ে খায় বিকাশকে। আহত গলায় তিনি বলতে থাকেন, "বল করার পর পিঠে প্রচুর ব্যথা হতো। সেটা অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটা মানসিকভাবে আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ক্রিকেট ভবিষ্যত নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সেই সময় বোর্ডের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। সেখান থেকেও কোনওরকম সহযোগিতা পাইনি। পেলে হয়তো অকালেই বিদায় জানাতে হত না বাইশ গজকে।"

Biksah Ranjan Das এখনও খেলার মধ্যমণি বিকাশ দাস (ছবি- রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

আরও পড়ুন ভারতের কাছে হেরে তিন মাস ঘুমোননি মুশফিকুর, দিল্লি দখলের পরে জানালেন বাবা

সদাগোপান রমেশকে বোল্ড করে বিকাশ দাসের সেলিব্রেশন এখনও বাংলাদেশি ক্রিকেট জনতার মনে টাটকা। সেখান থেকে ক্রিকেট গ্রাফ এভারেস্টে চড়ার কথা। তবে রূপকথা হয়নি অকালে ঝড়ে যাওয়া বিকাশের কেরিয়ারে। অকাল বার্ধক্যের সেই ক্ষত বুকে নিয়েই বিকাশ বলছিলেন, "আমার বয়স তখন খুবই কম। ভীষণই অপরিণত ছিলাম। আধুনিক ক্রিকেটের মতো এত জৌলুস, চাকচিক্যও ছিল না। প্রথম টেস্ট খেলার সময় থেকেই পিঠের ব্যথায় ভুগছিলাম। একজন পেস বোলারকে নিজের শরীরের যত্ন নিতে হয় সেটা বুঝতে পারিনি। জাতীয় দলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটও চুটিয়ে খেলতাম। টানা বোলিং করে গেছি একনাগাড়ে। ওটাই আসলে আমার সর্বনাশ করেছে। অল্প বয়সের শরীর অতিরিক্ত ধকল নিতে পারেনি।"

চোট আর বোর্ডের অবহেলায় অভিমানে ক্রিকেটই ছেড়ে দিয়েছিলেন বিকাশ রঞ্জন দাস। এরপর নিজের নামটাও বদল করে ফেলেছিলেন হঠাৎ। ছিলেন বিকাশ রঞ্জন দাস। হয়ে গিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। জাতীয় দলের বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার বদলে বিকাশ এখন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। সামলাচ্ছেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)-এর ঢাকার একটি শাখায় ম্যানেজারের দায়িত্ব।

Biksah Ranjan Das বল হাতে আগুন ঝড়াতেন বিকাশ রঞ্জন দাস (ছবি- রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ)

ক্রিকেট ছাড়ার পর থমকে যাওয়া পড়শুনোয় নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরিও পেয়ে গিয়েছিলেন বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে (ইবিএল)। বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে হারিয়ে যান বিকাশ রঞ্জন দাস। স্মৃতির অতলে মুছে গিয়েছিলেন। বিকাশের গলায় আক্ষেপ, দুঃখ, যন্ত্রণা একাকার হয়ে যায়, "একবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলাম খেলার সূত্রে। সেখানে দেখা হয়েছিল শচীন তেন্ডুলকার ও অজিত আগারকারের সঙ্গে। তাদের দুজনকেই ভারতীয় বোর্ড পাঠিয়েছিল চিকিৎসা করাতে। আমার বেলায় সে রকম হয়নি। এই কষ্টটা আমার আছে। চিরদিনই থাকবে। এখন ব্যাঙ্কে চাকরি করছি। আকরাম ভাই (আকরাম খান) মাঝে মাঝে ব্যাঙ্কে আসেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। দাদার (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) আমন্ত্রণের কথা প্রথম জানিয়েছেন সুমন (হাবিবুল বাশার) ভাই।"

আরও পড়ুন হাসিনাকে জানানো উচিত ছিল শাকিবের, সাফ জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মন্ত্রী

ইডেনে যখন তিনি সতীর্থদের সঙ্গে সংবর্ধনা নেবেন, ফেলে আসা সময়ও নিশ্চয় ভিড় করে আসবে। তাঁর সঙ্গেই একই মঞ্চে থাকবেন ক্রিকেট দুনিয়ার বরেণ্য ব্যক্তি, রথী-মহারথীরা। শচীন-সৌরভের সান্নিধ্যে ইডেনের উজ্জ্বল লাইম লাইটে কী যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব হবে পদ্মাপাড়ের ট্র্যাজির নায়কের?

Bangladesh Eden Gardens Test cricket
Advertisment