বিশ্বকাপে টিকিট বিক্রির দুর্নীতিতে বিদ্ধ হয়েছে সিএবি, বিসিসিআই এবং বুক মাই শো। আগেই লালবাজারের তরফে সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে তলব করেছিল কলকাতা পুলিশ। এবার বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনির কাছে তদন্তের সহযোগিতার বার্তা পাঠানো হল। টিকিটের কালোবাজারি ইস্যুতে প্রয়োজনীয় তথ্য, নথি চাওয়া হল বোর্ডের কাছে।
মঙ্গলবার ৭ নভেম্বরের মধ্যে ময়দান থানায় রজার বিনি অথবা তাঁর প্রতিনিধি স্থানীয় ব্যক্তিকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "ক্রিকেট বিশ্বকাপে টিকিটের কালোবাজারি তদন্তে বিসিসিআই প্রেসিডেন্টকে তলব করা হয়েছে।"
বিশ্বকাপে টিকিট বিক্রি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তবে বিশ্বকাপের কলকাতা পর্বে সেই অভিযোগ ক্ষোভের দাবানল জ্বালিয়ে দেয়। ময়দান থানায় বিসিসিআই এবং সিএবির নামে টিকিটের কালোবাজারিতে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছিল। পরে ময়দান থানার তরফে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়, ক্রিকেট উৎসাহী এক ব্যক্তির তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বুক মাই শো-য় টিকিটের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। বিসিসিআই এবং সিএবির কয়েকজন আধিকারিক এবং বুক মাই শো-র তরফে ইচ্ছাকৃতভাবে বহু টিকিট সরিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে বাজারে টিকিটের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে কালোবাজারি করা যায়।
অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু করেছে ময়দান থানার পুলিশ। তদন্তে সহযোগিতার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল সিএবি সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে। পুলিশের তরফে তলব করা হতেই সিএবি সভাপতি বলে দিয়েছেন, “কিছু করা সম্ভব নয়। সবাইকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। দু:খিত।”
টিকিট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম বুক মাই শো-কেও নোটিশ পাঠানো হয় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে। জানা গিয়েছে, শনিবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মের দুই অধিকারিক ময়দান থানাতেই এসেছিলেন। বুক মাই শো-য়ের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত তাঁরা ১৮ হাজার টিকিট বিক্রি করেছেন।
শুক্রবার কলকাতা পুলিশের তরফে স্কাইফেয়ার এবং স্কাই এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বেটিং চালানোর অভিযোগে ২৮ বছর বয়সী অভিষেক জয়সোয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। মাস্টার আইডি ব্যবহার করে গ্রাহকদের আলাদা আলাদা আইডি ব্যবহারের বন্দোবস্ত করে পুরো অপারেশন চালাচ্ছিলেন তিনি। তদন্তকারী আধিকারিকরা এক আইফোন-ও বাজেয়াপ্ত করেছেন। যার মাধ্যমে ক্রিকেট বেটিংয়ের স্ক্রিনশট নেওয়া হচ্ছিল।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, টিকিটের কালোবাজারি ইস্যুতে নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে পৃথক পৃথকভাবে ৭টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত ১৯জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০৮টি টিকিট বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ধৃত ব্যক্তিদের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কালোবাজারে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের টিকিট চারগুন এমনকি পাঁচগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয়েছে। আর গোটা ইস্যুতে যেভাবে সিএবির ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়েছে, তাতে বোর্ডের পুরো দায় ঠেলে দিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজের দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে দিয়েছিলেন, “এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সিএবির হাতে টিকিট বিক্রির কোনও দায়িত্বই নেই। ইডেন গার্ডেন্স থেকে একবার টিকিট বেরিয়ে গেলে সেই তথ্যও সিএবির কাছে থাকে না। কোথায় কোথায় চড়া দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে, সেটাও কেউ জানে না।”
"দোষীদের পুলিশ ধরতেই পারে। সিএবির এতে কোনও ভূমিকাই নেই। ইডেনের ধারণ ক্ষমতা ৬৭ হাজার দর্শক। আর টিকিটের চাহিদা এক লাখের বেশি। এটা সব জায়গায় ঘটে। টিকিটের এতটাই চাহিদা যে এটা সামলানো যায় না।এতে কারোর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ-ই একমাত্র এদের ধরতে পারে।”