বৃহস্পতিবার ডুরান্ড কাপের ম্যাচ। সেখানেই কলঙ্কিত হয়েছিল ময়দানি ফুটবল। এটিকে-কে হারানোর পরে উল্লাস করতে করতে ফিরছিলেন মোহনবাগান সমর্থকরা। সেই সময় লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষের তোরণ ভেঙে দিয়ে চলে যান বেশ কিছু সমর্থক। তাঁদের গায়ে ছিল সবুজ-মেরুন জার্সি। উচ্ছ্ৃঙ্খল সমর্থকদের কথা প্রকাশ্যে আসার পরেই কড়া ব্যবস্থা নেন মোহনবাগান সমর্থকরা। ইস্টবেঙ্গলকে দুঃখপ্রকাশ করার পাশাপাশি শতবর্ষের তোরণ নির্মাণের যাবতীয় খরচ বহন করারও দায়িত্ব নিতে রাজি হন মোহনবাগান কর্তারা। সমর্থকদের এমন উগ্র আচরণের নিন্দা করেছেন দুই ক্লাবের শীর্ষ কর্তারাই।
এমন ঘটনাতেই স্মৃতিতে ভিড় করছে অতীতের বেশ কিছু ইস্ট-মোহন কাজিয়ার ঘটনা। যেখানে অনভিপ্রেত ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছিলেন দু-দলের সমর্থকরাই।
আরও পড়ুন ২৩ গোল দিল বায়ার্ন মিউনিখ, হ্যাটট্রিক পাঁচজনের! দেখুন গোল-বন্যার ভিডিও
ভারতীয় ক্রিকেটারদের ডোপ পরীক্ষার দায়িত্বে এবার নাডা, চুক্তি বোর্ডের সঙ্গে
ঘটনা ১) চলতি বছরের জুনিয়র ডার্বিঃ জি বাংলার ফাইনালে খেলা ছিল ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগানের। জুন মাসের এই ডার্বিতে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল। বিশ্বকাপের খেলা সেই সময় পূর্ণদ্যমে চলছে। ইংল্যান্ড থেকে কমেন্ট্রির কাজে বিরতি নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের মাঠে। ছিলেন টলিউডের কলাকুশলীরাও। সেই ম্যাচেই দুই দলের সমর্থকদের ঝামেলার জেরে মাঠেই বাতিল হয়ে গেল খেলা। প্রথমে লাল-হলুদ জার্সিতে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে পেনাল্টিতে গোল করেন মণিচাঁদ সিং। সেই পেনাল্টি নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল মোহনবাগানের। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে, ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপারকে হাতে বল থাকা সত্ত্বেও বল দখল করতে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের এক ফুটবলার। সবুজ মেরুন ফুটবলারকে সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার ফাউল করেন। ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে পেনাল্টি দিতেই শুরু হয়ে যায় দুই সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধ। সেই ম্যাচে মুহূর্মুহূ ঝামেলার জেরে শেষ পর্যন্ত ম্য়াচটাই বাতিল করে দেন রেফারি।
ঘটনা ২) যুব আইলিগের ডার্বিঃ গত বছরের নভেম্বরের অনুর্ধ্ব-১৮ দলের ফিরতি পর্বের ডার্বি খেলা ছিল ইস্টবেঙ্গল মাঠে। প্রথম পর্বের ম্যাচে মোহনবাগান মাঠে জিতে ফিরেছিল ইস্টবেঙ্গল। এবার তাই পড়শি ক্লাবের মাঠে জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমেছিল সবুজ-মেরুন যুব ফুটবলাররা। ম্যাচের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল সদস্য গ্যালারি থেকে অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করেছিলেন সদস্য-সমর্থক। এমন ঘটনা মোটেই বরদাস্ত করছিলেন না প্রাক্তন ফুটবলার সঞ্জয় মাঝি, অলোক দাস। তাঁদের হস্তক্ষেপে গালিগালাজ সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও বিরতির ঠিক আগে একটি ফাউলকে কেন্দ্র করে ফের শুরু হয়ে যায় তরজা এবং ঝামেলা। সদস্য-সমর্থকদের সেই উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা বন্ধ করতে গিয়ে অপমানিত হতে হয় এক ইস্টবেঙ্গলের কর্তাকেও। এর পরই সেই সমর্থকরা সাংবাদিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপরে পুলিশ এসে পুরো ঘটনা সামাল দেয়। ম্যাচের পরে ওই সদস্য-সমর্থকদের সঙ্গে মারামারি হয় খেলা-ফেরত মোহনবাগান ফ্যানদের সঙ্গেও।
ঘটনা ৩) আইলিগের যুব দলের ডার্বিঃ ফের ছোটদের ঘটনা কলঙ্কিত হওয়ার ঘটনা গত বছর অক্টোবর মাসে। আইলিগের সেই ম্য়াচে ইস্টবেঙ্গল ২-০ গোলে হারিয়েছিল প্রতিপক্ষ মোহনবাগানকে। তবে ইস্টবেঙ্গলের জয় ছাপিয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল দুই দলের লাঠালাঠি করার মতো ঘটনা। কিছু ইস্টবেঙ্গল সমর্থক মোহনবাগানের ফ্ল্যাগে অশালীন মন্তব্য লিখে এনেছিল। ম্যাচের মাঝেই সেই ফ্ল্যাগ পোড়ানো হয়। এতে খেপে গিয়ে মোহনবাগান সমর্থকরা পালটা দেয়। মোহনবাগান সমর্থকদের ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল রঞ্জন চৌধুরির প্রশিক্ষণাধীন ইস্টবেঙ্গল দলের উপরেও। মাঠের বাইরে দু-দলের ফুটবলাররা একে অন্যের উপরে চড়াও হয়। ঘোড়া সওয়ার পুলিশ এসেও তাঁদের আলাদা করতে পারেনি।
ঘটনা ৪) রহিম নবি কাণ্ডঃ ডার্বির ইতিহাসে অন্যতম লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছিল ২০১২ সালে। যুবভারতীর সেই ডার্বি ফিরিয়ে এনেছিল অভিশপ্ত সেই ডার্বি ফিরিয়ে আনছিল আরও একটা ১৯৮০-এর ১৬ অগস্টের স্মৃতি। খাবরা ও নির্মল ছেত্রীর বল দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে প্রথমে উত্তাপের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পর রেফারিকে কুৎসিত ইঙ্গিত করা ওডাফাকে লাল কার্ড দেখিয়ে দেওয়ায় স্ফুলিঙ্গ গনগনে আঁচ হয়ে আছড়ে পড়েছিল যুবভারতীতে। গ্যালারি থেকে ছোড়া ঢিলে ফেটে চৌচির হয়ে যায় নবির মাথা। পরে নবিকে নিরাপত্তার কর্ডন দিয়ে নিয়ে আসেন প্রতিপক্ষ দলের মেহতাব-অর্ণবরা। অভিযোগের আঙুল উঠেছিল মোহনবাগান সমর্থকদের দিকেই।