Advertisment

Premium: এশিয়াডে এনেছেন পদক, জানেন এই খেলোয়াড়দের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ঠিক কেমন?

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১৫ জন সাংবাদিক, পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন।

author-image
IE Bangla Sports Desk
New Update
Happy New Year: Look where most of India’s medals come from — village & town, under Rs 5-lakh annual income, farmers’ families

২০০২ সালের এশিয়ান গেমসে ভারতের ৩৬% পদক মহিলারা জিতেছেন। ২০২৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৪৩%।

সদ্য শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের এশিয়ান গেমস। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এই হাংঝো এশিয়ান গেমসে ভারত রেকর্ড ১০৭টি পদক পেয়েছে। তার মধ্যে ৫৮টি ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া। ৪৯টি পদক এসেছে দলগতভাবে। কিন্তু, জানেন কি, যে খেলোয়াড়রা এভাবে দেশকে এশিয়ান গেমসে, গর্বিত করেছেন, তাঁরা ঠিক কোথা থেকে উঠে এসেছেন? এর মধ্যে হেপ্টাথলিট কন্যাকে সাফল্যের রাস্তায় এগিয়ে দিতে কর্ণাটকের বল্লারিতে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকানের ওপর নির্ভর করে অদম্য লড়াই চালিয়েছেন এক বাবা। কুর্গের একজন কফি বাগানের মালিকের ছেলে টেনিসে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ফরিদাবাদের একজন পেট্রোল পাম্প স্টেশনের কর্মী লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন, যাতে তাঁর মেয়ে ট্র্যাক-অ্যান্ড-ফিল্ডের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারে।

Advertisment

সেখান থেকে দুই রাজ্য দূরে, মান্ডির একজন পিস্তল শুটারের বাড়ি। পরিবারকে অবশ্য ছেলের জন্য বিশেষ লড়াই করতে হয়নি। কারণ, ওই শুটার একটি পেট্রোল পাম্পের মালিক। একজন হকি ফরোয়ার্ডের বাবার আবার বারাণসীতে ছোট শাড়ির দোকান আছে। চেন্নাইয়ের এক টেনিস খেলোয়াড়ের বাবা-মা চালান টেক্সটাইল ব্যবসা। এক স্প্রিন্টারের বাবা পাল্লাকোডের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেন। এক ব্যাডমিন্টন তারকার পরিবার মুম্বইয়ে একটি হোটেলের মালিক। এই সব গল্প, গোটা ভারতের ছবি। যার ভূগোলের বিস্তৃতি, শ্রেণি এবং সামাজিক পরিস্থিতির কঠিন বিভাজনজুড়ে একটাই মিল, তা হল খেলা। এই ক্রীড়াবিদরা ব্যক্তিগত জীবনে আলাদা বিশ্বে বেড়ে উঠলেও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব সবাইকে একসারিতে এনে দাঁড় করিয়েছে। যার ফল, হাংঝো এশিয়ান গেমসে ভারতের সাফল্য।

Happy New Year: Look where most of India’s medals come from — village & town, under Rs 5-lakh annual income, farmers’ families
ইউপির সোনভদ্রের দিনমজুরের ছেলে, রাম বাবু (ওপরে তার বাড়ি) কোভিড-এ NREGS-এর অধীনে কাজ করতেন। তিনি একটি রেস-ওয়াকিং-এ ব্রোঞ্জ জিতেছেন।

এশিয়ান গেমস শেষ হওয়ার পর থেকে, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ১৫ জন সাংবাদিক পদকজয়ী ক্রীড়াবিদদের প্রত্যেককে ট্র্যাক করেছেন। তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছেন। অ্যাথলিটদের একটি প্রশ্নাবলি পূরণ করতে দিয়েছেন। যা তাঁদের অসাধারণ গল্পগুলো তুলে ধরেছে। এসব গল্পই সাক্ষী যে, খেলাধুলোয় দেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ অংশ নিতে শুরু করেছেন। গেমসে যে ব্যক্তিগত এবং দলগত মিলিয়ে ২৫৬ জন ক্রীড়াবিদ পদক জিতেছেন, তাঁদের মধ্যে-

india's medal tally, india athletes
খেলাধুলা বিভিন্ন স্তরের মানুষকে একইস্তরে টেনে নিয়ে এসেছে।
  • পদক বিজয়ীদের ক্ষেত্রে মহিলা-পুরুষ অনুপাত ছিল ৪৩:৫৭ শতাংশ। যা ক্রীড়া সাফল্যের ক্ষেত্রে একটি সংক্ষিপ্ত লিঙ্গ ব্যবধানের প্রতীক। দুই দশক আগে এই অনুপাত ছিল আনুমানিক ৩৬:৬৪ এবং ২০১৮ সালে এটি প্রায় ৪০:৬০-এ দাঁড়ায়।
  • ২৫৬ পদকজয়ীর মধ্যে ৬৮ জন, অর্থাৎ- মাত্র এক চতুর্থাংশের বেশি ক্রীড়াবিদ জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ ২৫টি শহরের একটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন। পদকপ্রাপ্তদের এক তৃতীয়াংশেরই বাড়ি গ্রামীণ এলাকায়।
  • পরিবারের প্রধান যেখানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন, সেই বাড়িগুলিই ভারতকে ৪০টি পদক দিয়েছে। যা স্পষ্ট বুঝিয়েছে যে আয়ের অনিশ্চয়তা রয়েছে, এমন বাবা-মায়েরাও বাচ্চাদের খেলাধুলার স্বপ্নকে সফল করতে চাইলে সফল করতে পারেন।
  • ২৪৪ জন ক্রীড়াবিদের পরিবার তাঁদের নাম প্রকাশ না-করার শর্তে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে বার্ষিক পারিবারিক আয় কত, তা জানিয়েছেন। এই সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ বা মোট ৫০টি পরিবার বছরে ৫০,০০০ টাকার কম উপার্জন করত। সেই সময় বাড়ির ছেলে বা মেয়েটি খেলা শুরু করেছিল। যা স্পষ্ট করেছে যে, খেলাধুলার সুবিধা ঠিকমত থাকলে দেশের ক্রীড়া প্রতিভারা আরও ভালো ফল করতে পারেন।
  • পদকপ্রাপ্তদের দলে স্থায়ী আয় এবং স্থায়ী সরকারি চাকরিওয়ালা পিতামাতা/অভিভাবকদের সন্তান ছিলেন মাত্র ৩৩ জন। যা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, সরকারি চাকরিজীবী পরিবারগুলো এখনও খেলাধুলাকে সন্তানদের বিকল্প কেরিয়ার হিসেবে ভাবে না।
  • বেশিরভাগ পদক এসেছে ৬২টি কৃষিজীবী পরিবার থেকে। মাত্র এক ডজনের বেশি পদকজয়ী ক্রীড়াবিদের পরিবারের সেনা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। আর, ৪৪টি পদক এসেছে সেই সব পরিবার থেকে, যাঁদের পরিবারের নিজস্ব ব্যবসা ছিল।
  • ২০২৩ এশিয়ান গেমসে পদক পাওয়া ৪৮ জন মহিলা ক্রীড়াবিদের তাঁদের খেলার সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল একাডেমিতে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ছিল ৫০।
  • এই ক্রীড়াবিদদের বেশিরভাগই তাঁদের খেলাধুলার সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচিত হয়েছিলেন। তাঁরা গ্রামীণ এবং তৃতীয় শ্রেণির শহর থেকে উঠে এসেছেন। যা দেখায় যে, প্রাথমিক ক্রীড়া সুবিধা এবং বিশেষজ্ঞদের পদ্ধতিগত কোচিং শহরের বাইরে প্রতিভা খুঁজে বের করার কাজ করেছে। আর, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন স্থানীয় বেসরকারি প্রশিক্ষকরা।
  • সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদ তাঁদের খেলাধূলা এবং শিক্ষাগত কেরিয়ারে ভারসাম্য বজায় রেখেছেন। সমীক্ষা বলছে, ২০ বছর বা তার বেশি বয়সি ২৩২ জন ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ১৩৫ জন কলেজ স্নাতক। ২১ জন তাঁদের স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। মজার বিষয় হল, এই স্নাতক-অ্যাথলিটদের মধ্যে অন্তত ৫৫ জনের বাবা-মা দ্বাদশ শ্রেণির পরে আর লেখাপড়া করেননি।
india's medal tally, india athletes
এশিয়াডে পদকজয়ী আমাদের অ্যাথলিটরা।

২০৩৬ সালে ভারত অলিম্পিক আয়োজনের লক্ষ্যে এগোতে চাইছে। তার আগে বিষয়গুলো বোঝা জরুরি। বহু-বিলিয়ন ডলারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) সাধারণ অর্থের মালিক পুরুষদের রাতারাতি কোটিপতিতে পরিণত করে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু অন্যান্য খেলাগুলোর প্রধান চালক। নতুন পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য তাই একটি চাপ থাকবেই।

আরও পড়ুন- ভেবেছিলাম মরেই গিয়েছে…. পন্থের মারাত্মক দুর্ঘটনায় মাথায় বাজ পড়ে টিম ইন্ডিয়া তারকার

বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদ বলেছেন যে তাঁরা, তাঁদের পোস্ট-প্লেয়িং কেরিয়ার নিয়ে চিন্তা করেননি। নিয়োগযোগ্য বয়সের পদকপ্রাপ্তদের প্রায় এক-চতুর্থাংশের কোনও চাকরি ছিল না। রাষ্ট্রায়ত্ত (পিএসইউ) এবং অন্যান্য সরকার-চালিত সংস্থাগুলো এখনও দেশের ক্রীড়াবিদদের সবচেয়ে বড় নিয়োগকর্তা। কিন্তু, দেখা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র ১৩ জন ক্রীড়াবিদ বেসরকারি সংস্থাগুলোতে চাকরি পেয়েছেন। গত অক্টোবরে একটি মত বিনিময়ের ক্ষেত্রে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী অভিনব বিন্দ্রা এমন একটি সিস্টেম ডিজাইন করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে ক্রীড়াবিদদের দ্বৈত কেরিয়ার অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা উচিত।

আরও পড়ুন- নতুন বছরে অপেক্ষা করছে ধুন্ধুমার ফুটবল যুদ্ধ, মেসি-রোনাল্ডো থেকে গুয়ার্দিওলা- কী কী দেখার

বিন্দ্রা বলেছেন, 'আমাদের সত্যিকার অর্থে যে বিষয়টিতে ফোকাস করতে হবে তা হল খেলাধূলায় দ্বৈত কেরিয়ার। সমস্ত পশ্চিমী দেশগুলোতে খুব কম ক্রীড়াবিদ রয়েছেন, যাঁরা সারাদিন শুধু খেলাধুলা করেন। আমাদের ধীরে ধীরে সেই দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ক্রীড়াবিদদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।' পরিসংখ্যান বলছে যে পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেট দলের ১৬ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে আট জনই ক্লাস ১০ বা ১২-এর পরে তাঁদের শিক্ষাগত ডিগ্রি অর্জনে বিরতি দিয়েছেন। তবে, ক্রিকেটই একমাত্র খেলা নয়, যেখানে বেশিসংখ্যক স্কুল ড্রপআউট রয়েছে। কাবাডি এবং দাবা, যেখানে তরুণ ভারতীয় ব্রিগেড বিশ্বে ঝড় তুলছে, সেখানেও ক্রীড়াবিদরা ১০ম বা ১২ শ্রেণির পরে তাঁদের শিক্ষাগত যাত্রায় ইতি টেনেছেন।

Indian Express Asian Games Sports News sports
Advertisment