বরাবরের ভারত-বিদ্বেষী তিনি। ভারতের হারে মাত্রাছাড়া সেলিব্রেশন করেন। বাংলাদেশ সীমিত সংখ্যক যতবারই ওপার বাংলার ক্রিকেটারদের কাছে হেরেছে ততবার-ই উল্লাসে ফেটে পড়েছেন তিনি। শুধু ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচেই তাঁর উদযাপন সীমিত থাকেনি।
অন্য দলের বিপক্ষেও ভারতের হার খুশির কারণ হয়েছে তাঁর। মুশফিকুর রহিম সহ্যই করতে পারেন না ভারতকে। তাঁর কথায়, আচরণে বারবার প্রকাশ পেয়েছে সেই ঘটনা। বাংলাদেশের তামিম, মাশরাফি কিংবা সাকিব বরাবর ভারতীয় ক্রিকেটারদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অন্তত, এমন আচরণ করেননি যাতে ভারতে সমালোচিত হতে হয় তাঁদের। ভারতে আইপিএলে খেলেছেন তামিম-সাকিবরা। দেখেছেন ভারতের ক্রিকেট পরিকাঠামো। বাংলাদেশ এবং ভারতের ক্রিকেটের মধ্যে দূরত্ব শত শত যোজনের সেকথা মানেনও তাঁরা।
তবে এই তালিকায় ব্যতিক্রম মুশফিকুর রহিম। ভারত নাম শুনলেই গা জ্বলে তাঁর। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে বাংলাদেশের কলঙ্কের হার হজম করার পর হঠাৎ করেই আলোচনার শিরোনামে বাংলাদেশের বর্ষীয়ান তারকা। পুরোনো ভারত-বিদ্বেষী স্মৃতি ধাওয়া করল তাঁকে।
ঘটনা ২০১৬-র। সেবার ভারত টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনালে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়েতে ৭ উইকেটে হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। ধোনির দলের সেই হার রীতিমত জমিয়ে সেলিব্রেট করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। বিতর্কিতভাবে ভারতের হারের পরেই নিজের ড্রয়িংরুমের এক ছবি পোস্ট করেন বাংলাদেশি উইকেটকিপার-ব্যাটার। ম্যাচের পর ধোনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সেই ভিডিও শেয়ার করেন মুশফিকুর। এবং ক্যাপশনে লেখেন, "একেই বলে আনন্দ! হাহা, ভারত ওয়ার্ল্ড কাপের সেমিফাইনালে হেরে গেল!"
সেই পোস্ট ঘিরে তুমুল হৈচৈ হওয়ার পর নিজের সপক্ষে সাফাই দিয়ে মুশফিকুর জানান, তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সমর্থক। তিনি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের অপেক্ষা ভারতের হারের জন্যই বেশি উৎফুল্ল হয়েছিলেন, সে তো বলাই বাহুল্য। যদিও বিতর্কের মুখে পড়ে সেই টুইট মুছে দেন তিনি।
সেই পুরোনো টুইটই এবার ভারতীয় সমর্থকরা পাল্টা পোস্ট করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের কাছে বিশাল ব্যবধানে হেরে যাওয়ার পর। পাল্টা টিম ইন্ডিয়ার সমর্থকরা মুশফিকুরকে খোঁচা দিয়ে তাঁর-ই টুইটের বয়ানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লিখছেন, "একেই বলে আনন্দ। হাহা! বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের কাছেও হেরে গেল।" অন্য সমর্থকরাও এই ভাবেই টুইটে ব্যঙ্গ করেছেন বাংলাদেশি তারকাকে।
সেবার-ই প্ৰথম নয়। সেই বিশ্বকাপেই মুশফিকুর রহিম ভারতের বিপক্ষে জয়ের আগেই অগ্রিম সেলিব্রেশনে মেতেছিলেন। তবে মুশফিকুরের সেই উদযাপন কাজে আসেনি। ক্লোজ ম্যাচে ফিনিশিংয়ে ব্যর্থ হয়ে যান তিনি। জয়ের আগেই মুশফিকের সেই সেলিব্রেশন এখনও ক্রিকেট মহলের রসিকতার বিষয়।
এছাড়াও নাগিন ড্যান্স করেও আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। তর্ক-বিতর্কের পরিসর ছাপিয়ে মুশফিকুর আপাতত চরম ট্রোলড ভারতীয়দের হাতেই। নিজের কৃতকর্মের জন্য।
যাইহোক, বাংলাদেশের হারে আরও একবার খলনায়ক হয়ে থাকল দুর্বল ব্যাটিং। মাত্র ২৩০ রান তাড়া করতে নেমে ১৪২-এ অলআউট হয়ে গেল টাইগার বাহিনী। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর মেহেদি হাসান মিরাজের (৩৫)। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কোনও রকমে কষ্টার্জিত ২০ করে যান। দলের বাকি দুই সিনিয়র তারকা সাকিব এবং মুশফিকুরের অবদান যথাক্রমে ৫ এবং ১ রান। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে হাফডজন ম্যাচ খেলার পর বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা মাত্র একটিতে। সেমিফাইনালের আশা শনিবারই সরকারিভাবে খতম হয়ে গেল টাইগারদের।