Advertisment

ম্যাথিউজের মত দুর্ভাগ্যের শিকার হননি সৌরভ! ৬ মিনিট পরেও ব্যাটিং করেন মহারাজ, অদ্ভুত এই কারণে

টাইম আউটের শিকার হওয়া থেকে সৌরভ একবার বেঁচে গিয়েছিলেন, জানুন সেই গল্প

IE Bangla Web Desk এবং IE Bangla Sports Desk
New Update
sourav-matthews

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং এঞ্জেলো ম্যাথিউস (টুইটার)

দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় থেকেছে দূষণ। এমনকি ম্যাচ স্থগিত করার ভাবনাও শুরু হয়েছিল আইসিসির তরফে। তবে এভাবে যে ক্রিকেটীয় দূষণ সহ্য করতে হবে ক্রীড়া-প্রেমীদের, ভাবা যায়নি! যাঁর নেপথ্যে স্বয়ং বাংলাদেশের বিতর্কিত ক্যাপ্টেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন সতীর্থ তামিম ইকবালকে ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে। বিশ্বকাপের শেষ লগ্নে এবার নতুন করে তিনি আলোচনায় এঞ্জেলো ম্যাথিউসকে আউট করে। নিয়ম অনুযায়ী, ম্যাথিউসকে টাইম আউট করেন সাকিব। তবে ক্রিকেট বিশ্ব গর্জে উঠছে ক্রিকেটীয় স্পিরিটের তা পরিপন্থী হওয়ায়।

Advertisment

নিয়ম কী বলছে?

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনও উইকেট পতনের পর নতুন ব্যাটসম্যানকে ৩ মিনিটের মধ্যে ক্রিজে স্ট্যান্স নিতে হবে। আর এই সময়ের মধ্যে ক্রিজে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিস্ট ব্যাটারকে আউট বলে ঘোষণা করা হবে। তবে এই আউটের জন্য বিপক্ষ দলকে আউটের জন্য আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, এই উইকেট কোনও বোলারের শিকার বলে গণ্য হবে না।আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাথিউজ প্ৰথম ব্যাটার হিসাবে এই অদ্ভুত আউটের শিকার হলেন। সৌরভও একবার এই আউটের শিকার হতে হতে বেঁচেছিলেন।এখন দেখে নেওয়া যাক, ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে এই টাইম আউটের খপ্পরে কারা, কীভাবে পড়েছেন:

রাস্তায় জমা জলের জন্য দেরি:

ক্রিকেট বিশ্বে প্রথমবার টাইম আউটের কবলে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার এন্ড্রু জর্ডন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্ৰথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলা ছিল ট্রান্সভাল বনাম ইস্টার্ন প্রভিন্সের। ১৯৮৭ সালের সেই ম্যাচে আগের দিন অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছিলেন প্রভিন্সের এন্ড্রু জর্ডন। তবে পরের দিন ঠিক সময়ে মাঠে পৌঁছতে পারেননি। প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমে যাওয়ায়। তারপরে তাঁকে টাইম আউট দেওয়া হয়।

বর্ণবাদ জমানায় দক্ষিণ আফ্রিকান বোর্ড এই ম্যাচ আয়োজন করেছিল অ-শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারদের জন্য। বর্ণবাদ জমানা ২০০০-এ অবসান হওয়ার পর এই ম্যাচ প্ৰথম শ্রেণির ক্রিকেটের মর্যাদা প্রাপ্ত হয়। আর জর্ডন প্ৰথম টাইম আউটের শিকার হওয়া ব্যাটার হিসাবে ইতিহাসে উঠে যান।

ব্যাটিং করার সময় গল্প-গুজব:

জর্ডনের নাম টাইম-আউট প্রাপ্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ারও আগে ত্রিপুরার হেমুলাল যাদব ছিলেন এমন আউটের শিকার হওয়া প্ৰথম ক্রিকেটার। ১৯৯৭-এ তিনি ক্রিজে ঠিক সময়ে নামতে পারেননি। কারণ হিসেবে বলা হয়, তিনি সতীর্থদের সঙ্গে গল্পগুজবে ব্যস্ত ছিলেন।

নবম উইকেটের পতনের পর হেমুলাল বাউন্ডারি লাইনের ধারেই ছিলেন। আম্পায়াররা ড্রিংকস বিরতি নেন সেই সময়ে। এরপরে হেমুলাল দলের ম্যানেজারের সঙ্গে খোশগল্পে ব্যস্ত ছিলেন। এমনকি ম্যানেজারও তাঁকে ক্রিজে নামার কথা স্মরণ করিয়ে দেননি। সেই ম্যাচ খেলছিলেন টিম ইন্ডিয়ার হয়ে খেলা দেবাশিষ মোহান্তি। ওড়িশা যখন আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন জানায়, হেমুলালকে টাইম আউট দিয়ে দেওয়া হয়।

যুদ্ধের শিকার?

এই গল্পের পুরোটাই অসাধারণ। ১৯১৯-এ সাসেক্স কাউন্টি ম্যাচের দিন হঠাৎ আবিষ্কার করে তাঁদের দলে মাত্র ১০ জন রয়েছেন। মাঠেই তাঁরা ক্লাবের পুরোনো তারকা হ্যারল্ড হেইগেটকে খুঁজে পায়। তাঁকে কোনওরকমে ম্যাচে নামাতে রাজি করে সাসেক্স। প্ৰথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি দেশের হয়ে লড়াই করে সদ্য ফিরেছিলেন। নিয়ে এসেছিলেন রিউম্যাটিজম রোগ। সেই ম্যাচে ব্যাট তো বটেই বল-ও করেননি তিনি।

দ্বিতীয় ইনিংসে সাসেক্স-এর যখন নবম উইকেটের পতন ঘটল, সেই সময় দুই দলের স্কোর সমান সমান হয়ে দাঁড়ায়। হেইগেট তখন ব্যাট করতে নামলেন। নিজের বই 'সানশাইন, সিক্সেস এন্ড সিডার'-এ সেই ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন ডেভিড ফুট। হেইগেট দলের ব্যাটিংয়ের সময় প্যাভিলিয়নে বসেছিলেন নীল শুট পরে। হঠাৎ করেই তিনি মাঠে নামার জন্য উদ্যত হন। তবে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেই মাঠে নামতে পারেননি তিনি। সমারসেট ক্রিকেটাররা টাইম আউটের আবেদন করলে তা গ্রাহ্য হয়। তবে রেকর্ড বইয়ে টাইম-আউট বলে উল্লেখ করা হয়নি। 'এবসেন্ট হার্ট' বলা হয়েছিল হেইগেটকে।

ফ্লাইটে বিলম্ব:

নথিভুক্ত হওয়া তৃতীয় টাইম-আউটের শিকার হয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার ভ্যাসবার্ট ড্রেকস। ২০০২-০৩ সিজনে যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলতেন। বর্ডারের হয়ে ফ্রি স্টেটস-এর বিপক্ষে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। তবে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে তাঁকে টাইম আউটের শিকার হতে হয়। ম্যাচ চলাকালীন তিনি মোটেও দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলেন না। ফ্লাইট দেরিতে আসায় মাঠে সময় মত পৌঁছতে পারেননি তিনি। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলের হয়ে শ্রীলঙ্কায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলছিলেন। ভেবেছিলেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিনিশ করেই ঠিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন। প্ৰথম দিন ব্যাট করতে না পারলেও দ্বিতীয় দিন দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।

সৌরভ-লক্ষ্মণ-শচীনের সেই 'কীর্তি':

বাঙালির সময় যে কী, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন স্টিভ ওয়া। সৌরভ একবার ক্রিজে ৬ মিনিটের বেশি সময় পরে ক্রিজে আসেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে ব্যাট করতে দেওয়া হয়েছিল। কেন জানেন?

২০০৭-এ কেপ টাউন টেস্টে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে চ্যালেঞ্জিং টার্গেট সেট করার উদ্দেশ্যে ব্যাট করছিল। হঠাৎ করেই সৌরভ সেই সময় আবিষ্কার করেন, তাঁকে ব্যাট করতে হবে। দ্বিতীয় ওভারেই দুই ওপেনার আউট হয়ে গিয়েছিলেন। তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নামার কথা শচীনের। তবে ঠিক আগের দিন শচীন মাঠের বাইরে বেশ কিছু সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন ম্যাচ চলাকালীন। তাই নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শচীনের ক্রিজে নামার অনুমতি ছিল না। ওয়াসিম জাফর আউট হন স্থানীয় সময় সকাল ঠিক ১০.৪৩-এ। চতুর্থ রেফারি মারে ব্রাউন জানিয়ে দেন, শচীন ১০.৪৮ না পেরোনো পর্যন্ত শচীন ব্যাট করতে নামতে পারবেন না। অনফিল্ড আম্পায়ার ড্যারেল হার্পার পরে জানান, "প্রতিদিন প্রত্যেক ক্রিকেটারকে জানানো সম্ভব নয় যে তাঁরা লেগ বিফোর, কট এন্ড বোল্ড হতে পারেন। প্লেয়িং কন্ডিশন জানা প্রত্যেক ক্রিকেটারের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে।"

যাইহোক, শচীনের পরবর্তী ব্যাটার ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। তবে তিনি সেই সময় স্নান করছিলেন। লক্ষ্মণ প্রায়ই ইনিংস চলাকালীন স্নান করতেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি সৌরভ ট্র্যাকস্যুট ছেড়ে ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম পরতে থাকেন। এতে আরও সময় নষ্ট হয়। আম্পায়ার হার্পার অধিনায়ক গ্রেম স্মিথকে টাইম আউটের নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করেন। তবে স্মিথ সৌরভের দেরিতে নামার বিষয়ে আপত্তি করেননি। ক্রিজে সৌরভ দ্রাবিড়ের সঙ্গে যোগ দেন নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে।

সেই টেস্টে সৌরভ ভারতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন (৮৯ বলে ৪৬)। ভারত অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৬৯ রানে। এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জয় সহজেই এসেছিল।

যাইহোক, আইসিসির নিয়মে ১৯৮০-তে এই কোড সংযোজিত হয়। প্রাথমিকভাবে টাইম আউটের ক্ষেত্রে সময়সীমা ২ মিনিট থাকলেও ২০০০-এ নিয়ম পরিমার্জন করে তা ৩ মিনিট বাড়িয়ে আনা হয়। ক্রিকেটের প্রথম মুদ্রিত নিয়ম অনুযায়ী, "আউট হওয়ার পর নতুন কোনও ব্যাটারকে ক্রিজে নামার জন্য ২ মিনিট সময় বরাদ্দ করতে হবে আম্পায়ারের তরফে।"

Indian Team Shakib Al-Hasan Sri Lanka Sourav Ganguly Bangladesh Cricket Sri Lanka Cricket Team ICC Cricket World Cup Bangladesh Indian Cricket Team ICC Bangladesh Cricket Team
Advertisment