তাঁকে নিয়ে, তাঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে উত্তাল ক্রিকেট বিশ্ব। সম্মান হারিয়েছেন এক নিমেষে। এর আগেও মাঠে কুখ্যাত সমস্ত কান্ড কারখানা ঘটিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে সোমবারের ঘটনা বোধহয় ছাপিয়ে গেল সমস্ত কিছুকেই। ম্যাথিউসকে যেভাবে আউট করা হল, তাতে গম্ভীর, মার্ক ওয়ার মত প্রসিদ্ধ ক্রিকেটার তো বটেই বর্তমান প্রজন্মের উসমান খোয়াজারাও গর্জে উঠেছেন। টুইটে ভিলেন বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাকিবকে।
তবে এত কাণ্ডের পরেও নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনও হেলদোলই নেই বাংলাদেশি তারকার। তাঁর মধ্যে অনুতপ্ত হওয়ার লেশমাত্র নেই। ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সাকিব বলে দিয়েছেন, "কোনও অনুশোচনা নেই। অনুর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে আমরা ক্রিকেট খেলে আসছি। ২০০৬-এ সম্ভবত আমরা প্ৰথমবার মুখোমুখি খেলেছিলাম। ওঁর আউটটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। তবে নিয়ম তো নিয়ম-ই।"
ক্রিকেটের স্পিরিটকে কি তিনি সম্মান জানান না? সাকিব আরও খুল্লামখুল্লা জানাচ্ছেন, "সেক্ষেত্রে আইসিসির উচিত নিয়ম বদলে ফেলার। সাকিব বলছেন, একটা ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ খেলার গন্ডি ছাপিয়ে অনেকটা। "এটা একটা যুদ্ধ। এতে যা ঘটে তা সবকিছুই ঠিকঠাক।"
ম্যাচের পর করমর্দনে রাজি হয়নি শ্রীলঙ্কান দল। তৌহিদ হৃদয় পরে জানান, "শ্রীলঙ্কাই বেরিয়ে যায়।" কেমন হত যদি সাকিব নিজে ম্যাথিউজের মত পরিস্থিতিতে থাকতেন, এবং শ্রীলঙ্কান দল তাঁর আউটের জন্য আবেদন করত? সাকিবের যুক্তি, "এমন জেতেন হয়, সেই বিষয়ে আমি সতর্ক থাকব।"
ম্যাথিউস জানিয়েছেন, কেবলমাত্র নিয়মের অপব্যাখ্যা নয়, সতর্কতার বিষয়-ও থাকে। অনেকেই বলছেন ত্রুটিপূর্ণ হেলমেট নতুন করে নেওয়ার আগে তিনি কোনওভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটা বল ফেস করতে পারতেন, তারপর হেলমেট বদল করতে পারতেন। তবে ওই একটা বলের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হত তাঁকে। ফিল হিউজ কাণ্ডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনও ব্যাটারই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঝুঁকিতে রাজি থাকেন না। ম্যাথিউসও ভাবতে পারেননি নিয়মের অপব্যাখ্যা করে আউটের আবেদন করে বসবেন সাকিব। কারণ এমনটা ক্রিকেট মাঠে আগে কখনও হয়নি।
শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার তো বলেই দিচ্ছেন, "সবসময়েই আমরা ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলি। এমনকি স্পিনারদের বল কিপ করার সময়েও কিপাররা হেলমেট পরে থাকেন। হেলমেটের স্ট্র্যাপ যে খারাপ, সেটা আগেভাগে কীভাবে বুঝব? আমার ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এরকম ঘটনার তো কখনই সম্মুখীন হইনি।"
"এটা কার দোষ? এটা স্রেফ একটা টেকনিক্যাল ইস্যু। সাধারণ বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করা উচিত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে আম্পায়ারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।"
ইনিংস ব্রেকের সময় চতুর্থ আম্পায়ার আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক জানিয়েছেন, হেলমেটের স্ট্র্যাপ ভেঙে যাওয়ার আগেই ম্যাথিউস নিজের জন্য বরাদ্দ দু মিনিট ফুরিয়ে ফেলেন। গোটা পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কান দল 'হাস্যকর' বলে দাগিয়ে দিয়েছে। ম্যাথিউস ক্রুদ্ধ হয়ে বলে দিয়েছেন, "এখন যদি আম্পায়ারকে জিজ্ঞাসা করা হয়, উনি অন্য উত্তর দেবেন। অন-ফিল্ড আম্পায়াররা দেখেছেন আমার হেলমেটের স্ট্র্যাপের কী অবস্থা হয়েছিল। শেষ ওভারে যদি ৩-৪ রান দরকার- এমন অবস্থায় এরকম পরিস্থিতিতে কী করা হত?"
দুই দলই সেমিফাইনালের দৌঁড়ের বাইরে। দিল্লিতে যে চরম রোমহর্ষক ম্যাচ উপহার দিল দুই উপমহাদেশের দল, এমনটাও নয়। মধ্যম মানের ক্রিকেটে জয়ী হল বাংলাদেশ। মাত্র ৩ উইকেটে। আর ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে আপাতত শিরোনামে সাকিব এবং বাংলাদেশের অখেলোয়াড়চিত আচরণ।