বাইশ গজে বাংলাদেশের উত্থানের অন্যতম কারিগর কাজি হাবিবুল বাশার। সেদেশের অন্যতম সেরা অধিনায়কও তিনি। শাকিব আল হাসান, মাশরাফি মোর্তাজাদের দেশকে ক্রিকেট মানচিত্রে একটা আলাদা জায়গা করে দিয়েছিলেন 'মিস্টার ফিফটি'। বাশার শুধুই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানই নন, সেদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব তিনি।
ঠিক এগারো বছর আগে ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষবার দেশের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন বাশার। ৪৬ বছরের কুষ্টিয়া নিবাসী এখন বাংলাদেশের জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান নির্বাচক। আক্রম খান ও মিনহাজুল আবেদিনের সঙ্গে গত ১৬ এপ্রিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দল বেছে নিয়েছিলেন বাশার।
আরও পড়ুন: জোড়া চমকেই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা বাংলাদেশের
নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের জন্য দল বেছে নিয়েছিল টাইগার্স। চলতি সপ্তাহে আইপিএলের ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য পদ্মাপারের দেশ থেকে আরব সাগরের তীরে উড়ে এসেছিলেন বাশার। ধারাভাষ্য দেওয়ার মাঝেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে একান্তে সময় দিলেন বাশার। কথা হল বিশ্বকাপ আর বাংলাদেশ নিয়ে।
খেলোয়াড়দের হাতের তালুর মতো চেনেন, বিশ্বকাপের দল নিয়ে কী বলবেন?
সত্যি বলতে, দল দুর্দান্ত হয়েছে। আমি ভীষণ খুশি। এর আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের এত অভিজ্ঞ দল যায়নি। এই দলের অনেকেই প্রায় একসঙ্গে ১০০-র বেশি ম্যাচ খেলেছে। ফলে এটা একটা পজিটিভ দিক। গত ২-৩ বছর ধরেই পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে আমরা ভাল খেলছি। আশা করছি দল এবার ইংল্যান্ডে ভাল পারফর্ম করবে।
বিশ্বকাপে ব্যাটিং-অর্ডার কী রকম হতে পারে?
আমার যা মনে হয় রাইট হ্যান্ড-লেফ্ট হ্যান্ড কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখে তামিম (ইকবাল) আর লিটন (দাস) ওপেন করবে। তিনে নামবে সৌম্য (সরকার)। চারে সম্ভবত শাকিব (আল হাসান)। পাঁচে মুশফিকুর (রহিম)। আমার মনে হয় এরকমই ব্যাটিং অর্ডার হতে পারে।
দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়েরই চোট-আঘাত রয়েছে। বিশ্বকাপে এটা কি ভোগাতে পারে?
চোটের একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু সবই ছোটখাটো চোট, তেমন বড় নয়। তবে আমার চিন্তা দলের ফর্ম কেমন থাকবে। চোট নিয়ে একদমই ভাবছি না। ফর্মটাই আসল। এই দলটায় অভিজ্ঞতার অভাব নেই। যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে বড় মঞ্চে পারফর্ম করার। দেখবেন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চমকে দিতে পারে।
আপনাদের বোলিং ইউনিট আর ইংল্যান্ডের পিচ নিয়ে কী বলবেন?
একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। আমরা জুনের মাঝামাঝি সময় বিশ্বকাপ খেলব। ইংল্যান্ডে তখন মিড সামার। ফলে তখন কিন্তু উইকেট পাটা থাকবে। প্রচুর রান উঠবে। ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পাবে। ইংল্যান্ড যে সুইংয়ের জন্য পরিচিত, সেটা দেখতে পাব না। তবে আমার মনে হয় বোলাররা বুদ্ধি করে বল করলেই সফল হবে। আমাদের বোলিং ইউনিট বেশ ভাল। মুস্তাফিজুর (রহমান), রুবেল (হোসেন), আবু (জায়েদ চৌধুরি) মেহদির (হাসান) মতো বোলাররা রয়েছে। আশা করছি ওরা ভাল বল করবে।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে?
বিশ্বকাপের আগে শেষ আমরা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছি। এরপর পঞ্চাশ ওভারের ফর্ম্যাটে ঢাকা প্রিমিয়র লিগেও কিছুটা নিজেদের পরখ করে নিতে পেরেছে খেলোয়াড়রা। সামনে আয়ারল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আমরা ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলব। এটাই আমাদের কাছে দুর্দান্ত নেট প্র্যাকটিসের সুযোগ। কারণ আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার অনেকটাই মিল রয়েছে। ফলে খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।
কতটা সুযোগ রয়েছে মাশরাফি-শাকিবদের?
এবার কিন্তু বিশ্বকাপের ফর্ম্যাটটা বদলে গিয়েছে। কোনও গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ নেই। প্রতিটা টিমই একে অপরের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আর সেরা চারটে দল সেমিফাইনাল খেলবে। ফলে সকলেরই সুযোগ থাকছে। বাংলাদেশও শেষ চারে ওঠার ক্ষমতা রাখে। দেখা যাক কীভাবে এগোয় সবটা। তবে ফর্ম্যাটটা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
ফাইনালে বাংলাদেশের কী হয়?
এটা ঠিকই বলেছেন যে, আমাদের একটা ফাইনালে ব্লকেজ রয়েছে। সে এশিয়া কাপই হোক বা নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। আমরা ফাইনালের হার্ডল পেরোতে পারি নি। খেয়াল করে দেখবেন, আমরা খুব ছোট মার্জিনেই হেরেছি। কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম করলে চলবে না। ফাইনাল ব্লকেজ কাটাতেই হবে।
এবার বিশ্বকাপে কারা ফেভারিট?
শেষ কয়েক বছরের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে অবশ্যই ভারত-ইংল্যান্ড। দুরন্ত ফর্মে রয়েছে এই দু'টো দল। কিন্তু আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও লড়াইতে রাখব। চাইব বাংলাদেশের চোকার্স তকমাটা ঘুচে যাক এবার।
বিশ্বকাপে ক্যাপ্টেন আর কোচ কতটা ফারাক গড়ে দিতে পারবেন?
আমি মাশরাফির মতো ক্যাপ্টেন দেখি নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ও অন্যতম সেরা ক্যাপ্টেন। দলের প্রত্যেকে ওকে সমীহ করে। দলটাকে ভীষণভাবে তাতাতে পারে। আর কোচ শুধুই একজন দলের হেল্পিং হ্যান্ড। তাঁর হাতে সে অর্থে কিছু থাকে না।
আপনার ক্রিকেট কেরিয়ারে ২০০৭ বিশ্বকাপই কি সেরা মুহূর্ত?
অবশ্যই, এটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ওরকম একটা টুর্নামেন্টে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারিয়েছিলাম। প্রথমবার সুপার এইটে গিয়েছিলাম। এরপর আর এগিয়ে না যেতে পারার আক্ষেপ রয়েছেই। তবে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোই কেরিয়ারের সেরা মুহূর্ত।
ইন্ডিয়াকে নিয়ে একটাই প্রশ্ন, চার নম্বরে কার নামা উচিত?
দেখুন ভারত দুর্দান্ত টিম। তবে ব্যাটিংটা মূলত রোহিত (শর্মা), শিখর (ধাওয়ান), বিরাট (কোহলি) আর ধোনির উপরেই নির্ভরশীল। আমার মনে হয় চার নম্বরে কেএল রাহুলেরই খেলা উচিত। ও দারুণ ফর্মে রয়েছে।