scorecardresearch

ফিরে দেখা ১৯২০, ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে কারা ছিলেন ক্লাবের প্রাণপুরুষ?

রাত পেরোলেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের আরও একটা জন্মবার্ষিকী। প্রাক শতবর্ষ উদযাপনের আনন্দে মেতে উঠবে ক্লাব। লাল-হলুদ পতাকা উঠবে বিশ্বের ২০০টি দেশে। সেই ১৯২০ থেকে পথচলা শুরু বাংলা ময়দান তথা ভারতীয় ফুটবলের বটবৃক্ষের।

রাত পেরোলেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের আরও একটা জন্মবার্ষিকী। প্রাক শতবর্ষ উদযাপনের আনন্দে মেতে উঠবে ক্লাব। লাল-হলুদ পতাকা উঠবে বিশ্বের ২০০টি দেশে। সেই ১৯২০ থেকে পথচলা শুরু বাংলা ময়দান তথা ভারতীয় ফুটবলের বটবৃক্ষের। আজ আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে এই ক্লাব। সুদীর্ঘ ইতিহাসের সঙ্গী সে। প্রতিবাদের স্ফুলিঙ্গ থেকে জন্ম নেওয়া ক্লাবের মশাল আজও জ্বলছে সমর্থদকের মনে।

 

আজ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সভাপতি পদে রয়েছেন  ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত, সচিব পদ সামলাচ্ছেন কল্য়াণ মজুমদার, সহ-সচিবের ভূমিকায় পাওয়া যায়  ডাঃ শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তকে। ক্লাবের শীর্ষ কর্তা হিসেবে পাওয়া দেবব্রত সরকারকে। কিন্তু ১৯২০ সালে যখন ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তখন এই ক্লাবের প্রাণপুরুষ কারা ছিলেন? বা কারা ছিলেন কর্মকর্তার চেয়ারে? এই প্রজন্মের কাছে হয়তো উত্তরগুলো নেই। কিন্তু ইতিহাসকে উপেক্ষা করে আগামী লেখা সম্ভব নয়। এই প্রতিবেদনে রইল লাল-হলুদের জন্মলগ্নে জড়িত মানুষগুলোর কথা।

আরও পড়ুন: কেন ইস্টবেঙ্গলের জার্সির রং লাল-হলুদ?

১৯২০-র ২৮ জুলাই কোচবিহার কাপে মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে জোড়াবাগানের খেলা চলছিল। জোড়াবাগানে খেলতেন পূর্ববঙ্গের ছেলে শৈলেশ বসু। কিন্তু প্রায়ই তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়া হতো। তাঁর চেয়ে অনেক সাধারণ মানের ফুটবলাররা সুযোগ পেতেন। অথচ তাঁকে থাকতে হতো রিজার্ভ বেঞ্চে। এই নিয়ে শৈলেশের মনে চাপা অভিমান আর অসন্তোষ ছিল। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এই ম্য়াচেই তাঁকে খেলালো না জোড়াবাগান। ক্ষোভে ফেটে পড়েন শৈলেশ। ছেড়ে দেন ক্লাব। শোনা যায় তাঁকে না-খেলানোর পিছনে মোহনবাগানেরও চক্রান্ত ছিল।

জোড়াবাগান ক্লাবের সহ-সভাপতি ছিলেন সুরেশচন্দ্র চৌধুরি। ময়মনসিং জেলার টাঙ্গাইল মহকুমার নাগপুর গ্রামের জমিদার ছিলেন তিনি। ফুটবল অন্তপ্রাণ ছিল তাঁর। দরাজ হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। খেলার জন্য় দু’হাত খুলে খরচ করতে দু’বার ভাবতেন না। শৈলেশকে তিনি অত্য়ন্ত স্নেহ করতেন ভাল খেলার জন্য়। তাঁকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে না-খেলানোর জন্য় আপত্তি জানান। অথচ ক্লাব তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। আর এই ক্লাবেও প্রচুর টাকা খরচ করেছিলেন সুরেশবাবু। তিনিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ক্লাব ছেড়ে বেরিয়ে আসার। যে ক্লাবে তাঁর কথারই দাম নেই, এমনকী তাঁর সুপারিশ করা কুশলী ফুটবলারকেই খেলানো হয় না, সে ক্লাবে তিনি আর এক মুহূর্তও থাকবেন না। অপমানে আর প্রতিবাদে জন্ম দেন আজকের ইস্টবেঙ্গলের।

সুরেশবাবু ভেবেই ছিলেন পূর্ববঙ্গের সব ফুটবলারকে এক ছাতার তলায় আনবেন তিনি। সেসময় মোহনবাগান, এরিয়ান্স, কুমোরটুলি, টাউন, জোড়াবাগান ও শোভাবাজারে প্রচুর পূর্ববঙ্গের ফুটবলার খেলতেন। কুমোরটুলি পার্কে ছোটদের একটা ক্লাব ছিল। নাম ছিল ক্য়ালকাটা ইউনিয়ন। সেই ক্লাবেই তাঁর চোখ পড়ে। ঠিক করেন এই ক্লাবকেই তিনি অন্য় উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। নতুন সংগঠনের নাম রাখলেন ইস্টবেঙ্গল। পূর্ববঙ্গের আবেগটা ধরতেই এই নামকরণ তাঁর। সুরেশবাবুর কলকাতাতেও বেশ নামডাক ছিল। ধনীদের একজন হিসেবেই গণ্য় করা হতো তাঁকে। সুরেশবাবুর পাশে শহরের আরও ধনী ও নামী মানুষরা আসেন। বাংলাদেশের ভাগ্য়কূলের রায়বাহাদুর তড়িৎভূষণ রায়কে নতুন সংগঠনের কথা বলতেই তিনি পাশে থাকার জন্য় এক বাক্য়ে রাজি হয়ে যান। তাঁরও ইস্টবেঙ্গল নামটা মনে ধরে যায়। ১৯২০-র পয়লা অগাস্ট কুমোরটুলিতে তড়িৎভূষণের বাড়িতেই এক সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে জন্ম নিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

দেখে নেওয়া যাক সে সময় কারা ছিলেন কর্মকর্তার চেয়ারে:

সভাপতি: অধ্য়ক্ষ সারদারঞ্জন রায়

যুগ্ম-সম্পাদক: সুরেশ চৌধুরি ও তড়িৎভূষণ রায়

কার্যকরী সমিতি: নন্দলাল রায়, ননীলাল রায়, কেশব গোস্বামী, নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ রায় চৌধুরি, বনোয়ারিলাল রায়, বিজয় রায়, শৈলেশ বসু, ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ রায় চৌধুরি, নসা সেন, পুলিন বিহারী রায় ও পঙ্কজ গুপ্ত।

তথ্য়সূত্র: ‘ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল’, শান্তিপ্রিয় বন্দ্য়োপাধ্য়ায়

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Sports news download Indian Express Bengali App.

Web Title: History behind east bengal club126069