আইএসএল চলছে রমরমিয়ে। দেশি বিদেশি তারকাদের পাশাপাশি আলোচনায় কোচেরাও। এর মধ্যেই আক্ষেপ নতুন বাঙালি ফুটবলার সেভাবে উঠে আসছেন না। আইএসএলের বৈভবের দুনিয়ায় কোনো নতুন বাঙালি মুখ উঠে না এলেও কার্যত নিঃশব্দেই আলো কেড়ে নিচ্ছেন আইলিগে খেলা এক বাঙালি-হীরা মন্ডল। মহামেডানের জার্সিতে হীরের দ্যুতি ছড়াচ্ছেন বাঙালি তারকা।
আইসিসির চলতি বছর থেকেই মাসের সেরা ক্রিকেটার বেছে নিচ্ছে। অনেকটা সেই ধাঁচেই ফেডারেশনের তরফে প্রত্যেক মাসেই সেরা একাদশ বাছাই করা হচ্ছে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। জানুয়ারি মাসে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে যে একাদশ বাছাই করা হয়েছে সেখানে দেশি বিদেশি ফুটবলারদের ভিড়ে জ্বলজ্বল করছেন হীরা মন্ডল। একমাত্র বাঙালি ফুটবলার হিসাবে।
আরো পড়ুন: ডার্বির গুরুত্বই জানেন না ব্রাইটরা! প্রিয় দলের হারে বিস্ফোরণ ডগলাসের
সাদা কালো জার্সিতে রঙিন পারফরম্যান্স মেলে ধরা হীরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বলছিলেন, "ফেডারেশনের একাদশে জায়গা পাওয়ায় ভালো লাগছে। দলের সতীর্থরা আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কোচ জোসে হেভিয়াও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন।"
হীরা মন্ডলের উঠে আসার গল্প কিন্তু উপেক্ষার সিঁড়ি বেয়ে। বারবার ব্রাত্য হয়েছেন। ফিরে এসেছেন ফিনিক্স পাখির মত। পিয়ারলেসের জার্সিতে খেলে প্রথমে নজর কাড়েন। বছর কয়েক আগে হীরা মন্ডলের খেলায় প্রভাবিত হয়ে সইও করায় ইস্টবেঙ্গল।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন হিরা। তবে আইলিগে খেলার সুযোগ জোটেনি। ক্লাবে সই করে একদিনও স্প্যানিশ কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেজ-এর তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করতে পারেননি। বাতিল ফুটবলারকে কর্তারা বলেছিলেন, দার্জিলিং গোল্ড কাপে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলে তবেই মূল দলে তাঁকে সুযোগ দেওয়া হবে।
দার্জিলিং গোল্ড কাপে নিজেকে প্রমাণ করে ফিরেও এসেছিলেন পিয়ারলেসে খেলা হীরা। তবে দলে আর ঢুকতে পারেননি বাঙালি প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার। পরে রিলিজ করে দেওয়া হয় তাঁকে।
ইস্টবেঙ্গল থেকে উপেক্ষিত হয়ে মোহনবাগানেও খেলার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল হীরার। তবে সবুজ মেরুনেও শেষ পর্যন্ত সই করা হয়নি।
দুই ক্লাবের পক্ষ থেকে ব্রাত্য হওয়ার পরে হীরার ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায় মহামেডান। সেখানেই নতুন করে নিজেকে চেনানোর দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি।
আইলিগে প্রতি ম্যাচেই প্রথম একাদশে খেলছেন। মনে রাখার মত পারফরম্যান্স করছেন। ট্রাউ এফসির বিরুদ্ধে গোলও পেয়েছেন।
আরো পড়ুন: কোচ রবি ফাউলারকে চিনি না! ডার্বির আগে বিস্ফোরক বাগানের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান
কীভাবে এই রূপকথার উত্থান? হীরা বলছিলেন, "ডুরান্ড কাপে মোহনবাগানের বিপক্ষে খেলার সময় চোট পেয়েছিলাম বাঁ পায়ের গোড়ালিতে। একমাস মাঠের বাইরে বসে থাকতে হয়। সেই চোটের সময়েই প্রতিজ্ঞা করি, আরো ভালোভাবে চেনাতে হবে নিজেকে। তারপর চোট সারিয়ে সিকিম গভর্নেন্স কাপে ভালো খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করি। দ্বিতীয় ডিভিশনের আইলিগ তারপরে লকডাউনের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলি। দ্বিতীয় ডিভিশনের আইলিগে সেরা পাঁচজন ফুটবলারের তালিকায় জায়গাও করে নি-ই!"
আইলিগের সেরা বাঙালি প্রতিনিধি এখনো স্বপ্ন দেখেন ইস্ট-মোহনের জার্সিতে সেরার সেরা লিগ আইএসএল খেলার। সেই লক্ষ্যেই আপাতত কঠোর পরিশ্রম করার ব্রত নিচ্ছেন, রাত-দিন, সাত দিন!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন