বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের ওপর বাবর আজমের নেতৃত্ব কাড়া হতে পারে এমন জল্পনা চলছিল-ই। তবে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার আগেই বাবর আজম পাকিস্তানের তিন ফরম্যাটের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন।
বিশ্বকাপে শোচনীয় অবস্থা হয়েছে পাকিস্তানের। বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম ফেভারিট দল হিসেবে ভারতে পা পড়েছিল পাক দলের। তবে সেমিতে পৌঁছতেও ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান। গ্রুপ পর্বে ৯ ম্যাচে মাত্র চারটে জয় নিয়ে পঞ্চম স্থানে ফিনিশ করেছে পাক দল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের ব্যবধান আর একটু বেশি হলেই পাকিস্তান আফগানিস্তানের পরে ফিনিশ করত।
দলগতভাবে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে পাক দল। ব্যাট হাতে ক্রমাগত ব্যর্থ হয়েছে তারকা খচিত ব্যাটিং লাইনআপ। বাবর-রিজওয়ান-ইমাম উল হকরা ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগেছেন। ক্যাপ্টেন বাবর ওয়ার্ল্ড কাপে একটাও শতরান হাঁকাতে পারেননি। ৯ ম্যাচে মাত্র ৩২০ রান করেছেন। ৪০ গড় সমেত। যা মোটেই বাবর-সুলভ নয়। যে পেসারদের বিশ্বের সেরা আক্রমণ ধরা হচ্ছিল, তাঁরাই টুর্নামেন্টের সবথেকে খরুচে বোলার হওয়ার লজ্জার কীর্তি গড়েছে। হ্যারিস রউফ এশিয়ার প্ৰথম কোনও বোলার হিসাবে কোনও বিশ্বকাপের এক সংস্করণে ৫০০ প্লাস রান খরচ করেছেন। শাহিন আফ্রিদিও প্রায় পাঁচশো রান বিলিয়ে দিয়েছেন। পাওয়ার প্লে-তে নতুন বলে পাক সিমাররা উইকেট নিতেই পারেননি।
এমনকি উপমহাদেশের দল হয়েও টুর্নামেন্টের সবথেকে দুর্বলতম স্পিন বিভাগের আখ্যা পেয়েছে পাকিস্তান। মহম্মদ নওয়াজ, শাদাব খান, ইফতিকার আহমেদরা কার্যত কোনও বিপদ হিসাবে প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।আর গোটা বিশ্বকাপ জুড়েই ধারাবাহিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে পাক দলের পারফরম্যান্স। ওয়াসিম আক্রাম, মঈন খান, বাসিত আলি, ওয়াকার ইউনিস, রামিজ রাজারা তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন পাক দলকে।
বারবার বাবর আজমের নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে দেশে ফিরেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন বাবর আজম। বুধবার বড়সড় বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন, "এখনও স্পষ্ট মনে করতে পারি ২০১৯-এ পিসিবির কাছ থেকে ফোনে নেতৃত্ব পাওয়ার ঘটনা। তারপর গত চার বছরে মাঠ এবং মাঠের বাইরে অনেক উত্থান পতনের সাক্ষী থেকেছি। তবে সবসময়েই পাকিস্তানের গর্ব সম্মান তুলে ধরার সময় প্যাশনেট থেকেছি। সাদা বলের ক্রিকেটে এক নম্বর স্থান অর্জন ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, ম্যানেজমেন্টের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিল। তবে এই যাত্রাপথে পাকিস্তানি সমর্থকদের অকুন্ঠ সমর্থনকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।
আজ তিন ফরম্যাট থেকেই পাকিস্তানের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত কঠিন ছিল। তবে আমার মনে হয়েছে এই সিদ্ধান্তের এটাই উপযুক্ত সময়। তিন ফরম্যাটেই পাকিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করে যাব। নতুন ক্যাপ্টেনকে নিজের অভিজ্ঞতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে সর্বোতভাবে সাহায্য করে যাব। আমার ওপর এত বড় দায়িত্ব ন্যস্ত করার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে আমার ঐকান্তিক ধন্যবাদ জানাতে চাই। পাকিস্তান জিন্দাবাদ।"
২০১৯-এ সরফরাজ খানকে সরিয়ে বাবরকে টি২০-র নেতা ঘোষণা করা হয়। পরের বছরে বাকি দুই ফরম্যাটেও সরফরাজকে বাতিল করে বাবরের হাতে নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড দেওয়া হয়। টেস্টে নেতা ছিলেন আজাহার আলি। সেই ফরম্যাটেও নেতা হয়ে যান বাবর। বাবরের নেতৃত্বে পাকিস্তান টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিতে পৌঁছয়। সেই প্রথমবার কোনও ধরনের বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর স্বাদ পায় পাকিস্তান।