Advertisment

প্রিয় ইস্টবেঙ্গল নয়, পুজোর আগেই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান দিল বেঙ্গালুরু! আবেগে একাকার লজেন্স মাসি

পুজোর আগেই জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার পেয়ে গেলেন ময়দানের প্রিয় লজেন্স মাসি। বেঙ্গালুরু এফসির তরফে বেনজির সম্মান পেলেন যমুনা দাস।

author-image
Subhasish Hazra
New Update
NULL

জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন রিসিভ করছেন। বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে গাড়ি। তারপরে নামি-দামি তারকাদের সঙ্গে লাঞ্চ, গল্প-গুজব! ইস্টবেঙ্গল অন্ত-প্রাণ যমুনা দাসের জীবন অনেকটাই বদলে গেল রবিবারের পর।

Advertisment

ময়দানে পরিচিত লজেন্স দিদি নামে। ছোট ছোট রাংতায় মোড়া লজেন্স বিক্রির হিসাব অবশ্য রাখেন না। লজেন্স বিক্রি আসলে যে অছিলা। প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাতে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ময়দানে নিত্য আনাগোনা আগরপাড়ার যমুনা দাসের।

বছরের পর বছর, ঘন্টার পর ঘন্টা লজেন্স দিদির জীবনের আস্ত এক সময় কেটে গিয়েছে ফুটবলের মাঠে। কলকাতার লাখো-লাখো সমর্থক তো বটেই ফুটবলারদের সঙ্গেও সেই সূত্রে নাড়ির টান লজেন্স দিদির। শিরায় শিরায় লাল-হলুদ রক্ত। সেই রক্তের তেজ কখনও তাঁকে টেনে আনে লেসলি ক্লডিয়াস সরণি, কখনও আবার যুবভারতীতে।

আরও পড়ুন: গড়গড় করে বাংলা বলেই ম্যাচে গোল! ইস্টবেঙ্গলের এলিয়ান্দ্রর কীর্তিতে শোরগোল, দেখুন ভিডিওয়

কলকাতার একনিষ্ঠ এই সমর্থককে জীবনের সম্ভবত শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল কিংবা কলকাতার এটিকে-মোহনবাগান নয়, বেঙ্গালুরু এফসি। পুজোর আগেই পুজোর খুশি এনে দিলেন সুনীল-সন্দেশরা। ডুরান্ড কাপে খেলার জন্য বেঙ্গালুরু এফসি আপাতত কলকাতায়। রবিবারে ডুরান্ডের ফাইনালে সুনীলরা খেলবেন মুম্বই সিটি এফসির বিরুদ্ধে।

তার আগে বুকে ইস্টবেঙ্গলের অদৃশ্য পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো লজেন্স মাসিকে 'ট্রিট' দিল বেঙ্গালুরু। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে যমুনা দাস আবেগে থরথর করে কাঁপছিলেন। "যা অভিজ্ঞতা হল, তা স্বপ্নেরও অতীত। বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল। তারপরে আমাকে রিসিভ করলেন স্বয়ং টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন। তারপরে সবাই মিলে একসঙ্গে লাঞ্চ করলাম টিম হোটেলে। আমি এখনও বাকরুদ্ধ। এরকমভাবে যে কেউ সম্মান দেবে ভাবতেও পারিনি।" এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছিলেন প্রিয় লজেন্স দিদি।

সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে আলাপ সেই মোহনবাগানে খেলার সময় থেকেই। পেশাদারি ফুটবলের হাতেখড়ি সবুজ মেরুন তাঁবুতে। তারপরে করিম বেঞ্চারিফার বাগানে দ্বিতীয় দফায় খেলে গিয়েছিলেন এক মরশুম। কলকাতাতে খেলার সময়েই চাকরি প্রাপ্তি।

আরও পড়ুন: বাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গল নয়, চ্যাম্পিয়ন তারকা যোগ দিলেন ISL-এর নক্ষত্রখচিত ক্লাবে

কেরিয়ারের কলকাতা পর্বের সময়েই আলাপ ইস্টবেঙ্গলের কার্যত অফিসিয়াল সমর্থক বনে যাওয়া যমুনা দাসের সঙ্গে। শুধু সুনীল-ই নয়, এটিকে মোহনবাগানের জার্সির এখনও হ্যাংওভার না কাটা প্রবীর দাস, সন্দেশ ঝিংগান, ইস্টবেঙ্গলে গত মরসুমের উঠতি নায়ক হিরা মন্ডলের ঠিকানাও এখন বেঙ্গালুরু। একের পর এক পরিচিত ফুটবলারের পাশে বসে লাঞ্চ করে তৃপ্ত লাল-হলুদের দিদি। কোচ সাইমন গ্রেসনও খোঁজ খবর নিয়েছেন তাঁর। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কিছু অর্থও।

আরও পড়ুন: DTDC-র সঙ্গে জুড়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের নাম! কৃতী বঙ্গসন্তান বড় দায়িত্ব নিয়ে লাল-হলুদে

এই বেনজির সম্মান প্রদর্শন প্রিয় ক্লাবের তরফে তো আসেনি! প্রশ্ন উঠতেই পাল্টা যুক্তি নিয়ে হাজির তিনি। বলছিলেন, "ইস্টবেঙ্গলের জন্য আমার সমর্থন বরাবর থাকবে। কোটি কোটি টাকার বিনিময়েও সেই সম্মান কিনে নেওয়া যাবে না। ইস্টবেঙ্গল তো আমাকে সম্মান দেয়, প্রায়ই। বিভিন্নভাবে।"

প্রিয় দলের জন্য জীবন বাজি রাখা, কোনও নেতিবাচক বক্তব্যকে খন্ডন করা- যমুনা দাসের হৃদয়ে যে এখনও লাল-হলুদ রক্তের স্রোত। যে স্রোতে তিনি ভাসবেন আমৃত্যু।

আরও পড়ুন: জর্ডন ও’দোহার্তির জন্য ধন্যবাদ জানাতে বাধ্য হল ইমামি ইস্টবেঙ্গল! উপহার দেওয়া হল জাতীয় পতাকা

ফুটবলের নেশায় জীবন বিতিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করলেও, এখনও পিছু ডাকে অভাব-অনটন। আগরপাড়ার যে বাড়িতে থাকেন, সেখানে এখনও জল দাঁড়ায়। একচিলতে জায়গায় শুয়ে থাকতে হয় ঝমঝম বৃষ্টিতে। এখনও হাতে নেই আধার কার্ডের মত পরিচয়পত্র। বহু দরজায় গিয়েছেন পরিচয় পত্রের জন্য। তবু হয়নি সচিত্র আধার।

publive-image

অভাবের রাজত্বে নেই জগতের একাকী বাসিন্দা যমুনা দাস (এক্সপ্রেস ফটো শশী ঘোষ)

নেই রাজ্যের বাসিন্দা হয়েও যমুনা দাস তবু ফুটবলের টানে বারবার মাঠে ছুটে যাবেন, লাল-হলুদ জার্সিতে তুফান তুলবেন গ্যালারিতে। ক্ষণিকের জন্যও হয়ত ভুলে যাবেন ভাঙা টালির চাল ফেটে নেমে আসা বৃষ্টির ছাঁট, নিচু বসত ডাঙায় একহাঁটু জমে থাকা জল, সংসারে চাল বাড়ন্ত! ফুটবলের ওপর নাম যে জীবন- মাঠে না নেমেও যে বুঝিয়ে দিচ্ছেন লাল-হলুদ প্ল্যাস্টিকের মোড়কে মাঠে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা যমুনা দাস।

Eastbengal East Bengal Kolkata Football Indian Football East Bangal East Bengal Club
Advertisment