নক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন সাকিব আল হাসান।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে আউটের জন্য কোনও অধিনায়ক আজ পর্যন্ত আবেদন করেননি। সেই নিয়মেই এঞ্জেলো ম্যাথিউসকে টাইম আউট করেছেন বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন। এতে ছিঃছিঃ-কার পড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুনিয়ায়। সাকিবের জার্সিতে জুড়ে গিয়েছে 'ভিলেন' শব্দবান্ধনী। ওয়াকার ইউনিস, বীরেন্দ্র শেওয়াগ, গৌতম গম্ভীর, উসমান খোয়াজা, মার্ক ওয়া, ডেল স্টেইন, সনৎ জয়সূর্যদের মত রথী-মহারথীরা সাকিবকে নিয়ম করে ধুয়ে দিচ্ছেন। ম্যাথিউস নিজে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে দিয়েছেন, সাকিব ক্রিকেটের লজ্জা। নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে এত নিচ-মানসিকতা সম্পন্ন ক্রিকেট দল দেখেননি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহল তো বটেই এবার নিজের দেশের কোচ-ই সাকিবকে ধুয়ে দিলেন। বাংলাদেশের বোলিং কোচ অ্যালেন ডোনাল্ড সাকিবকে একহাত নিয়েছেন।
ঘটনা ফিরে দেখা:
২৫তম ওভারে সমরাবিক্রমা আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন ম্যাথিউজ। জানা যাচ্ছে, খারাপ হেলমেটের কারণে ব্যাট করতে দ্বিধা করছিলেন ম্যাথিউস। চোট লাগার আশঙ্কা ছিল তাঁর। নতুন করে হেলমেট আনার নির্দেশ দেন। সাজঘর থেকে নতুন হেলমেট আসার সময়ের ফায়দা নেন সাকিব। তিনি আউটের দাবি করে বসেন নিয়ম মেনে। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে যা খেলার স্পিরিটের পরিপন্থী।
সেই বিতর্কিত ওভারে বল করছিলেন সাকিব নিজেই। আম্পায়ারের পাশাপাশি ম্যাথিউজ তাঁকেও বোঝানোর চেষ্টা করেন হেলমেটের স্ট্র্যাপ নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাঁর। তাই ক্রিজে নেমেও সময়মত ব্যাট ধরতে পারেননি। আম্পায়ার আউট ঘোষণা করার পর ম্যাথিউসকে দেখা যায় আম্পায়ারের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দিতে। তিনি সাকিব তো বটেই আম্পায়ারের কাছেও নিজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী নিরুপায় হয়ে আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ারও।
ম্যাথিউসকে আউট ঘোষণা করার পর চাইলেই আউট প্রত্যাহার করতে পারতেন সাকিব। ম্যাথিউস সাকিবকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আর্জিও জানান। কমেন্টেটর ইয়ান বিশপ জানিয়েছেন, সাকিবকে সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অন-ফিল্ড আম্পায়ার দু-বার অনুরোধ করেন। তবে বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন কর্ণপাত করেননি। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মাঠ ছাড়তে হয় ম্যাথিউজকে।
ডোনাল্ড কী বললেন?
বাংলাদেশের বোলিং কোচ ডোনাল্ডের এই আউটের পক্ষে মোটেই সায় ছিল না। গত বছর থেকে বাংলাদেশের বোলিং কোচের ভূমিকা পালন করছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি। তিনি ম্যাথিউস আউট হওয়ার সময়েই অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বলে দেন, ক্রিকেটে এই ধরণের আউটের কোনও জায়গাই নেই।
ক্রিকব্লগ-এ তিনি জানিয়েছেন, "ড্রেসিংরুমে আমি একদম চুপচাপ ছিলাম। আমরা ম্যাচের পর করমর্দন করি। শ্রীলঙ্কান ফিল্ডিংয়ের সময় কী ঘটবে আঁচ করতে পারছিলাম। আসলে সৌজন্যের কোনও বালাই থাকবে না। বুঝেই যাই। যখন ওই ঘটনা ঘটল, আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, আমার বোধবুদ্ধি যেন লোপ পেয়েছিল। মনে হচ্ছিল মাঠে নেমে যাই। গিয়ে বলি, 'অনেক হয়েছে। এই আউট সমর্থনযোগ্য নয়।' আমরা সেরকম টিম নয় যাঁরা এই ঘটনা সমর্থন করবে।' এটাই আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল।"
"মাঠে দ্রুত ঘটনা ঘটছিল। তাছাড়া আমি দলের হেড কোচ-ও নই। আমি দায়িত্বে নেই। মরিস ইরাসমাসকে বলতে শুনলাম, 'এঞ্জেলো তুমি এখন মাঠ ছাড়তে পারো।' এঞ্জেলোকে হেলমেট তুলে বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডে আছড়ে ফেলতে দেখলাম। আমি পুরো হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা সকলেই প্রতিপক্ষ হোক বা সতীর্থ- সকলের সম্মান, মর্যাদা, ক্রিকেটের স্পিরিটের কথা বলি। এরকম ঘটনা কখনই দেখতে চাই না।"
"দলের কোনও একজনকে দেখলাম অন্যকে বলছে, আউটের আবেদন করো। তবে এটা হওয়াই উচিত হয়নি। আমার প্রবৃত্তি যেন আমাকে বলছিল, গিয়ে বলি 'ওহে, এমনটা মোটেই হচ্ছে না।' এটা একটা দুরন্ত জয়কে পিছনে ফেলে দেবে। শুধু জয়-ই এটা আদতে সমস্ত আলোচনাকেই সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। শ্রীলঙ্কা বোলিং করার সময় অনেক বিষয়ে খুঁতখুঁত করছিল।"
"সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হত যদি এঞ্জেলোকে বলা হত, 'কোনও চিন্তা নেই বন্ধু, তোমার হেলমেট সারিয়ে ফেল জলদি। তোমার হাতে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে।' শরিফুল ইসলামের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। আয়ারল্যান্ডে একটা টেস্ট ম্যাচে ও ভুল জুতো গলিয়ে মাঠে নেমে গিয়েছিল। নিজের সবুজ বুটের সঙ্গেই সাদা বুট পরে ফেলেছিল। বুট খুলে নতুন করে পরতে কিন্তু অনেক সময় নষ্ট হয়েছিল। আমার কাছে গোটা অভিজ্ঞতা হতাশাজনক হয়ে থাকল। সাকিবের অবস্থা বুঝতে পারছি। ও রিস্ক নিতে চাইছিল না। ওঁর গলায় শোনা, 'আমরা এখানে জিততে এসেছি' মোটেও পছন্দ হয়নি আমার। পুরো ঘটনা দেখা কষ্টকর অন্তত আমার কাছে।"