আফগানিস্তান: ২৮৪/১০
ইংল্যান্ড: ২১৫/১০
চলতি বিশ্বকাপের প্ৰথম অঘটন। ইংল্যান্ডকে মাটি ধরিয়ে অঘটনের টুইস্ট এনে দিল আফগানিস্তান। প্ৰথমে গুরবাজের বিস্ফোরক ব্যাটিং, ইকরাম অলিখিলদের দুরন্ত হাফসেঞ্চুরিতে ভর করে আফগানিস্তান স্কোরবোর্ডে ২৮৪ তুলে দিয়েছিল। সেই টার্গেটের গাজর ঝুলিয়েই মুজিব, রশিদ , নবিরা স্পিনের ঘূর্ণিতে নাচিয়ে নাস্তানাবুদ করলেন ইংরেজরা। ২৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা নতুন দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে গুটিয়ে গেল মাত্র ২১৫ রানে। ইতিহাস গড়ে আফগানদের জয় এল ৬৯ রানে।
২০১৫-য় বাংলাদেশ, ২০১১-য় আয়ারল্যান্ডের কাছে অঘটনের হারের সাক্ষী হয়েছিল ইংল্যান্ড। এবার আবার অঘটনের শিকার ইংরেজরাই। এবার ইংল্যান্ডকে বধ করে ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে পড়ল আফগানিস্তান।
উপমহাদেশীয় দলের বিপক্ষে ভারতের পিচে পেস আক্রমণে বাজিমাত করতে চাইছে ইংল্যান্ড। তাই মঈন আলির মত স্পিনার অলরাউন্ডারকে বসিয়ে স্রেফ একজন স্পিন স্পেশালিস্টকে (আদিল রশিদ) নিয়ে দল সাজিয়েছিল ইংল্যান্ড। স্যাম কুরান, রিস টপলে, ক্রিস ওকস, মার্ক উড- একসঙ্গে চার পেসার খেলিয়ে আফগানিস্তান বধ করতে চেয়েছিল ইংরেজরা। সেই স্ট্র্যাটেজিই বুমেরাং হয়ে ফিরে এল রবিবার। দিল্লি সাক্ষী থাকল প্ৰথম অঘটনের।
এই ইংল্যান্ড শিবিরে প্ৰথম আতঙ্ক সঞ্চার করেছিলেন কেকেআরে খেলা আফগান তারকা রহমনুল্লাহ গুরবাজ। ৫৭ বলে ৮০ রানের ঝলসে দেওয়া ইনিংস খেললেন ইংরেজ বোলিং লাইনআপকে নাচিয়ে। হাফসেঞ্চুরি করলেন মাত্র ৩৩ বলে। সবমিলিয়ে নিজের বিস্ফোরক ইনিংসে হাঁকালেন আট বাউন্ডারি। চারবার বল মাঠের বাইরে ফেললেন তিনি। প্ৰথম পাওয়ার প্লে-তেই দুই আফগান ওপেনার ৭৯ তুলে দেন।
তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। ওপেনিং জুটিতে ১১৪ তুলে ফেলার পর আফগানিস্তান ছোটখাটো ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আফগানিস্তান একসময় ১৭৪/৫ হয়ে গিয়েছিল। এরপরেই আফগানিস্তানকে প্রায় তিনশোর কাছাকাছি স্টেশনে পৌঁছে দেন আফগান জার্সিতে চলতি বিশ্বকাপে প্ৰথম খেলতে নামা ইকরাম। ৬৬ বলে ৫৮ করে দলকে টানেন তিনি। লোয়ার অর্ডারে রশিদ খান (২৩), মুজিব উর রহমান (২৮) দলের ইনিংসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
এই রান চেজ করতে নেমে শুরু থেকেই আফগানদের ঘূর্ণিতে নাকানিচোবানি খেল ইংরেজরা। দ্বিতীয় ওভারেই বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে দিয়ে ইংরেজ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন ফজলহক ফারুখি। পাওয়ার প্লে-তেই জো রুটকে বোল্ড করেন মুজিব। এরপরে সময় যত গড়িয়েছে ততই ইংরেজদের পতন ত্বরান্বিত হয়েছে। ধসে গিয়েছে ইংরেজ ব্যাটিং। দাবিদ মালান (৩২), জস বাটলার (৯), লিয়াম লিভিংস্টোন (১০), স্যাম কুরান (১০), ক্রিস ওকসরা (৯) ক্রিজে এসেছেন আর গিয়েছেন।
ক্রিজে একা ইংরেজদের হয়ে লড়াই চালাচ্ছিলেন হ্যারি ব্রুকস। হাফসেঞ্চুরি করে একাই জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন দলকে। তবে ৩৫ তম ওভারে মুজিব ব্রুকসকে ফেরানোর পরেই নিশ্চিত হয়ে যায় ইংরেজদের পরাজয়।
আফগান বোলারদের মধ্যে সফলতম মুজিব উর রহমান এবং রশিদ খান। ৩ উইকেট দখল করেন দুজনেই। নবির শিকার জোড়া উইকেট।
তার আগে প্ৰথমে ব্যাট করতে নেমে ঝড় তুলে দিয়েছিলেন দুই আফগান ওপেনার। কেকেআর-এ খেলা রহমনুল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান নাকাল করে ছাড়লেন গতবারের চ্যাম্পিয়নদের। স্যাম কুরান, ক্রিস ওকস, রিস টপলের মত দুনিয়ার অন্যতম সেরা পেস আক্রমণ। সেই সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোন, আদিল রশিদদের জোড়া স্পিন ফলা। দুনিয়া সেরা এই আক্রমণ-ই নির্বিষ করে দিয়েছিলেন দুই আফগান ওপেনার।
গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান দুজনে ওপেনিং জুটিতেই ১১৪ তুলে দিয়েছিলেন। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে আফগানদের সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ। ওয়ানডেতে ও আফগানদের হয়ে রবিবার সেরা রানের জুটি গড়ে গেলেন।
বিশ্বকাপে আফগানদের ইতিহাসে দ্বিতীয় তারকা হিসাবে ৫০ প্লাস স্কোর করে গিয়েছিলেন গুরবাজ। ২০১৯-এ রহমত শাহ প্ৰথম আফগান ব্যাটার হিসাবে ফিফটি করেছিলেন বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।