Advertisment

স্রেফ গোলাপি বল নয়, অনেক কিছুতেই প্রথম ইডেন

তার দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম হওয়া অভ্যাস করে ফেলেছে ইডেন গার্ডেনস। গত তিন দশকের ইতিহাস ঘেঁটে তারই কিছু উদাহরণ বের করলাম আমরা

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
eden gardens, pink ball test

ভারতের প্রথম পিঙ্ক বল টেস্টের টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি ইডেনে। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

ইডেনে গার্ডেনসের পিচে ২২ নভেম্বরের টেস্ট ম্যাচ একাধিক নিরিখেই প্রথম। ভারতের প্রথম দিন-রাতের টেস্ট ম্যাচ, ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম গোলাপি বলের আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ, এবং বিসিসিআই সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম বড় মাপের অনুষ্ঠান। কিন্তু তার দীর্ঘ ইতিহাসে অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম হওয়া অভ্যাস করে ফেলেছে ইডেন গার্ডেনস। গত তিন দশকের ইতিহাস ঘেঁটে তারই কিছু উদাহরণ বের করলাম আমরা:

Advertisment

ময়দানে ফিরল দক্ষিণ আফিকা

বর্ণবৈষম্য ভিত্তিক রাষ্ট্রনীতি 'অ্যাপারথাইড' ঘুচিয়ে দুই দশকের ক্রিকেটীয় বনবাসের শেষে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফেরার অনুমতি পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এবং সেই 'কামব্যাক ম্যাচ'-এর পটভূমি হিসেবে নির্বাচিত হয় ইডেন গার্ডেনস। নেপথ্যে ছিলেন তৎকালীন বোর্ড সভাপতি প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া, এবং ইউনাইটেড ক্রিকেট বোর্ড অফ সাউথ আফ্রিকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলি বাখর। এটি ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ওয়ান-ডে ম্যাচ।

বলা বাহুল্য, দক্ষিণ আফ্রিকানদের কোনও ধারণাই ছিল না, তাঁদের জন্য কী অপেক্ষা করে রয়েছে। প্রায় এক লক্ষ দর্শক তাঁদের দেখতে এলেন শুধু নয়, হই-হুল্লোড় করে, পটকা ফাটিয়ে, রীতিমত উৎসব পালন করলেন মাঠে। একাধারে স্তম্ভিত এবং মুগ্ধ সাউথ আফ্রিকান দল ম্যাচ হেরেও মাঠ প্রদক্ষিণ করে সেদিন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল ইডেনকে।

eden gardens, pink ball test ১৯৯১ সালের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইল ছবি

প্রথম আলো

ভারতে শুধু নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশেই প্রথম ফ্লাডলাইট বসানো হয় ইডেনে। এবং ফ্লাডলাইটের আলোয় প্রথম ম্যাচ - হিরো কাপ সেমি-ফাইনাল, ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ১০ নভেম্বর, ১৯৯৩। শেষ ওভারে অবিস্মরণীয় বোলিং করে যে ম্যাচ মোটামুটি একা হাতে জিতে নিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী শচীন রমেশ তেন্ডুলকর।

অনেকেই হয়তো জানবেন না এই ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকার আরও একটি কারণ। সেই প্রথম দূরদর্শনের পাশাপাশি কোনও বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা দেখা যায় ভারতের কোনও ক্রিকেট মাঠে। যৌথভাবে এই ম্যাচ সম্প্রচার করে দূরদর্শন এবং প্রখ্যাত বহুজাতিক সংস্থা আইএমজি-র মালিকানাধীন জনপ্রিয় খেলার অনুষ্ঠান ট্রান্স-ওয়ার্ল্ড স্পোর্ট।

হরভজনের হাতযশ

ইডেন গার্ডেনস, ১১-১৫ মার্চ, ২০০১, ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের কথা উঠলেই কথা উঠবে এই টেস্ট ম্যাচের। 'ফাইটব্যাক' কাকে বলে, সেই পাঁচদিন ধরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়া এবং তাঁর দল। এবং যমের মতো ভয় করতে শিখেছিলেন তিন ভারতীয়কে - দুজন অবশ্যই ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়। কিন্তু তৃতীয় জন হলেন সর্দার হরভজন সিং, যিনি এই ইডেনের মাটিতে নিজের ছাপ রেখে গেলেন টেস্ট ম্যাচে হ্যাট-ট্রিক নেওয়া প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে।

eden gardens, pink ball test সেদিনের হরভজনের উল্লাস

যখনই এই ম্যাচের কথা লেখা বা বলা হয়, লক্ষ্মণ-দ্রাবিড়ের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের কথাই হয় বেশি, সঙ্গত কারণেই হয়। কিন্তু হরভজনের ৭৮ রানে ৬ উইকেট না হলে যে এই ম্যাচ ড্র করত অস্ট্রেলিয়া, সেকথা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই।

বিরাট প্রতিশ্রুতি

তখনও মূলত 'দিল্লির প্লেয়ার' এই সদ্য তরুণ। আজ থেকে দশ বছর আগের কথা, ২০০৯ সাল, ইডেনে চলছে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার ওয়ান-ডে ম্যাচ। পরিসংখ্যান দিতে হলে বলতে হয়, ৩১৫ করেও জিততে পারে নি শ্রীলঙ্কা। মাত্র তিন উইকেট খুইয়ে ৩১৭ করে ভারত। এবং গৌতম গম্ভীর একাই তোলেন ১৫০। কিন্তু অনেকেই মনে রাখেন নি গম্ভীরের ব্যাটিং পার্টনারের কথা। ২১ বছরের ওই ব্যাটসম্যান সেদিন ১০৭ রান করেছিলেন, জীবনের প্রথম ওয়ান-ডে সেঞ্চুরি। এবং চিনিয়ে দিয়েছিলেন নিজের জাত। নাম? বিরাট কোহলি।

ভাবতে গেলে, এই ম্যাচের পর থেকেই কিন্তু ধীরে ধীরে 'চেজার' হিসেবে নিজেকে বিশ্বসেরার তালিকায় নিয়ে আসেন বিরাট। আজ তিনি সেই তালিকায় কত নম্বরে, তা আপনারাই বলবেন।

Advertisment