অসহ্য ব্যথা সহ্য করে দলকে নিরাপদ সীমানায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের লোকগাথায় উঠে এসেছেন। তবে হনুমা বিহারীর এই মুহূর্তে সবথেকে বড় তৃপ্তি বন্ধুদের মাধ্যমে বড়সড় নেটওয়ার্ক তৈরি করে অসহায় কোভিড আক্রান্ত রোগীদের জন্য অক্সিজেন, হাসপাতাল বেডের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গোটা দেশ কার্যত লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। দেশের সঙ্কট বাড়িয়েছে ক্রমবর্ধমান কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগ মাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ টুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় দলের একের পর এক ক্রিকেটার এই কঠিন সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন- অক্সিজেন কনসেনট্রেটর হোক বা আর্থিক সাহায্য- সব বিষয়েই এগিয়ে এসেছেন একাধিক ক্রিকেটার। সেই তালিকায় এবার নাম লেখালেন তারকা হনুমা বিহারিও।
আরো পড়ুন: আইপিএল পুরো খেলা হলে কোন দল চ্যাম্পিয়ন হত, জানুন বড় ভবিষ্যৎবাণী
বর্তমানে দেশে নেই টেস্টের মিডল অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাটসম্যান। কাউন্টি খেলতে কিছুদিন আগেই পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। তিনি এবার বেনজির কীর্তি গড়লেন স্রেফ সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে। নিজের বন্ধুবান্ধব তো বটেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটকের ফলোয়ারদের নিয়ে ১০০ জনের এক স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ তৈরি করেছেন তিনি। যাঁরা সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্লাজমা, অক্সিজেন, হাসপাতাল বেডের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছেন সাধ্যমত।
পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারকা ক্রিকেটার বলে দিয়েছেন, "নিজেকে একদমই মহান প্রতিপন্ন করতে চাইনা। তবে একদম তৃণমূল স্তরে সাহায্যের ইচ্ছা নিয়েই এগিয়ে এসেছি। যাঁদের এই কঠিন সময়ে একদম দেখভাল করার কেউ নেই, তাঁদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমরা। এটা তো সবেমাত্র শুরু।" আইপিএল চলার মাঝেই হনুমা বিহারি কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন। ভারতীয় দল জুনের ৩ তারিখে ইংল্যান্ডে পৌঁছালে সরাসরি জাতীয় দলে যোগ দেবেন তিনি।
তবে এর মধ্যেই দেশের মানুষদের সাহায্য করতে কার্পণ্য করছেন না তিনি। বলছিলেন, "দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে গোটা দেশে। হাসপাতালের বেড পাওয়া যে এত দুষ্কর হয়ে উঠবে, তা ভাবাই যাচ্ছে না। আমি তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ফলোয়ারদের স্বেচ্ছাসেবী বানিয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেব। আমরা সেই সমস্ত মানুষদের সাহায্য করছি যাঁদের অক্সিজেন, প্লাজমা, জরুরি ওষুধপত্র কেনার মত সামর্থ্য নেই কিংবা যাঁরা হাসপাতালে বেড জোগাড় করতে অক্ষম। তবে এটাও যথেষ্ট নয়। ভবিষ্যতে আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাইছি আমরা।"
জাতীয় দলের জার্সিতে ১১ টেস্টে ৬২৪ রান করা ভারতীয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার সংখ্যা ১,১০,০০০। সেই ফলোয়ারদের অনেকেই এখন বিহারীর স্বেচ্ছাসেবক। কীভাবে এই ভাবনা তা জানিয়ে তারকা বলছিলেন, "১০০ জনকে নিয়ে আমি টিম তৈরি করেছি। যাদের সাহায্য করার মানসিকতা রয়েছে, তাঁরাই কাজ করছেন। হোয়াটসএপে আমাদের একটি গ্রুপও রয়েছে। ওঁদের কঠোর পরিশ্রমেই কিছু লোক সাহায্য পাচ্ছেন। হ্যাঁ আমি একজন পরিচিত ক্রিকেটার। তবে স্বেচ্ছাসেবীদের পরিশ্রম ছাড়া এটা সম্ভব হত না। টুইটার সহ একাধিক সামাজিক মাধ্যমে আমার সমস্ত ফলোয়ারদের প্রথমে ভলান্টিয়ার্স হওয়ার আর্জি জানিয়ে ছিলাম। আমি কোনও তথ্য পেলে ওদের সঙ্গে শেয়ার করি। বাকি অনুসন্ধানের কাজ ওরাই করে। যদি কোনো সুপারিশ অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার বিষয় হয়, সেটা আমি করে থাকি। এই স্বেচ্ছাসেবী দলে আমার স্ত্রী, বোন এবং অন্ধ্রপ্রদেশের আমার বেশ কিছু টিমমেটও রয়েছে। ওদের সাহায্য করার ইচ্ছা দেখে ভালো লাগছে।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন