জাতীয় দলে বহু উত্থান পতনের সাক্ষী থেকেছেন। দীর্ঘ দুই দশক জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য তিনি। তবে এবারের মত কলঙ্কের বিশ্বকাপ আর কখনও দেখেননি। হতাশায় তাই ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পরেই অবসরের নেওয়ার কথা জানালেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল। অনেকবার বড় দলকে হারিয়ে অঘটন ঘটিয়েছে বাংলাদেশ। সাত বার বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ফেলেছে।
এখনও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ধারেকাছে না যেতে পারলেও দলটির সর্বোচ্চ কৃতিত্ব ২০১৫-য় অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছনো। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান দ্রুত গতিতে নিম্নমুখী। ক্রিকেটের উদীয়মান শক্তিশালী দল আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডসের কাছেও হারতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হারালেও দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ঘরের মাঠে আফগানদের বিপক্ষে হার হজম করতে হয়েছিল টাইগারদের। আড়াই দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলে ফেললেও বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবলকত্ব ঘোচেনি। নতুন দলের সামনেই হতাশার হার হজম করতে হচ্ছে।
কিছুটা হতাশাতেই তাই আইসিসির প্রকাশ করা ভিডিওয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলে দিয়েছেন, "২০০৭-এ জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর দীর্ঘ সময় কেটে গিয়েছে। বহুদিন খেলছি। ওয়ার্ল্ড কাপে একাধিক সেঞ্চুরি করতে পেরে আমি কিছুটা সৌভাগ্যবানই বটে। ক্রিকেট এমন এক খেলা যা সবসময় চমক নিয়ে হাজির হয়। ওয়ার্ল্ড কাপের অংশ হওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আপাতত এখানে খেলছি।"
এরপরে তাঁর আরও সংযোজন, "সত্যি কথা বলছি, কেরিয়ারের শেষ ওয়ার্ল্ড কাপ খেলছি। পারফরম্যান্স এবং ফিটনেস-ই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের হয়ে আর কতদিন খেলব। হয়ত কয়েকদিন পরে শীঘ্রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাব।"
বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের বিশ্বকাপ অভিযানে একমাত্র আশার আলো নিয়ে আবির্ভাব ঘটেছে মাহমুদুল্লাহর। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে একাধিকবার দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। বারবার টপ অর্ডার বিপর্যয় মুখে পড়েছে। তা সামাল দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। নিউজিল্যান্ড, ভারত দুই ম্যাচেই টাইগাররা ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। তবে বর্ষীয়ান তারকা দুই ম্যাচেই ৪১, ৪৬ করে দলকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেন। দক্ষিণ আফ্রিকা প্ৰথমে ব্যাট করে ৩৮২ তুলেছিল। সেই টার্গেট চেজ করতে নেমেই বাংলাদেশ একসময় ৮১/৬ হয়ে যায়। বিশাল ব্যবধানের হারের লজ্জা কাটিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। সেঞ্চুরি করে দলের হারের ব্যবধান কমিয়ে দেন তিনি। সবমিলিয়ে চলতি ওয়ার্ল্ড কাপে মাহমুদউল্লাহ ১৯৮ রান করেছেন অসাধারণ ৯৯ গড় সমেত। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে তিনিই সফলতম।
অথচ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তিনি মোটেই অটোমেটিক চয়েস ছিলেন না। এশিয়া কাপেও বাদ দেওয়া হয়েছিল তারকাকে। তবে হঠাৎ করেই তামিম ইকবালকে নিয়ে উদ্ভূত বিতর্ক। এবং তামিমের বাদ পড়ায় দলে অভিজ্ঞতা আমদানি করার জন্য একদম শেষ মুহূর্তে সংযোজন ঘটে মাহমুদউল্লাহর।
আর নিজের শেষ বিশ্বকাপ রঙিন করে গেলেন তিনি। দল যতই ভরাডুবির মুখে পড়ুক, তিনি অন্তত স্মরণীয় করে গেলেন এই ওয়ার্ল্ড কাপ ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ঝলক দেখিয়ে।