/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/06/SM.jpg)
কেন হারল ভারত, কী বলছেন শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়!
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই লিডসের হেডিংলি ত্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা। দ্বীপরাষ্ট্রের আর এই বিশ্বকাপ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। ৯৬-এর বিশ্বচ্য়াম্পিয়নদের এবারের মতো ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠ ইভেন্ট থেক বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়েছে। কিন্তু ভারতের কাছে আজ রয়েছে সুবর্ণ সুযোগ। শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেই লিগ টেবিলে এক নম্বরে উঠে আসবে বিরাট কোহলি অ্য়ান্ড কোং। এই ম্য়াচের প্রিভিউ করলেন আমাদের বিশ্বকাপ বিশেষজ্ঞ শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়।
শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ কার্যত শেষ। ভারতের বিরুদ্ধে তাদের মোটিভেশন কী হতে পারে?
শ্রীলঙ্কার এবারের বিশ্বকাপ একেবারেই ভাল যায়নি। ওরা ৯৬-এর চ্যাম্পিয়ন। একটা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের থেকে যে প্রত্যাশাটা থাকে, সেটা ওরা পূরণ করতে পারেনি। ওদের দলে এক একজন ওয়ার্ল্ড উইনার ছিলেন। কে না ছিলেন এই দলটায়! অর্জুনা রণতুঙ্গা, অরবিন্দ ডিসিলভা, সনৎ জয়সুরিয়া, মুথাইয়া মুরলীধরন, তিলকরত্ন দিলশান, চামিণ্ডা বাস। শ্রীলঙ্কা দলটা সেটা ধরে রাখতে পারল না। ম্য়াচ জিততে পারছে না।
দলটা কিন্তু খারাপ নয়। যদি খারাপ হতো, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতে আসতে পারত না। এখন ওরা একত্রিত হয়ে ওই পারফরম্য়ান্সটা বার করে আনতে পারছে না। কিন্তু এই বিশ্বকাপে কিছু ভাল প্লেয়ার বেরিয়ে এসেছেন। যেমন কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস, দিমুথ করুনারত্নে, আবিস্কা ফার্নান্ডো, ইসুরু উদানা। লাসিথ মালিঙ্গা চলে যাবেন। ওঁর শেষ বছর এটা। সুরঙ্গ লকমল খেলছেন এখনও। কিন্তু পেস বোলার আনতে হবে টিমে। দেশের বাইরে খেলতে গেলে পেসার লাগবেই। কোয়ালিটি স্পিনারও প্রয়োজন। মুরলীধরনের পর সেভাবে ভাল স্পিনার উঠে আসেন নি। অনেক খেলোয়াড় একসঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ায় দলটা একটু টলমল হয়ে গিয়েছে। একই জিনিস অস্ট্রেলিয়ারও হয়েছিল। কিন্তু অজিরা বেঞ্চ স্ট্রেংথ দিয়ে আবার একটা জায়গায় চলে এসেছে।
আজ শ্রীলঙ্কায় অশান্তি-ঝামেলা তো রয়েছেই, পরিকাঠামোও নেই, ফলে সেরকম খেলোয়াড় উঠে আসছে না। এই বিশ্বকাপে ওদের প্লাস পয়েন্ট একটাই। ইংল্যান্ডর মতো বিশ্বের এক নম্বর দলকে হারানো। সেই টিম যে কোনও দলকে হারাতে পারে। তাদের খেলোয়াড় আছে। অভিজ্ঞতা আছে। একত্রিত হয়ে খেলতে হবে। প্রয়োজন একজন ভাল অধিনায়কের।
এই বিশ্বকাপেও মালিঙ্গা স্টার, ভারতের বিরুদ্ধে মালিঙ্গা কি ফ্য়াক্টর হতে চলেছেন?
মালিঙ্গা সবসময় ফ্য়াক্টর। বিশ্বমানের প্লেয়াররা সবসময় জ্বলে ওঠেন। ওঁর শেষ বিশ্বকাপ এটা। ভারতের বিরুদ্ধে ম্য়াচটা স্মরণীয় করে রাখার জন্য় নিজেকে উজাড় করে দেবেন। ভুলে গেলে চলবে না, ওঁর বয়স ৩৫-৩৬। শরীর ভারী হয়ে গিয়েছে। হয়তো পেস কমে গিয়েছে, তা সত্ত্বেও ইয়র্কার, স্লোয়ার বাউন্সার, কাটার, এগুলো রয়েছে ওঁর কাছে। এখনও একটা জায়গায় বল করেন। ভারতের মতো বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে উনি ভাল পারফর্ম করেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে বিদায় নিতে চাইবেন। অবশ্য়ই মালিঙ্গাকে সাবধানে খেলা উচিত।
ইংল্য়ান্ডের মতো দলকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ভারতের বিরুদ্ধে কি অঘটন ঘটাতে পারে?
আমার সেটা মনে হয় না, যদিও ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই। ভারত এক নম্বরে থেকে লিগ শেষ করতে চাইবে। ১৩ পয়েন্টে আছে, ১৫ পয়েন্টে থামতে চাইবে। অবশ্যই এরপর অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্য়াচ রয়েছে। কিন্তু সেটা হাতে নেই এখন। ভারত একে শেষ করলে চার নম্বর দলের সঙ্গে সেমিফাইনাল খেলবে। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বদলে নিউজিল্য়ান্ডের সঙ্গে খেলবে তারা। আইসিসি ক্রমতালিকাতেও ইংল্যান্ড এগিয়ে আছে। শক্তিশালী দলের বিচারেও তারা নিউজিল্যান্ডের থেকে এগিয়ে। অবশ্য়ই নক-আউট পর্যায় ভারতকে যে কোনও দুটো ভাল দলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। এক নম্বরে শেষ করলে একটা মানসিক তৃপ্তি আসে। বুঝিয়ে দেয়, যে কোনওদিন যে কোনও দলকে হারাতে পারি আমরা।
ভারত এক্সপেরিমেন্টের পথে হাঁটলে কী কী পরিবর্তন প্রত্য়াশিত?
আমি চাইব চারে দীনেশ কার্তিক খেলুক। পরিস্থিতি যেমনই হোক। কেদার যাদবকে ছয়-সাতে খেলিয়ে কোনও লাভ হবে না। রানরেট যদি ১৪-১৫ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কার্তিক বা কেদারের থেকে ঋষভ পন্থ অনেক বেশি কার্যকরী হবেন। কার্তিককে চারে খেলিয়ে সেট করে নেওয়া যেতে পারে। শুধু স্ট্রোকই খেলেন না, অনেকক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেন। ধোনির সঙ্গে যদি অন্তত ২০ ওভার খেলে দিতে পারেন তাহলে কিন্তু ভারতের রান অনেকটা বেড়ে যাবে। শেষের ১০ ওভার যদি পাণ্ডিয়া-পন্থ খেলে দেন. তাহলে ভারতের রান অনায়াসে ৩৫০-র গণ্ডী পার করে যাবে। চার নম্বরটা ফ্লোটিং না-রেখে দীনেশ খেলুক।
বিশ্বকাপে ধোনি চূড়ান্ত সমালোচিত হয়েছেন। কী বলবেন তাঁকে নিয়ে?
নতুন করে ধোনিকে নিয়ে কিছু বলার নেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের কথা মাথায় রেখেই বলছি, পূর্বাঞ্চল থেকে উঠে আসা শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার। ওঁর নেতৃত্বে দুবার বিশ্বকাপ (২০০৭, ২০১১) জিতেছি। দেশে ও বিদেশের মাটিতে প্রচুর টুর্নামেন্ট জিতেছি। ওঁর জন্য প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় ত্রি-দেশীয় সিরিজ জিতেছিলাম। ধোনির ওয়ান-ডে রেকর্ড তো অসাধারণ। সবসময় দেখেছি, চাপের মধ্য়ে ব্য়াট করেছেন। কোনও সময় স্বস্তিতে খেলেন নি, ১৪-১৫ বছর ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন এই চাপ নিয়ে। শুরুর দিকের কয়েকটা বছর বাদ দিয়ে, যখন উনি তিনে-চারে নামতেন। পরে অধিনায়ক হয়ে শেষের দিকে নামতেন। সবসময় চাপে ব্য়াট করতেন। এটা তো ঠিক, যে এখনও উনি বিশ্বের সেরা ফিনিশারদের একজন।
আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্য়াচের কথাই ধরুন না। ধোনির ২৮ আর ৫৬ বাদ দিলে ভারতকে কিন্তু জেতার জন্য় বেগ পেতে হতো। ২০০-র কমে স্কোর হয়ে গেলেই কিন্তু আফগানিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঝাঁপিয়ে পড়ত। পিচ দেখে বুঝে গিয়েছিলেন. এই ম্য়াচে এত বেশি রান করা সম্ভব নয়। সেইমতোই অঙ্ক কষে খেলাটাকে চালনা করেছিলেন। সেটাই ভারতকে জেতাতে সাহায্য় করে। বিরাট কোহলির যে ধোনির ওপর অগাধ আস্থা আর সম্মান, সেটা বোঝা যায়, শেষের চার-পাঁচটা ওভারে। নাহলে ধোনির ওপর ক্য়াপ্টেনসিটা ছেড়ে দিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করতে পারতেন না।
কারোর মনে আছে কি না জানি না, শচীনেরও তাঁর কেরিয়ারের ২৪ তম বছরে ৪০-এর ওপরে গড় ছিল। শচীনের পক্ষে যেটা ছিল সাধারণ। তাঁকেও কিন্তু কথা শুনতে হয়েছিল। তিনি কেন অবসর নিচ্ছেন না! ক্রিকেটের ভগবানকেও কথা শুনতে হয়েছে, ধোনিকেও শুনতে হচ্ছে। এটাই নিয়ম। আমরা অত্য়ন্ত দুর্ভাগা, যে এরকম একজন বিশ্বমানের ভারতীয়কে গালাগালি বা ট্রোল করে বিদায় জানাচ্ছি। আমার মনে হয়, ওঁকে ফুলের মালা দিয়ে বিদায় জানানো উচিত। বিশ্বকাপে ভারতের যাই রেজাল্ট হোক না কেন, ধোনির জন্য় একটা অসাধারণ সংবর্ধনার ব্য়বস্থা করা হোক। ভারতীয় দলকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি, ভারত আজ পৃথিবীর কাছে যে সম্মান পায়, তার নেপথ্যে ধোনির অবদান অনস্বীকার্য।