গ্লেন ম্যাক্সওয়েল পা নাড়াতে পারছিলেন না। যন্ত্রণা হচ্ছিল এতটাই যে তিনি নিজের সামনের পায়ে ওজন কনভার্ট করতে পারেননি। পেছনের পায়ের অবস্থা ও ছিল সঙ্গীন। যখনই পায়ে চাপ পড়ছিল ক্র্যাম্পের আষ্টেপৃষ্টে ধরছিল। এবং তবু এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, বাইশ গজে তান্ডব চলল। বিপক্ষের ২৯১ রানের মধ্যে নিজে একাই করলেন ২০১ রান।
Advertisment
কীভাবে?
অনেক উপায়ে, ব্যাটসম্যান হওয়া নিয়ে ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে শিশুসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যদিও তাঁর বেশিরভাগ শট-ই পূর্বনির্ধারিত, তবুও শিশু-সুলভ সেই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ম্যাক্সওয়েল রিভার্স-ল্যাপগুলি টেনে ফেলছিল মাঠের অদ্ভুত সমস্ত প্রান্তে। ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং যেন গেমিং প্ল্যাটফর্মে বেড়ে ওঠার জমানার সার্থক প্রতিনিধি। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে, গেমিং ধাঁচের এই ব্যাটিংয়েই ম্যাক্সওয়েল তিনটে ফ্যাক্টরে বধ করলেন আফগানদের। যে ব্যাটিংয়ের ভিত্তি - ভারসাম্য, দৃষ্টিশক্তি, দ্রুত হাত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে, ভারসাম্য টাল খেলেও হ্যান্ড-আই কোঅর্ডিনেশন ম্যাচ বের করে নিলেন ম্যাড ম্যাক্স।
ম্যাক্সওয়েলের শারীরিক ভারসাম্যে যে ফ্যাক্টর কাজ করেছে, তা হল: হাঁটুর ফ্লেক্স যা তাঁকে তাঁর পা লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা ডেলিভারির সামনে ছান্দিক ভঙ্গিতে লাফিয়ে আসা বল ওজন স্থানান্তরে সাহায্য করে। এতে ফুটওয়ার্ক এবং সেই সম্পর্কিত নিতম্বের টার্ন পুরোটাই অপ্রয়োজনীয় করে তোলে। এতে ব্যাটে বলের সংযোগ আরও জোরদার হয়।
ম্যাক্সওয়েলের তান্ডব ঘটানো ইনিংসের পরেই পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা কাঁটাছেঁড়া করলেন ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোমাঞ্চকর ইনিংসকে। পাক-প্রাক্তনীদের বক্তব্য, শৈশবে ম্যাক্সওয়েল টেনিস, গলফ সহ একাধিক খেলা খেলতেন। শোয়েব মালিকের বিশ্লেষণ, "পাওয়ার হিটিং মোটেই পায়ের নড়াচড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পুরোটাই হাতের সম্প্রসারণের ওপর নির্ভরশীল। নিজের বেস (পায়ের ভারসাম্য) ঠিক রেখে হাতের সম্প্রসারণ ঘটানো। যেমনটা হয়ে থাকে বেস-বল, টেনিসের ক্ষেত্রে। নিজের ফুটওয়ার্ক ঠিকঠাক হবে না বুঝতে পেরেই অগ্রিম নিজের বেস ঠিক করে ফেলছিলেন ম্যাক্সওয়েল।
সাধারণত বলের লাইন, লেন্থ বুঝে ব্যাটসম্যানরা ডেলিভারির পর নির্ধারণ করেন ফ্রন্টফুটে নাকি ব্যাকফুটে শট খেলবেন। তবে ম্যাক্সওয়েল নিউট্রাল বেস করে ফেলেছিলেন ডেলিভারির আগেই। এতে দুই পায়ের ওজন সমানভাবে থাকে। আর হাতের সম্প্রসারণ বলের সঙ্গে সংযোগ হলেই কেল্লাফতে। শোয়েব জানিয়েছেন, এই কারণেই রোগা-পাতলা চেহারার অনেক ব্যাটার লম্বা লম্বা ছক্কা হাঁকাতে পারেন। ম্যাক্সওয়েলের মতই দুর্বল ফুটওয়ার্ক নিয়েই হার্দিক পান্ডিয়া এই কারণে লম্বা লম্বা ছক্কা হাঁকিয়ে যান আইপিএল হোক না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।